গাড়ির তেলে দেদার কারচুপি
পুরসভায়, ধরল অডিট
গাড়ির নম্বর ডব্লিউ বি ০২-৬৪০২। ডিজেলে চলে। অথচ সেই গাড়ির জন্য পেট্রোলের স্লিপ বরাদ্দ হয়েছে। পুরসভার খাতাকলমেও নথিভুক্ত রয়েছে ডিজেল গাড়িতে পেট্রোল দেওয়ার এই ঘটনা।
গাড়ির নম্বর ডব্লিউ বি ০৬-৭৭০২। গত বছর পয়লা সেপ্টেম্বর ওই গাড়ি কলকাতা পুরসভার সেন্ট্রাল গ্যারাজ থেকে ৩৬ লিটার ডিজেল তুলেছে। অথচ গাড়িটি কার, সে তথ্য নেই পুরসভায়। জানা যায়নি ওই দিনই ডব্লিউএমই ৬৯৪৩ গাড়িটি পুরসভার গ্যারাজ থেকে ৪২ লিটার পেট্রোল তুলে কার কাজে লেগেছিল। সম্প্রতি পুরসভার গাড়িতে তেলের ব্যবহার নিয়ে অডিট করতে গিয়ে মিলেছে এমনই সব তথ্য। পুর প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “দীর্ঘকাল ধরে পুরসভায় গাড়ির তেল নিয়ে কোনও অডিট হয়নি। এ বার তা করতে গিয়েই নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।”
অডিটে আরও এক অস্বাভাবিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তা হল, সেন্ট্রাল গ্যারাজের ট্যাঙ্কের তেলধারণ ক্ষমতা ডিজেল ও পেট্রোল দুইয়ের ক্ষেত্রেই ১৫ হাজার লিটার। অথচ এ বছর ৩১ মার্চে খাতায়কলমে রয়েছে দিনের শেষে ডিজেল ট্যাঙ্কে ১৬৯১০ এবং পেট্রোল ট্যাঙ্কে ২৪৭০০ লিটার অবশিষ্ট রয়েছে। তেলধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি তেল থাকল কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টে।
অডিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে শুধু ২০১২-র সেপ্টেম্বরেই প্রায় সাড়ে ৫৩ লক্ষ টাকার তেল পুরসভার গ্যারাজ থেকে বেরিয়েছে, যা পুরসভার কোনও কাজে ব্যবহৃত হয়নি। এ প্রসঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রিপোর্ট এখনও পাইনি। না দেখে কিছু বলা যাবে না।” যদিও পুর সূত্রের খবর, তেলের ওই কারচুপির ঘটনা বাম আমল থেকেই চলছে। তৃণমূল পরিচালিত পুর-প্রশাসনই তেলের কারচুপি ধরার জন্য অডিট করাতে উদ্যোগী হয়। কেন এমন হয়েছে, তা জানতে এ বার তদন্তও করাতে চান পুরকর্তারা।
পুরসভা সূত্রের খবর, নিজস্ব এবং ভাড়া করা-সহ পুরসভায় ছোট ও বড় গাড়ির সংখ্যা হাজারখানেক। ওই সব গাড়িতে তেল সরবরাহ করার দায়িত্বে রয়েছে পুরসভার সেন্ট্রাল স্টোর্স বিভাগ। মৌলালিতে সেন্ট্রাল গ্যারাজ ছাড়াও উত্তর কলকাতার গ্রে স্ট্রিট, বৈঠকখানা রোড, ধাপা রোড, পামারবাজার এবং গোরাগাছায় পুরসভার নিজস্ব আরও পাঁচটি ট্যাঙ্ক রয়েছে। অফিসারদের গাড়ির জন্য দৈনিক হিসেবে তেল দেওয়া হয়। ডিজেল দৈনিক পাঁচ লিটার এবং পেট্রোল ৬ লিটার। কেউ আবার এক সঙ্গে ৫-৬ দিনের তেলও নিতে পারেন। আর পুরসভার নিজস্ব যে সব বড় গাড়ি রাস্তার কাজ, জঞ্জাল ফেলা বা পুরসভার অন্য কাজে ব্যবহৃত হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে স্লিপ পাঠানো হয়। তার ভিত্তিতেই তেল দেন ট্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
আর কী কী রয়েছে ওই অডিট রিপোর্টে?
অডিট অনুযায়ী, শহরে পুরসভার সবক’টি ট্যাঙ্কেই ডিজেলের হিসেবে গরমিল পাওয়া গিয়েছে। খাতা-কলমের হিসেবের সঙ্গে কোথাও বাড়তি, কোথাও বা ঘাটতি পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া পুরসভার বিভিন্ন দফতর থেকে তেলের যে স্লিপ (আউটওয়ার্ড রিসিপ্ট বা ওআর) মিলেছে তার কোনওটাতে ক্রমিক নম্বরের সঙ্গে তারিখ মিলছে না। কোনও গাড়িতে আবার দৈনিক বরাদ্দের চেয়ে বেশি তেল নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার সরকারি শিলমোহর ছাড়াই স্লিপ বা ওআর ইস্যু করা হয়েছে, যা ঠিক নয়। অথচ সেই স্লিপ দেখেই তেল সরবরাহ করেছেন ট্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
পুরসভার এক অফিসার জানান, ওই অডিট করার আগে পুরসভার সব দফতরকে চিঠি দিয়ে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যে সব গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে তার তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছিল। পুরসভার ২৯টি দফতরের মধ্যে ৬টি দফতর তা দিতে পারেনি। লগবুক জমা দিতে পারেনি ৭টি দফতর। আর স্লিপের (ওআর) কপি দিতে পারেনি ৭টি দফতর। পুরসভার এক কর্তা জানান, শুধুমাত্র অফিসারদের ব্যবহৃত গাড়ির ভাড়া ও তেলের জন্য বছরে ১৪ কোটির টাকার মতো খরচ হয়। অফিসারদের জন্য প্রায় শ’পাঁচেক গাড়ি ভাড়া খাটে। আর পুরসভার বড় গাড়ির তেলের খরচ ধরলে খরচের বহর প্রায় ২০ কোটিরও বেশি বলে জানান ওই কর্তা। এখনই ওই খরচে লাগাম না ধরলে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হবে, তা বুঝেছে পুরসভা। আপাতত তেলে গরমিলের বিষয়টা প্রকাশ্যে এনে তাই সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সতর্ক করতে চান পুরকর্তারা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.