ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও পরিস্থিতি থমথমে লেকটাউন থানা এলাকার হরিজন কলোনিতে। তবে এক দিন পেরোলেও নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। ঘটনায় জড়িত রাজেশ, গেদু ও তার দলবলের কয়েক জন পাণ্ডার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল সাতটা নাগাদ হরিজন কলোনিতে সংঘর্ষ হয় কুখ্যাত দুষ্কৃতী রাজেশ ও গেদুর দলের মধ্যে। ঘটনায় মৃত্যু হয় গেদুর সঙ্গী টুনা হাতি ওরফে ডাইনসের। আহত হয় রাজেশের দলের কয়েক জন। বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই রাজেশের বোন রাখী ও আত্মীয় বাবু নায়েককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ধৃতদের জেরা করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য মিলেছে।
পুলিশের দাবি, তোলা আদায় ও নিজেদের এলাকার দখল নিয়েই এই সংঘর্ষ। পুলিশ জেনেছে, পুজোর আগে জেল থেকে বেরিয়ে গেদু জানতে পারে তার এলাকায় ক্রমশ দখলদারি বাড়াচ্ছে রাজেশের দল। সমঝোতা করে ঠিক হয়, লেকটাউন-দমদম পার্ক এলাকায় রাজেশ ও শ্যামনগর-দমদম পার্কের একটি অংশ, বাগুইআটি জুড়ে কাজ করবে গেদুর দলবল। কিন্তু সমঝোতা ভেঙে রাজেশের দল গেদুর এলাকায় কাজ করছিল। সম্প্রতি শ্যামনগরের এক প্রোমোটারের থেকে তিন কোটি টাকা তোলা চায় পুলিশের খাতায় পলাতক রাজেশ। তা জানতে পেরে রাজেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে গেদু। কিছু দিন চুপ থাকার পরে গত সপ্তাহে ফের ওই প্রোমোটারকে হুমকি দেয় রাজেশ। তার পরেই এই সংঘর্ষ।
তদন্তকারীদের অনুমান, ওড়িশায় কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে রাজেশ। তার হয়ে রাখী ও বাবু নায়েকই তার সাম্রাজ্য রক্ষা করছিল। তাই গেদুর দলবল রাখী ও তার দলকে সতর্ক করতে এসেছিল বলে অনুমান পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, গেদুর দলবলের আসার খবর আগাম পেয়ে বোমা, বন্দুক নিয়ে প্রস্তুতই ছিল রাখী ও দলবল।
রাখীর অভিযোগ, গেদুর দলের গুলিতেই ডাইনসের মৃত্যু হয়। কিন্তু তদন্তকারীদের অনুমান, এলোপাথাড়ি গুলিতে নয়, রীতিমত পরিকল্পনামাফিক ভাবেই গুলি করা হয় ডাইনসকে। এলোপাথাড়ি গুলি চললে রাজেশের দলের লোকও গুলিবিদ্ধ হতে পারত। পুলিশের অনুমান, রাজেশেরই দলই প্রথমে গুলি চালায়। তবে সংঘর্ষের সময়ে গেদুও কাছাকাছি ছিল বলে তাদের ধারণা।
দমদম এলাকায় প্রোমোটিং ও জমি দখল নিয়ে লড়াই দীর্ঘদিনের। চলতি বছরেই জগা, বড় ও ছোট পকাই-সহ একাধিক দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়। ফলে বেশ কিছুদিন গোলমাল বন্ধ থাকলেও রাজেশ ও গেদুর দলের সংঘর্ষে ফের অশান্তির মেঘ দেখছেন বাসিন্দারা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। বিধাননগরের এডিসিপি অজয় প্রসাদ বলেন, “গেদু ও রাজেশ-সহ কয়েক জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ফের এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে দিকে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।”
|