গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে অটলও অস্ত্র মোদীর
র্দার বল্লভভাই পটেলের আদর্শই শুধু নয়, দলের একমাত্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর দৃষ্টান্তকেও সামনে রেখে দিল্লির মসনদের দিকে এগোতে চান তিনি। এর জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে বাজপেয়ীর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বরের আশপাশের সময়টি। ওই সময়েই গোবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যের রাজধানী লখনউয়ে একটি ‘মহা-জনসভা’ করবেন মোদী।
বাজপেয়ীর জন্মদিনে দিল্লিতে এসে দলের এই শীর্ষ নেতার কাছ থেকে আশীর্বাদও নেবেন মোদী। প্রতি বছর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই এটা করে থাকেন। কিন্তু মোদী এ বার নিছক আশীর্বাদ নেওয়া বা শুভেচ্ছা জানানোতেই থেমে থাকছেন না। বাজপেয়ীর বিভিন্ন বক্তৃতা, এনডিএ জমানায় সরকারের সাফল্যের খতিয়ানও তৈরি করা হচ্ছে। এগুলির ব্যাপক প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী যাতে সেগুলিকে লোকসভা নির্বাচনে হাতিয়ার করতে পারেন।
লখনউ আসন থেকে বাজপেয়ী এক সময়ে লড়তেন। সেখানে ‘মহা-জনসভা’ করাই শুধু নয় বাজপেয়ীর এক সময়ের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকেই মোদীকে প্রার্থী করার চাপ রয়েছে দলের অন্দরে। হাওয়া বুঝে পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দল।
আপাতত মোদীর লক্ষ্য, শুধু আম-জনতা নয়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও যে গ্রহণযোগ্যতা বাজপেয়ীর ছিল, সুকৌশলে সেটাকে কাজে লাগানো। নিজেকে বাজপেয়ীয় অনুগামী বা উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরা গেলে সেটা দেশের সব মহলের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং আগামী দিনে নতুন শরিক পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে বলেই মনে করছেন মোদী।
আরএসএস-এর এক নেতার মতে, এক সময় বাজপেয়ী তাঁর ভাবমূর্তি ও বক্তৃতার মাধ্যমে জনতার মন কাড়তেন। মোদীও একই ভাবে জনতার কাছে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন। যদিও বাজপেয়ীর মতো বেদাগ ভাবমূর্তি মোদীর নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে মোদীকেও বাজপেয়ী হয়ে উঠতে হবে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও এক সাক্ষাৎকারে মোদীর জনপ্রিয়তার কথা কবুল করেছেন। কিন্তু বাজপেয়ীর সঙ্গে তাঁর ফারাকটাও তুলে ধরেছেন তিনি। চিদম্বরমের কথায়, “আমরা এখন নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি, যাঁর বাজপেয়ীর মতো রেকর্ড নেই। আমি মনে করি না, তিনি বাজপেয়ী কিংবা লালকৃষ্ণ আডবাণীর থেকেও শক্তিশালী প্রার্থী।”
মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, মোদী নিজে বাজপেয়ীকরণের প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু করে দিয়েছেন। দাঙ্গার কলঙ্ক মুছে ফেলে এখন তিনি প্রতিটি জনসভায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতির কথা বলছেন। এমনকী যে গোবলয়ে মেরুকরণের জমি প্রস্তুত হয়ে রয়েছে, সেখানেও। মোদীর ঘনিষ্ঠ ও উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত শাহ বলেন, “উত্তরপ্রদেশে অযোধ্যা মোদীর এজেন্ডা নয়। উন্নয়নই তাঁর পাখির চোখ।”
বাজপেয়ীর মতো সর্বধর্মের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য মোদী এখন শুধু উন্নয়নের কথা বললেও বিজেপি নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় কবুল করছেন, এটি নিছকই কৌশল। গোবলয়ে হিন্দুত্বের সমর্থক ভোটব্যাঙ্ককে উস্কে দেওয়ার জন্য সঙ্ঘ পরিবার তলে-তলে কাজ করছে। চলছে অযোধ্যা-যাত্রাও। তবে মোদীকে এ সব থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
কংগ্রেস জওহরলাল নেহরুর পাশাপাশি ইন্দিরা-রাজীবকে আইকন হিসেবে সামনে রাখে। সিপিএমেও এখন জ্যোতি বসুকে ঘিরে কিছুটা সেই ধরনের ভাবনা চিন্তা উঠে আসছে। বিজেপি-র আইকন এখনও বাজপেয়ী। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আজও দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বাজপেয়ীর কদর রয়েছে। মানুষ তাঁকে মনে রেখেছেন। যেমনটি এখনও উত্তরপ্রদেশের গ্রামে-গঞ্জে ইন্দিরা গাঁধীকে মানুষ মনে রেখেছে। যেমনটি বামেদের কাছে জ্যোতি বসু আজও প্রাসঙ্গিক। মোদী যুবকদের কাছে জনপ্রিয় নেতা। কিন্তু বিজেপি-র পুরনো ভোটার ও অন্য রাজনৈতিক দলের কাছে বাজপেয়ীর ছবিকেও আমাদের ব্যবহার করতে হবে।”
মোদী-ঘনিষ্ঠ অনেক নেতাই মনে করছেন, মোদীর নামে এখনও অনেক রাজনৈতিক দল তাঁর বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক-বিরোধী মঞ্চে এক ডজনের বেশি রাজনৈতিক দলের নেতারা এক মঞ্চে এসেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য দুটি। এক, কংগ্রেসের হাত শক্ত করা। দুই, মোদী-বিরোধিতার মঞ্চ তৈরি করা। এনডিএর প্রাক্তন শরিকদেরও দেখা গিয়েছে এই মঞ্চে। মোদী যদি লোকসভা নির্বাচনে দুশোর বেশি আসন নিয়ে আসেন, তা হলে এমনিতেই এঁদের অনেকে বিজেপিমুখী হবেন। কিন্তু আসন যদি কম হয়, তা হলে সরকার গঠনের জন্য আরও শরিকের প্রয়োজন হবে।
বাজপেয়ী জমানায় প্রায় দু’ডজন দল ছিল এনডিএ-তে। মোদীকে যদি প্রধানমন্ত্রী হতে সেই সব দলের সমর্থনও জরুরি হয়ে উঠতে পারে। নিজেকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে মোদীকেও। রাজস্থানে ভোটের আগে বসুন্ধরা রাজে সে রাজ্যে মোদীকে এনে সভা করিয়েছেন বটে। কিন্তু রাজ্য জুড়ে বাজপেয়ীরই পোস্টার দেওয়া হয়েছে বড়-বড় করে। ওই সব পোস্টারে মোদী-আডবাণী-সহ বাকি নেতাদের মুখ তুলনায় ছোট। দলের অন্দরেও বাজপেয়ী যে অনেকের কাছে মোদীর থেকে ঢের বেশি গ্রহণযোগ্য মুখ এটা তারই প্রকাশ। বাজপেয়ীকে সামনে রেখেই তাই কিস্তি মাত করতে চাইছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.