|
|
|
|
জনমত সমীক্ষা নিষিদ্ধ করতে বলে সাঁড়াশি চাপে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দেশ জুড়ে জনগণের মত ভোটবাক্সে পড়বে আরও কয়েক মাস পরে। তার আগেই জনমত সমীক্ষার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলে বেকায়দায় কংগ্রেস। এক দিকে সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম কড়া ভাষা সমালোচনা। অন্য দিকে, নতুন অস্ত্রের খোঁজ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “যে সরকার জনমতই মানতে চায় না, তাকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলা উচিত।”
অর্থাৎ, এটা আর ‘সেফোলজি’ (যে বিশ্লেষণ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় ভোট সমীক্ষা) ঠিক না ভুল, তা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনায় আটকে নেই। বরং তা মতপ্রকাশের অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কে বদলে গিয়েছে। আর তাতে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে কেন্দ্রের প্রধান শাসকদল।
সামনেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার পরে লোকসভা নির্বাচন। এই ভোট-পর্ব নিয়ে সম্প্রতি একাধিক জনমত সমীক্ষা করেছে বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেলে। প্রায় সব ক’টি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটে ডাহা ফেল করছে কংগ্রেস। স্বস্তির খবর নেই বিধানসভাগুলিতেও। এই পরিস্থিতিতে জনমত সমীক্ষার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, এ সব জনমত সমীক্ষা থেকে ভোটারদের প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের প্রশ্ন, এ সব সমীক্ষা কি কোনও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে হচ্ছে? নাকি এর নেপথ্যে কোনও অদৃশ্য হাত রয়েছে? তাই এমন সমীক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছে তারা।
সংবাদমাধ্যমের আপত্তি সেখানেই। তাদের পাল্টা বক্তব্য, জনমত সমীক্ষায় নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে চাইছে কংগ্রেস। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের ওপর এমন নিয়ন্ত্রণ মানা অসম্ভব। আজ দিনভর এটাই ছিল প্রায় সব ক’টি জাতীয় সংবাদ চ্যানেলের আলোচনার বিষয়। বিজেডি নেতা জয় পণ্ডা এবং চেতন ভগতের টুইটেও এসেছে এই বিষয়টি। জয় লিখেছেন, “পরের ধাপ, মতপ্রকাশে নিষেধাজ্ঞা।” চেতন ভগতের টুইট, “জনমত সমীক্ষা নিষিদ্ধ করো। আরও ভাল, মতপ্রকাশ নিষিদ্ধ করো। সব থেকে ভাল, ভোটই নিষিদ্ধ করো।”
জনমত সমীক্ষা নিষিদ্ধ করা হবে কি না, সেই বিতর্ক নতুন নয়। ২০০৪ সালে নির্বাচন কমিশনই সর্বদল বৈঠক ডেকে এই প্রশ্ন তোলে। ২০১০ সালে ভোট চলাকালীন বুথ ফেরত সমীক্ষাকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু জনমত সমীক্ষা নিয়ে কোনও মীমাংসা হয়নি।
এ বারে ফের সেই বিষয়টি সামনে এনেছে কমিশন। সম্প্রতি কমিশনের তরফে এ ব্যাপারে কংগ্রেস-সহ সব ক’টি দলের মত জানতে চাওয়া হয়। তার জবাবেই জনমত সমীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে সওয়াল করেছে শাসকদল। এ ব্যাপারে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএসপি।
কংগ্রেসের এই অবস্থান একটি বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। আর ৩০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিকে ধরে অন্য একটি বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলেছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যখন কোনও জাতীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন, তখন কারও সঙ্গে তাঁকে ‘কৃত্রিম প্রতিযোগিতায়’ ফেলে দেওয়া একেবারেই অনুচিত। যে সব চ্যানেল প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করে বিষয়টি প্রতিযোগিতার পর্যায়ে নিয়ে যাবে, তাদের জন্য শাস্তির সুপারিশও করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নিজের ব্লগে এই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জেটলি বলেছেন, “এটা অসাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ (সেন্সরশিপ)। মোদী-আতঙ্ক থেকেই এমন নিয়ন্ত্রণের উদ্ভব।” এর সঙ্গেই তিনি জুড়ে দিয়েছেন জনমত সমীক্ষা নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি বিষয়টিও। তাঁর বক্তব্য, “সমীক্ষার ফল তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে দেখেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানাচ্ছে কংগ্রেস।” তাঁর কথায়, “আজ যদি জনমত সমীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, কাল তা হলে প্রাক্ ভোট নির্বাচনী বিশ্লেষণও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। সমীক্ষা ঠিক না ভুল, তার বিচার গণতন্ত্রে মানুষের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।” জেটলি আরও বলেন, “সমালোচনা সমাজ জীবনের অঙ্গ। সুপ্রিম কোর্টের রায়েরও সমালোচনা হয়। যত ক্ষণ না কোনও সমালোচনা সংবিধানের ১৯(২) ধারাকে লঙ্ঘন করছে, তত ক্ষণ তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যায় না।”
জেটলি যদি আইনি দিক দেখে থাকেন, থেকে সমালোচনা করেছেন। আর মোদীর আক্রমণ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। জয় পণ্ডা ও চেতন ভগতের টুইটের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অতীতেও ক্ষমতায় এসে মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস।”
এই সাঁড়াশি আক্রমণে আজ কিছুটা পিছু হটেছে কংগ্রেস। শীর্ষ নেতারা বুঝতে পারছেন, সময়টা ঠিক হয়নি। উল্টে এখন মনে হচ্ছে, সমীক্ষার ফল দেখে কংগ্রেস ভয় পাচ্ছে। আজ তাই আপত্তি বহাল রেখেও সুর কিছুটা বদলেছেন দিগ্বিজয় সিংহরা। তাঁদের বক্তব্য, “কংগ্রেস শুরুতে নিষেধাজ্ঞার কথা বলেনি। আমরা কমিশনের প্রস্তাবকে শুধু সমর্থন জানিয়েছি।”
অতীতে জনমত সমীক্ষার বিরোধিতা করেছে বহু দলই। বিজেপিও আপত্তি তোলে। কিন্তু এখন মায়াবতী ছাড়া কংগ্রেসের পাশে কেউই সে ভাবে নেই। সকলেই মনে করছেন, এখন আপত্তি জানালে উল্টো বার্তাটাই যাবে। তাই সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই। তবে কমিশনের কাছে জানানো হয়েছে, ভোট-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর যেন এই ধরনের সমীক্ষা প্রকাশ না পায়।” তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেন, “কমিশনের রায় মেনে নেব।”
|
পুরনো খবর: জনমত সমীক্ষা বন্ধে সমর্থন, বিপাকে কংগ্রেস |
|
|
|
|
|