শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় ধৃত সম্পত্তির কারবারি পিনাকেশ দত্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং লকার সিল করার নির্দেশ দিল আদালত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাঙ্কশাল আদালতের বাইরে থেকে গ্রেফতার করা হয় পিনাকেশকে। পুলিশ সূত্রের খবর, দফায় দফায় জেরা করে জানা গিয়েছে, পিনাকেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং লকারে বিপুল পরিমাণ টাকা রয়েছে। সেই টাকার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই অ্যাকাউন্ট-লকার সিল করার আবেদন জানানো হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। পিনাকেশকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের দাবি, শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় ধৃত আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করার সময়ই পিনাকেশের নাম উঠে আসে। পুলিশ জেনেছে, হার্টলাইন সংস্থার এই কর্তাকেই ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমি খালি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন পরাগ মজমুদার। আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং নিরাপত্তা সংস্থার কর্ণধার অরূপ দেবনাথের সঙ্গে মিলে দখল অভিযানের গোটা পরিকল্পনা করেছিলেন পিনাকেশ-ই।
বুধবার পরাগ গ্রেফতার হন, পরের দিন পিনাকেশ। পুলিশ সূত্রের দাবি, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বাঘাযতীন শাখায় পিনাকেশের অ্যাকাউন্টে সাড়ে তিন লক্ষ এবং লকারে এক কোটির কাছাকাছি টাকা রয়েছে বলে তিনি কবুল করেছেন। ওই টাকা কোথা থেকে এল? পিনাকেশ সে কথা এখনও স্বীকার না করলেও পুলিশের দৃঢ় ধারণা, শর্ট স্ট্রিটের জমি খালি করার জন্য ওই টাকা পিনাকেশকে দিয়েছিলেন পরাগ। ঘটনার তিন দিন আগেই পিনাকেশের অ্যাকাউন্টে লাখ চারেক টাকা জমা পড়েছিল।
এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে টাকার কথা জানিয়ে সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস বলেন, তদন্তের স্বার্থে ওই অ্যাকাউন্ট এবং লকার পরীক্ষা করা দরকার। অভিযুক্তের আইনজীবী সন্দীপ ঘোষ সব অভিযোগ অস্বীকার করে পিনাকেশের জামিনের জন্য আর্জি জানান। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরেই পিনাকেশের লকার ‘সিল’ করার জন্য বাঘাযতীনের ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে নির্দেশ দেয় আদালত।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই টাকার রহস্য সমাধানে এ বার পিনাকেশকে ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। খতিয়ে দেখা হবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য (স্টেটমেন্ট)। কোন অ্যাকাউন্ট থেকে পিনাকেশের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ল তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। পরাগেরও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পরীক্ষা করবেন গোয়েন্দারা। টাকার উৎস খুঁজতে পিনাকেশ, পার্থ ও পরাগকে এক সঙ্গে বসিয়ে জেরা করা হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাউন্সার দিয়ে শুধু জমি দখল নয়, ওই জমিতে বাউন্সারদের বসিয়ে রীতিমতো ঘাঁটি গাড়ারও পরিকল্পনা ছিল পিনাকেশদের। ভাড়া করা বাউন্সারদের বলা হয়েছিল, সোমবার ভোরে শর্ট স্ট্রিটের ওই বাড়ি দখল নিতে হবে। তার পর দিন দু’য়েক ওই বাড়িতেই ঘাঁটি গেড়ে থাকতে হবে বাউন্সারদের। তাঁদের সঙ্গে চার জন নিরাপত্তারক্ষীও রাখা হবে। এক
পুলিশ কর্তা জানান, ঘাঁটি গেড়ে থাকার জন্য প্রতি বাউন্সারকে দিনে খাওয়া-দাওয়া বাদে হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল।
পিনাকেশের বাড়ি বাঘাযতীনের চিত্তরঞ্জন কলোনিতে। পাড়ার বাসিন্দারা পিনাকেশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে অবাকই হয়েছেন। এক বাসিন্দা বলেন, “খুবই মিশুকে ছেলে। তবে চাকরি করত না ব্যবসা, সে বিষয়ে কিছু জানতাম না। পাড়ার কেউ বিপদে পড়লে টাকা দিয়ে সাহায্য করত।” এ দিন পিনাকেশের বাড়িতে কলিং বেল বাজানোর বেশ কিছু ক্ষণ পরে এক বয়স্ক ব্যক্তি দোতলার বারান্দা থেকে মুখ বের করলেন। নাম বললেন, প্রণবেশ দত্ত। পিনাকেশের কথা জিজ্ঞাসা করতেই উল্টো দিকের একটি দরজা দেখিয়ে দিলেন তিনি। সেই দরজায় বেল বাজাতেই এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “আমি বাড়িতে একা রয়েছি। আমার সঙ্গে ছোট বাচ্চা রয়েছে। প্লিজ, ক্ষমা করবেন।” পাড়ার বাসিন্দারা জানালেন, ওই মহিলা পিনাকেশের স্ত্রী। |