শর্ট স্ট্রিট-তদন্তকারী এসআই’কে সরিয়ে দিল লালবাজার
ল্পনা ছিল গোড়া থেকেই। তার যে ভিত্তিও আছে, সেটা এ বার এক রকম স্বীকারই করে নিল লালবাজার।
৯এ শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি দখল করতে আসা বহিরাগত হামলাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় শেক্সপিয়র সরণি থানার একাংশের যোগসাজসের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ‘প্রথম ব্যবস্থা’ হিসেবে এক সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই)-কে থানাটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। লালবাজার সূত্রের খবর, নুর আলি নামের ওই এসআই কলকাতা পুলিশের সাউথ ডিভিশনের রিজার্ভ অফিসে যাচ্ছেন। আপাতত তাঁকে কোনও কাজ দেওয়া হবে না। অর্থাৎ পুলিশি পরিভাষায় তাঁকে ‘ক্লোজ করা’ হল।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র শুক্রবার জানান, এ দিন সকালেই নুরের নতুন পোস্টিং হয়েছে। পাশাপাশি, শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডে আরও কিছু পুলিশ অফিসারের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে বলে লালবাজারের ইঙ্গিত।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১১ নভেম্বর) ভোররাতে মধ্য কলকাতায় শেক্সপিয়র সরণি থানা-এলাকার ৯এ শর্ট স্ট্রিটে ১৭ কাঠা জমি সমেত একটি বাড়ির দখল নিতে হামলা চালানো হয়। বাড়ির ভিতর থেকে গুলি চলে, তাতে প্রাণ যায় দুই বহিরাগতের, আহত হন একাধিক। ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে একাধিক পুরুষ-মহিলা বাউন্সার, আইনজীবী, জমি-কারবারি-সহ দখলদার বাহিনীর লোকজন যেমন আছেন, তেমন রয়েছেন ঘটনার সময় ওই বাড়িতে থাকা এক মহিলাও। মমতা অগ্রবাল নামে সেই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সঙ্গীদের নিয়েই তিনিই গুলি চালিয়েছিলেন।
এবং খাস মহানগরের কেন্দ্রস্থলে জমি ঘিরে এ হেন প্রাণঘাতী লড়াইয়ের পিছনে পুলিশের একাংশের যোগসাজশের ছায়াও দেখা যাচ্ছে। যার ভিত্তিতে নুর আলির অপসারণ। পুলিশ-সূত্রের তথ্য: ১৯৯৬ ব্যাচের এসআই নুর ছিলেন শেক্সপিয়র সরণি থানার ‘ছোটবাবু’। পদমর্যাদায় ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি-র ঠিক পরে। শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় দু’টি মামলা রুজু হয়েছে বেআইনি অনুপ্রবেশের (৩৯৭ নম্বর মামলা) এবং খুনের (৩৯৮ নম্বর মামলা)। দ্বিতীয়টির তদন্তকারী অফিসার ছিলেন নুর আলি। পরে অবশ্য দু’টিরই তদন্তভার গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার হাতে গিয়েছে। থানার উপরে ভরসা না-থাকতেই তড়িঘড়ি গোয়েন্দা বিভাগকে আনা হয়েছে বলে লালবাজারের খবর।
মামলা তো দু’টো! তা হলে শুধু নুরকে সরানো হল কেন?
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, “আমরা মনে করছি, ১১ নভেম্বর ভোরে এক দল বহিরাগত যে ৯এ শর্ট স্ট্রিটে জমির দখল নিতে যাবে, সেটা থানার কেউ কেউ জানতেন। তবু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হলে প্রাণহানি ঘটত না। এ প্রসঙ্গেই নুর আলির নাম উঠে আসছে।” পুলিশ-সূত্রের খবর: অনুপ্রবেশ-মামলায় ধৃত জমি-কারবারি পরাগ মজমুদার ও পিনাকেশ দত্তকে জেরা করেই নুরের ‘সন্দেহজনক ভূমিকা’র কথা
জানা গিয়েছে।
বস্তুত ২ নম্বর লাউডন স্ট্রিটে খোদ পুলিশ কমিশনারের বাংলো ও ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন)-সহ পদস্থ পুলিশ-কর্তাদের আবাসনের গা ঘেঁষা জমিটি কব্জা করতে ‘অভিযান’ চালানোর মতো সাহস ও স্পর্ধা হামলাকারীরা কোথা থেকে পেল, লালবাজার তা ভেবে উদ্বিগ্ন। কর্তাদের অনেকের বিশ্বাস, থানার একাংশের মদত ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। যার সম্ভাব্য যুক্তি হিসেবে কিছু তথ্যও পেশ করা হচ্ছে। কী রকম?
যেমন টহলদারির ফাঁক। পুলিশের বড়কর্তাদের আবাসনের অবস্থান ও বিতর্কিত জমিতে আগেও হানাদারির চেষ্টা দু’টোই মাথায় রেখে প্রতি রাতে শর্ট স্ট্রিট-উড স্ট্রিট-লাউডন স্ট্রিটে একটি মোটর সাইকেলে পুলিশি টহলদারি চলার কথা। তদন্ত বলছে, রবিবার রাত আড়াইটের পরে মোটর সাইকেলটি ঘটনাস্থলের একেবারে অন্য প্রান্তে ছিল। প্রশ্ন উঠছে, সেটা ইচ্ছাকৃত কি না। “রবিবার রাতে এমনিতেই টহলদারি একটু ঢিলে থাকে। হানাদারেরা তা জানত। তার উপরে মোটর সাইকেল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনেক দূরে।” বলছেন এক অফিসার। তাঁর দাবি, “হামলাকারীরা তিনটে গাড়ি চড়ে এসেছিল। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পাঁচিল টপকে ও দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিল মোট ২১ জন। এতে অন্তত ১৫ মিনিট লেগেছে। হামলার ঠিক আগে টহলদার মোটরবাইক ওখান দিয়ে ঘুরে গিয়েছিল ধরে নিলেও ১০-১২ মিনিটের মধ্যে তার ফের শর্ট স্ট্রিটে চলে আসার কথা। তা হয়নি।”
আর এখানেই থানার একাংশের ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখছে লালবাজার। তদন্তকারীদের এ-ও দাবি: চক্রীরা প্রথমে ঠিক করেছিল, ৯ তারিখ ভোরে চড়াও হবে। সে দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ২০ জন বহিরাগতের দল ওখানে পৌঁছেও যায়। কিন্তু আশপাশে পুলিশ দেখে তারা পিছু হটে। আর তার পরেই থানার ‘সূত্রে’ খবর নেয়, কখন অভিযান হলে পুলিশ থাকবে না। লালবাজারের ইঙ্গিত, গত অগস্টে শেক্সপিয়র সরণি থানায় যোগ দেওয়া ইস্তক নুর আলি ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমি-জট সংক্রান্ত মামলার দেখাশোনা করছিলেন, যার সুবাদে চক্রীদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। নুর আলির কী বক্তব্য?
তিনি উল্টে আঙুল তুলছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপরে। এ দিন নুর বলেন, “আমি সামান্য এসআই। যা করেছি, ওসি-র নির্দেশে। ওসি সব জানতেন। শুধু আমিই বলির পাঁঠা হলাম!” শেক্সপিয়র সরণি থানার ওসি পীযূষ কুণ্ডুর দাবি, “আমি থানার কোনও অফিসারকে বলিনি বেআইনি কিছু করতে। জানি না, নুর ফেঁসে গিয়ে আমার ঘাড়ে সব দায় চাপাচ্ছেন।”
তবে পুলিশ-সূত্রের খবর, ওসি তো বটেই, পরাগ-পিনাকেশকে জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাউথ ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (১) তাপস বসুর ভূমিকাও যাচাই করা হচ্ছে। যা শুনে তাপসবাবুর মন্তব্য, “যে যা খুশি বলতেই পারে। থানার এ সব ব্যাপার নিয়ে এসি-র কিছুই জানার কথা নয়। বিভাগীয় তদন্ত হোক। সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।” অন্য দিকে যুগ্ম কমিশনার (সদর) বলেছেন, “সবে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলাম। তদন্তে আরও যে সব নাম উঠে আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” লালবাজারের খবর, ওসি এবং এসি-র ভূমিকা সম্পর্কে ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মার কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
পুলিশের নিচুতলা অবশ্য শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ড ঘিরে লালবাজারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, মমতা অগ্রবাল হামলার আশঙ্কায় কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ মহলে চিঠি দিয়েছিলেন। রাজ্যপালকেও তিনি চিঠি লিখেছিলেন, যা রাজ্যপাল পাঠিয়ে দেন স্বরাষ্ট্র দফতরে। দফতরের এক যুগ্ম সচিব উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে ফাইল পাঠান। তবু মমতার নিরাপত্তার ব্যবস্থা না হওয়ার দায় লালবাজার কোনও মতেই এড়িয়ে যেতে পারেন না বলে নিচুতলার কিছু অফিসার এ দিন প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
এ নিয়েও কর্তারা ঘোরতর বিব্রত।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.