পাড়ার পানাপুকুরে নেমে এক মহিলাকে দা দিয়ে কোপাচ্ছে এক যুবক। হঠাৎ গুলির শব্দ। যে যুবক মহিলাকে কোপাচ্ছিল, তার পিঠেই লাগল গুলি। পুকুরের জলে পড়ল সে। রক্তাক্ত অবস্থায় পুকুরে লুটিয়ে পড়লেন মহিলাও।
শুক্রবার সকালে এমনই ঘটল লেকটাউন থানার দমদম পার্ক লাগোয়া হরিজন কলোনিতে। এই ঘটনায় ফের মাথাচাড়া দিল দমদম অঞ্চলের দুই দুষ্কৃতী রাজেশ নায়েক ও গেদু ওরফে গৌতম বড়ালের এলাকা দখলের লড়াই। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি অজয় প্রসাদ বলেন, “জানা গিয়েছে, স্থানীয় দুই দুষ্কৃতী গেদু ও রাজেশ নায়েকের দলবল এই ঘটনায় যুক্ত। রাখী নায়েক ও বাবু নায়েক নামে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে।”
এক পুলিশকর্তা জানান, এ দিন গেদুর দল রাজেশের লোকেদের উপরে হামলা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে গেদুর দলের টুনা হাতি ওরফে ডাইনস। ধৃত রাখীকেই এ দিন দা দিয়ে কোপাচ্ছিল সে। রাখী রাজেশের বোন। ধৃত বাবুও তাদের আত্মীয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল রাখী ও বাবু। হঠাৎ মুখে গামছা বাঁধা পাঁচ যুবক এলাকায় ঢোকে। অভিযোগ, রাখীর ঘাড়ে ও কাঁধে দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে তাদেরই এক জন। বাবু বাধা দিতে গেলে দুষ্কৃতীরা তার দিকে গুলি চালায়। গুলি লাগে বাবুর পায়ে। রাখী ঝাঁপ দেয় সামনের পানাপুকুরে। ডাইনস সেখানেও নেমে কোপায় রাখীকে। তখনই কয়েকটি গুলি লাগে তার পিঠে ও বুকে।
সাতসকালে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। পরে রাখী ও বাবুকে রক্তাক্ত অবস্থায় আরজিকরে নিয়ে যান স্থানীয়েরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় রাখীকে। বেশ কিছুক্ষণ পরে পুকুর থেকে ডাইনসের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাখী বলে, “যারা আমাকে মারতে এসেছিল, তারা সকলেই গেদুর লোক।” কিন্তু কেন তাকে মারতে এল ওরা? রাখীর জবাব, “আমার দাদা রাজেশ এখন আর গেদুদের মতো তোলাবাজি করে না। কেন সে হঠাৎ ভাল হয়ে গেল, সেই আক্রোশেই ওরা আমায় কোপাচ্ছিল। ওই দুষ্কৃতীরা আমাকে লক্ষ করেই গুলি ছোড়ে। কিন্তু গুলিটা লাগে ওদের দলেরই ডাইনসের বুকে।”
রাখী এই কথা বললেও পুলিশের তদন্তে অন্য কথা উঠে আসছে। পুলিশ জেনেছে, ডাইনসকে গুলি করেছে রাজেশের দলবলই। আর সে অভিযোগেই রাখী ও বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীরা জানান, কয়েক মাস আগে গেদু জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। রাজেশ বহু দিন ধরে ওড়িশায় রয়েছে। সেখানে বসেই আত্মীয়দের মাধ্যমে এলাকা চালায় রাজেশ। পুলিশের অনুমান, জেল থেকে বেরিয়ে ফের এলাকা দখলের জন্যই রাজেশের লোকেদের উপরে হামলা করে গেদু। পুলিশ জানায়, প্রোমোটিং ও জমি দখলকে কেন্দ্র করে দমদমে দুষ্কৃতীদের মধ্যে এলাকা দখল নিয়ে লড়াই নতুন নয়। চলতি বছরেই দমদমের শ্যামনগরে রাজেশ ও স্থানীয় দুষ্কৃতী ফুপার দলের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। খুন হয় ফুপা। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই এমন ঘটায় নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন স্থানীয়েরা। যদিও পুলিশের দাবি, গত কয়েক মাসে দুষ্কৃতীদের সাঙ্গপাঙ্গরা অনেকেই ধরা পড়েছে। তাণ্ডবও কিছুটা কমেছে। খোঁজ চলছে রাজেশ ও গেদুর। |