প্রায় ১৬ বছরের কেরিয়ারে দু’দুটো বিশ্বরেকর্ড রয়েছে তাঁর সঙ্গে জুটিতে। রয়েছে ৬,৯২০ রান আর কুড়িটা সেঞ্চুরি। দুটোর ক্ষেত্রেই সঙ্গীর নাম সচিন তেন্ডুলকর। সচিন আবেগে যখন গোটা দেশ প্রায় আবেগরুদ্ধ, রাহুল দ্রাবিড় চুপ করে থাকেন সেটা কী হয়! তাই মহানায়কের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সপ্তাহ দুই আগে প্রাক্তন সতীর্থকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বলে দিলেন, বিনোদনের দিক থেকে তাঁর পছন্দ ব্রায়ান চার্লস লারার ব্যাটিং। কিন্তু জীবন বাজি রাখতে হলে প্রিয় সচিন তেন্ডুলকরকেই বাছবেন।
ইডেন টেস্টে নামার দিন দুয়েক আগে সচিন জ্বরে যখন গোটা শহর কাঁপছে একটি টিভি চ্যানেলে দ্রাবিড় বলেন, “সচিনের ব্যাটিং দেখাটা স্পেশাল। যে ভাবে ও বোলারদের নিজের সুবিধে মতো বল করতে বাধ্য করে, খুশিমতো ফিল্ডিংকে ব্যবহার করে, উল্টো প্রান্ত থেকে দেখাটা দারুণ অনুভূতি। বোঝা যায় এই দাপটের পিছনে কতটা পরিশ্রম রয়েছে। অন্যদের যেটা প্রচুর কষ্ট করে করতে হয়, সচিন সেটা সহজেই করে ফেলে।”
বয়সের দিক থেকে প্রায় সমবয়সি হলেও ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর থেকে সাত বছরের সিনিয়র সচিন কি মুগ্ধ করে দিত? দ্রাবিড় বলেন, “সচিন আমাদের কাছে বরাবরই অনুপ্রেরণা। গাওস্কর, বিশ্বনাথরা তো ছিলেনই। কিন্তু ১৭ বছর বয়েসে কর্নাটকের রঞ্জি দলে সুযোগের জন্য লড়ছি আর আমাদের প্রজন্মেরই একটা ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় খেলছে এটা বিরাট অনুপ্রেরণা ছিল।” সিএনএন-আইবিএনে সাক্ষাৎকারে দ্রাবিড় আরও বলেন, “আসলে সচিন আমাদের সামনে তখন একটা লক্ষ্য খাঁড়া করে দিয়েছিল। তার সঙ্গে অনেকটা চাপও নিয়ে নিত। প্রচারের আলোটা ওর দিকে থাকত। সচিনের অ্যাচিভমেন্টগুলোই আমাদের উদ্বুদ্ধ করত। শুধু আমিই না, আমাদের দলটার কাছে। আমি, সৌরভ, লক্ষ্মণ, পরে সহবাগ। ভাগ্যক্রমে সেই ব্যাটিং মানটার সঙ্গে তাল মেলাতে পেরে আমরা একটা শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ গড়তে পেরেছিলাম।”
আর পার্টনারশিপ? এতগুলো সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ গড়ার পিছনে রসায়নটা কী? দু’জনে কি খুব কথা বলতেন? “কেরিয়ারের প্রথম দিকে খুব কথা হত না। তবে আমি হয়তো কিছুটা সময় ক্রিজে রয়েছি আর সচিন সদ্য এল। তখন সচিন নিজেই জানতে চাইত কী মনে হচ্ছে? বোলারদের ব্যপারেও জানতে চাইত। সচিনের মতো একজন গ্রেট ব্যাটসম্যান আমার কাছে, যে সদ্য টিমে এসেছে তাঁর কাছে জানতে চাইছে, এটাই বিরাট ব্যাপার ছিল। তবে সচিনের এটা বরাবরই ছিল। জানার চেষ্টা, শেখার ইচ্ছা। ওর এই ব্যাপারটা সত্যিই অনবদ্য,” বলেন দ্রাবিড়।
জাক কালিস, রিকি পন্টিং, ব্রায়ান লারা আর সচিন গত কুড়ি বছরে যে নামগুলো ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়িয়েছে তার মধ্যে তাঁর দেখা সেরা ক্রিকেটার কে? ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ বলেন, “এরা সবাই গ্রেটেস্ট। লারার ব্যাটিং দেখাটা দারুণ বিনোদনের ব্যাপার ছিল। পন্টিং সফলতম। কালিস সেরা অলরাউন্ডার। তবে সচিনের সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হল ধারাবাহিকতা। টানা দুরন্ত ব্যাটিং করে যাওয়া। আমার যদি প্রচুর পয়সা থাকে, তা হলে টিকিট কেটে বিনোদনের জন্য লারার ব্যাটিং দেখব। তবে আমার জীবনের জন্য কাউকে ব্যাট করতে হলে আমি বাছব সচিনকেই।”
|