মার ঝাড়ু মার, মোদীর সফরে নয়া তরজা
লেন। দেখা করলেন নিহতদের পরিবারের সঙ্গে। এবং এক বারও মুখে আনলেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর নাম। তাতেই কিন্তু ধৈর্যচ্যুতি ঘটল নীতীশ কুমারের। নরেন্দ্র মোদীর আজকের বিহার সফর সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করেও তিনি নিয়ে এলেন ঝাঁটার অনুষঙ্গ।
সব মিলিয়ে বিহারের মাটিতে মোদী বনাম নীতীশ দ্বিতীয় রাউন্ডও জমজমাট। বিহার রাজনীতির লোকজন বলছেন, হবে না-ই বা কেন! মোদী যে কালীপুজোর দিন নীতীশের গড়ে ঢুকেই তাঁকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে গেলেন! গত ২৭ অক্টোবর পটনায় মোদীর ‘হুঙ্কার র্যালি’তে জঙ্গি-বিস্ফোরণে নিহত হন ৬ জন। ঘটনার পরই তাঁদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানানোর পরিকল্পনা নেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। রাজনীতির লোকজনেরা মনে করছেন, নীতীশকে বেগ দিতেই এই পদক্ষেপ তাঁর।
আজ হেলিকপ্টারে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরে বেড়ান মোদী। ‘ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডো’ পরিবেষ্টিত হয়ে দারিদ্রক্লিষ্ট গ্রামের সরু গলির একচিলতে বাড়ির উঠোনে বসে কথা বলেন নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে। চাকরির আশ্বাস দেন। ফের হেলিকপ্টারে গ্রামের ধুলো উড়িয়ে চলে যান অন্য গন্তব্যে। একরাশ বিস্ময়ে এ সব দেখেই আপ্লুত বিহারের আম-জনতা।
মোদী ঘুরে যাওয়ার পর নিহতদের পরিজনদের কথায় একই প্রতিফলন। তাঁদের বক্তব্য, “অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও উনি আমাদের বাড়িতে এসে দেখা করে গেলেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা, মন্ত্রিসভা, এমনকী প্রশাসনের কেউ এখনও সময় করে উঠতে পারেননি।”
সরাসরি কেউ কারও নাম করুন বা না-করুন, এই সফর ঘিরে তরজা কিন্তু তুঙ্গে। নীতীশ যেমন বললেন, “বিহারের সমস্যা মেটাতে হবে রাজ্যবাসীকেই। বাইরের কেউ তা পারবে না। বিস্ফোরণের পরও গভীর রাত পর্যন্ত দেওয়ালির কেনাকাটা চলেছে। খবর পেয়েছি, অন্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি অনেকে ঝাঁটাও কিনেছেন। তা দিয়ে বাইরের আবর্জনা কী ভাবে বের করতে হয় তা সকলে জানেন।”
নীতীশের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করেননি মোদী। তিনি বলেন, “বিজেপি-র সমাবেশে জঙ্গি হামলায় ভয় পাননি সাধারণ মানুষ। সিনেমায় দেখেছি, প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হলেও, তাঁদের দমানো যায় না। বিহারবাসী বাস্তবে সেটাই করে দেখিয়েছেন।”
গত রাতে বিশেষ বিমানে পটনায় পৌঁছন মোদী। আজ সকাল থেকে পরপর তাঁর ছ’টি জেলা সফরের কথা ছিল। খারাপ আবহাওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ, সুপৌলে তাঁর হেলিকপ্টার নামতে পারেনি। সফরের শুরুতেই মোদী যান পটনার কাছে গৌরীচকের কমরজি গ্রামে। কপ্টারের ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়ে আওয়াজ ওঠে‘নমো জিন্দাবাদ’। অস্থায়ী হেলিপ্যাডে তাঁর অপেক্ষায় ছিল বিহার সরকারের ‘বুলেটপ্রুফ’ গাড়ি। সেখান থেকে কিছুটা দূরেই পটনায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন-এর হামলায় নিহত রাজনারায়ণ সিংহের বাড়ি। সরু গলিতে গাড়ি যাওয়ার জায়গা নেই। তা-ই গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে সেখানে পৌঁছলেন মোদী। তাঁর পাশে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে এগোল এনএসজি কম্যান্ডোরা।
মোদীর সফরের অনেক আগেই জেলা পুলিশের সঙ্গে কমরজি-র দখল নিয়েছিল গুজরাতের বাহিনীও। এক হাজার নিরাপত্তাকর্মীর ভিড় সেখানে। সবুজ ঘেরা গ্রামটির যে দিকে চোখ যায়, শুধুই উর্দিধারীদের আনাগোনা। জেলা পুলিশের গাড়ি রাখা ছিল গ্রাম থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে।
পাঁচ স্তরের নিরাপত্তায় ঘেরা ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রথমটির দায়িত্ব ছিল গুজরাতের আইজি মর্যাদার অফিসারদের। সঙ্গে এনএসজি কম্যান্ডোরা। সেখানে বিহার পুলিশকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। গত কাল গোটা গ্রামে নজরদারি চালিয়ে গিয়েছিলেন গুজরাতের পুলিশকর্তারা। নিহতের বাড়িতে গিয়েও নিরাপত্তার সব দিক দেখেন তাঁরা।
আজ সকাল পৌনে ১০টা গৌরীচকে পৌঁছন মোদী। তাঁর সঙ্গে হেলিকপ্টারে ছিলেন বিজেপি নেতা সুশীল মোদী, বিহারের বিরোধী দলনেতা নন্দকিশোর যাদব। নিহত রাজনারায়ণের বাড়িতে তখন তাঁর অপেক্ষায় যৌথ সংসারের ২৯ জন সদস্য। মিনিট পাঁচেক মোদী ছিলেন ওই বাড়িতে। জীর্ণ ঘরের মাটিতে পেতে রাখা চাদরেই বসে পড়েন তিনি। কথা বলেন রাজনারায়ণের ছেলে বিনোদ, মনোজ এবং প্রমোদের সঙ্গে। সমবেদনা জানান তাঁদের। বিজেপি-র তরফ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার ‘চেক’ তুলে দেন নিহতের স্ত্রী সারদাদেবীর হাতে। পরিজনদের সরকারি চাকরির বিষয় ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন।
গৌরীচক থেকে তিনি উড়ে যান কৈমুরে, জঙ্গি-বিস্ফোরণে নিহত বিকাশ সিংহের বাড়িতে। পরের গন্তব্য ছিল গোপালগঞ্জ। কুয়াশার জন্য সেখানে তাঁর হেলিকপ্টার নামতে পারেনি। মোদী ফিরে যান পটনায়। এর পর বেগুসরাই, নালন্দাতেও যান তিনি। পরে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা, নিহত মুন্না শ্রীবাস্তবের স্ত্রী’র সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তাঁকে আশ্বাস দেন, “তোমার সংসারের যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেবে বিজেপি। আমরা তোমার দুঃখের সময়ের সঙ্গী।”

পুরনো খবর


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.