কলকাতার রাস্তা দিয়ে ছুটছেন ক্রিস গেইল। পিছনে তাঁর বাউন্সাররা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমনই অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন শহরের পথচলতি মানুষ।
ঘটনাটা কী?
এ দিন ইডেনে প্র্যাকটিস সেরে সন্ধ্যায় ক্যামাক স্ট্রিটের এক ঘড়ির শোরুমে বাণিজ্যিক প্রচারে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ব্যাটসম্যান। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে যাওয়া সংবাদমাধ্যমের বেশিরভাগ আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের শোরুমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর পরে গেইলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাউন্সারদের সঙ্গে ঝামেলা লেগে যায় সাংবাদিকদের। বাউন্সাররা আগে সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। এক মহিলা ও এক বর্ষীয়ান সংবাদপ্রতিনিধি গুরুতর আহত হন বলে জানা গিয়েছে। |
শোরুম তখন আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড়ে ঠাসা। সেখানে ঢুকে প্রায় দমবন্ধ অবস্থা গেইলের। মিনিট পাঁচেক থাকার পর নিজেই রীতিমতো ঠেলাঠেলি করে বাইরে বেরিয়ে আসেন গেইল। বাইরে তখন এক ঝাঁক সংবাদপ্রতিনিধি ও জনতার ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে দিয়েই দৌড়তে শুরু করে দেন ক্যারিবিয়ান তারকা। পিছন তাঁর বাউন্সাররা। প্রায় ৬০-৭০ মিটার দৌড়নোর পর গাড়িতে উঠে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন গেইল। সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি গেইলকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। উত্তেজিত সাংবাদিকরা এর পর শেক্সপিয়ার সরণি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসেন।
সোমবার বিকেলে ইডেনের ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসন বলছিলেন, সচিন-উৎসবে সামিল হতে পেরে কতটা গর্বিত তাঁরা। তারই মাঝে এই কাণ্ড ঘটল সচিন-উৎসবে মাতোয়ারা শহরের বুকে। যে উৎসবে সামিল হতে আর টেস্ট দেখতে আসছেন বনি কপূর-শ্রীদেবীও। তাঁরা সম্ভবত টেস্টের দ্বিতীয়ার্ধে আসছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্য ক্রিকেটাররা এ দিন খোশ মেজাজে থাকলেও ক্রিস গেইল বিতর্কের অংশ হয়েই থাকলেন। যদিও সেটা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই। ইডেনে এসে নিজে সাংবাদিক বৈঠক করতে চেয়েও না পারার ক্ষোভ তো ছিলই। তার আগে ইডেনের বাইশ গজ পরীক্ষা করতে নেমে নিজের অজান্তেই আর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
যখন ইডেন টেস্টের পিচ পরীক্ষা করছিলেন গেইল, তখন তিনি জানতেন না যে পিচের স্কোয়ারে ঢুকে পড়া নিয়ে রোহিত শর্মা ও কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে এক দফা অশান্তি হয়ে গিয়েছে। কিউরেটরের বক্তব্য, “ক্যাপ্টেন ও কোচ ছাড়া কারও পিচ দেখার অধিকার নেই। আমি রোহিতকে সেটাই বলতে গিয়েছিলাম।” তার আগেই ভারতীয় কোচ ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে এক চোট হয়ে গিয়েছে প্রবীরবাবুর। ফ্লেচার তাঁর বোলারদের প্র্যাকটিসের জন্য মূল উইকেটের পাশের বাইশ গজটি চেয়েছিলেন, যা দিতেও নারাজ ছিলেন প্রবীরবাবু। এই ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, “ম্যাচের আগের দিন তা করা যায়। দু’দিন আগে নয়। আমি আইসিসি-র নিয়ম মেনেই যা করার করেছি।” |
এই নিয়ে আবার প্রবীরবাবুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায় সিএবি-র অন্যতম যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের। শেষ পর্যন্ত ফ্লেচারদের প্র্যাকটিস করার অনুমতি মেলে। এর পর প্রবীরবাবু ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে পিচ দেখতে গিয়েছিলেন গেইল। গেইল অধিনায়ক নন, তা হলে তিনি কী ভাবে বাইশ গজে ঢুকে পড়লেন? কেন পিচ পাহারার ব্যবস্থা ছিল না? রাত পর্যন্ত প্রবীরবাবুকে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সিএবি-র প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।
দুপুরে ইডেনে প্র্যাকটিস করতে নামার আগে সাংবাদিকদের সামনে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন গেইল। কিন্তু ইডেনের মিডিয়া কনফারেন্স হলে তখন শহরের পুলিশ কর্তারা বৈঠকে বসেছেন। সেই বৈঠক শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। ফলে প্র্যাকটিসের পরও সাংবাদিকদের সামনে আসার সুযোগ হয়নি গেইলের। এর পর ক্ষুব্ধ গেইল মাঠ ছেড়ে চলে যান। দলের ফিল্ডিং প্র্যাকটিসেও যোগ দেননি। পরে সুবীরবাবু বলেন, “এ দিন আমরা গেইলকে বিকেল সাড়ে চারটের পর প্রেস কনফারেন্স করতে অনুরোধ করেছিলাম। ও যদি তা না করতে পারে, তা হলে আমাদের কী করার আছে?”
সব মিলিয়ে সচিন উৎসবের মাঝেই হঠাৎ করে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে পড়ল গেইলের ‘বাউন্সারে’।
|