|
|
|
|
বড় পর্দায় মোদীর মুখ সর্দার পরেশ |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
ছোটবেলায় প্ল্যাটফর্মে চা বেচে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখার যাত্রাটি মোটেও ছোট নয়। সেই যাত্রাপথটি ক্যামেরাবন্দি হতে চলেছে ভোটের মুখে।
সমালোচকরা বলেন, নরেন্দ্র মোদী মিথ্যার জাল বোনেন। মিথ্যার ভিতেই তৈরি মোদীর প্যাকেজ। সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক, মোদীর প্যাকেজে নতুন পালক, তাঁকে নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি। এই ছবি নিয়ে মোদীর সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনাও সেরে ফেলেছেন এক অনাবাসী গুজরাতি। এবং সবুজ সঙ্কেত এসেছে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর কাছ থেকেও।
মোদীর এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য গত তিন বছর ধরেই মুখিয়ে রয়েছেন এক গুজরাতি। পরেশ রাওয়ল। গত বছর গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনে মোদীর হয়ে প্রচার করেছেন বলিউডের অভিনেতা। সব কিছু ঠিক থাকলে তিনিই এই ছবিতে মোদীর ভূমিকায় কাজ করবেন। এক দশক আগে এই পরেশ রাওয়লই আর এক ব্যক্তিত্বের ভূমিকায় কাজ করেছিলেন। সর্দার বল্লভভাই পটেলের। ছবির নাম ছিল ‘সর্দার’।
হতে পারে কালতলীয়। এমন এক সময়ে মোদীর জীবন নিয়ে ছবি বানানো নিয়ে তোড়জোর শুরু হয়েছে, যখন স্বয়ং তিনিই সর্দার পটেলকে পুঁজি করে দেশের রাজনীতির মোড় ঘোরাতে চাইছেন। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বদলে পটেল হলে দেশের নকশা বদলে যেত বলে মন্তব্য করছেন। নিজের রাজ্য গুজরাতে সর্দার পটেলের মূর্তি বসাচ্ছেন, যেটি হতে চলেছে বিশ্বের সব থেকে উঁচু মূর্তি। নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দ্বিগুণ। আর এই মহাযজ্ঞের পিছনে রয়েছে মোদীর রাজনৈতিক লক্ষ্যও। পটেলের ‘উচ্চতা’ বাড়িয়ে নেহরু-গাঁধী পরিবারকে খাটো করে দেখানো। |
|
এমন নয়, সাম্প্রতিক অতীতে জীবিত ব্যক্তিত্বের উপরে ছবি তৈরি হয়নি। অতি সম্প্রতি মিলখা সিংহের উপরেও একটি ছবি তৈরি হয়েছে। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। খোদ মিলখা সিংহের সঙ্গে ছবির নির্মাতারা দফায় দফায় আলোচনা করেই এই ছবি বানিয়েছেন। মোদীর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হচ্ছে না। ছবির প্রযোজকরা ইতিমধ্যেই কয়েক দফা মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, এই ছবির চিত্রনাট্য যাঁরা লিখছেন, তাঁরাও মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিজেপি শিবিরের খবর, কিছুটা বাস্তব, কিছুটা কাহিনির মিশেলেই তৈরি হবে এই ছবি। যাতে এতে বাণিজ্যিক উপাদানও থাকে। মোদীকে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন, তাঁদের অনেক বলেন, তিনি যা করেন, তার পিছনে অঙ্কও থাকে। প্রতিটি জনসভায়, বিশেষ করে গোবলয়ে মোদী নিজেই এখন ফলাও করে বলছেন তাঁর যাত্রাপথের কাহিনি। রাহুল গাঁধীকে ‘শাহজাদা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলছেন, সোনার চামচ মুখে দিয়ে যাঁর জন্ম, তিনি কী করে বুঝবেন দারিদ্রের যন্ত্রণা। কুঁড়েঘরে গেলেও তিনি ক্যামেরা নিয়ে যান। মোদীর দাবি, দারিদ্র কাকে বলে তা তিনি হাড়ে হাড়ে জানেন। ছোটবেলায় প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করে বড় হয়েছেন তিনি। আর মোদীর দলের নেতারা গোবলয়ের জাতপাতের পাটিগণিত মেনে মোদীকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নেতা হিসেবে তুলে ধরতেও কসুর করছেন না। সঙ্গে রয়েছে মোদীর উন্নয়নের গাঁথা। মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ দলের তরফে দায়িত্ব পেয়েছেন দেশের সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের। তিনিই বলছেন, এ বারের লোকসভা ভোটে হিন্দুত্ব নয়, মোদীর এজেন্ডা একটাই। উন্নয়ন। গুজরাত মডেল। সেই সংঘর্ষময় এক আম-আদমির জীবন-কাহিনিই এ বার পর্দায় ফুটে উঠবে। ভোটের মুখে মোদী-ভক্তদের জন্য এ এক উপহার।
এই ছবির নির্মাতা মিতেশ পটেলের অবশ্য দাবি, ভোটের সঙ্গে এই ছবির কোনও সম্পর্ক নেই। অনেক আগে থেকেই এই ছবির প্রস্তুতি চলছে। এখন গুজরাত, মুম্বইয়ে লোকেশন বাছাইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। যখন এই ছবির ভাবনা হয়েছিল, তখন মোদী বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হননি।
তবে বিজেপি-র অনেক নেতারই মত, মোদী বরাবরই দূরদর্শী। দেওয়াল লিখন অনেক আগেই পড়ে ফেলেন তিনি। ছবি তৈরির ভাবনা পুরনো হতে পারে। কিন্তু আজ তিনি দিল্লির মসনদ দখল করতে চাইছেন। আর ঠিক সেই সময় তাঁর উপরে তৈরি হচ্ছে ছবি। সব তো এতটা কাকতলীয় হতে পারে না! |
|
|
|
|
|