শেষ পর্যন্ত হুইপ জারি করেই বুর্ধেন্দু রায়কে গুসকরার পুরপ্রধান করল তৃণমূল।
এর আগে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বর্ধমানের ওই পুরসভায় প্রধান নির্বাচন ভেস্তে গিয়েছিল। বোর্ডও গঠন করা যায়নি। বুর্ধেন্দু রায়কে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য এ বার নিজের লেটারহেডে ১১ জন কাউন্সিলরকেই হুইপ দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সকাল থেকে হাজির ছিলেন নিজেও।
সোমবার ব্যাপক পুলিশি প্রহরায় প্রথমে গুসকরার বিদ্যাসাগর হলে তৃণমূলের ১১ জন ও সিপিএমের পাঁচ কাউন্সিলরকে শপথবাক্য পাঠ করানো হল। পরে মঞ্চের পাশে তৃণমূল কাউন্সিলরদের বৈঠকে প্রতেকের হাতে মুকুল রায়ের দেওয়া খাম তুলে দেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা এ বারও সেই পদের অন্যতম দাবিদার চঞ্চল গড়াই। আগের উপ-পুরপ্রধান তথা প্রধান পদের আর এক দাবিদার মল্লিকা চোঙদার ছিলেন অল্প ক্ষণ।
তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে মল্লিকা বীরভূম জেলা সভাপতি তথা গুসকরার পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত। চঞ্চলবাবু গোড়ায় অনুব্রত-বিরোধী শিবিরে থাকলেও পরে আনুগত্য বদলান। এই দুই নেতা-নেত্রীর সংঘাতে গত পাঁচ বছরে গুসকরায় উন্নয়নের কাজ কার্যত শিকেয় উঠেছে। আর এক প্রভাবশালী নেতা নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করলেও বর্তমানে অনেকটাই কোণঠাসা।
তৃণমূল ভবন সূত্রের খবর, গুসকরায় লাগাতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাজ্য নেতৃত্ব বিরক্ত। সম্ভবত তাই ওই তিন নেতা-নেত্রীর বদলে তুলনায় কম পরিচিত বুর্ধেন্দুকে পুরপ্রধান করা হল। দলের এক সূত্রের দাবি, ২২ অক্টোবর নাম লেখা খাম কাউন্সিলরদের দেওয়া হলেও মল্লিকার মতো অনেকেই তা মানতে চাননি। মুকুলবাবুর অবশ্য দাবি, “সে দিন কোনও খাম আসেনি। আমাদের ক’জনের মধ্যে যোগাযোগের অভাব দেখা দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। এ দিন দলের তরফে খাম দিয়ে কাউন্সিলরদের পুরপ্রধানের নাম জানানো হয়।” শপথের পরে তিনি, অনুব্রত এবং দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও চন্দ্রনাথ সিংহ হলে আসেন। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ পুরসভার অতিথিশালায় বৈঠকে থাকলেও হলে যাননি।
চঞ্চলবাবুর প্রভাবের কথা মাথায় রেখে তাঁকে অবশ্য নতুন পদ দেওয়া হয়েছে। নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বদলে এ বার চঞ্চলবাবুকেই গুসকরা টাউন তৃণমূলের সভাপতি করা হল। চঞ্চলবাবু বলেন, “দলের সৈনিক হিসেবে আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।” নিত্যানন্দবাবুর প্রতিক্রিয়া, “যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। দল যা চায়, তাই তো হবে!” |