রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার নির্দেশে মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণের শিকার কিশোরীকে বারাসত থেকে এনে ভর্তি করা হল এম আর বাঙুর হাসপাতালে। বাদুড়িয়ায় গণধর্ষিত মূক-বধির কিশোরীকে আগেই কলকাতার নামী নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক মূক-বধির বিশেষজ্ঞ গিয়ে কিশোরীটির থেকে বিস্তারিত ভাবে সমস্ত ঘটনা বুঝেও এসেছেন।
কামদুনিতে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ও সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণের নালিশ জানিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এক অভিযুক্ত ফের কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ ওঠাতেও চাপের মুখে পড়ে যায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। বাদুড়িয়ার ক্ষেত্রে তাই আর পুলিশ কোনও ঝুঁকি নেয়নি। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “অভিযোগের সঙ্গে-সঙ্গেই সমস্ত অপরাধীদের ধরা হয়েছে। চার্জশিটে অভিযোগটি আরও জোরদার করার জন্যই মূক ও বধির বিশেষজ্ঞের সাহায্যে মেয়েটির কাছ থেকে ঘটনার খুঁটিনাটি ও মতামত নেওয়া হয়েছে।”
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মধ্যমগ্রামের কিশোরীকে মঙ্গলবার বিকেলে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরের দিনই রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে আদৌ কতটা চিকিৎসা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর পরে বুধবার রাতেই কিশোরীটিকে বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শান্তিরঞ্জন শতপথী বলেন, “উন্নততর চিকিৎসার জন্যই তাকে বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।”
মধ্যমগ্রামের ঘটনায় অ্যান্টনি সচ্চ নামে এক যুবককে ঘোলা থেকে গ্রেফতার করে এ দিনই বারাসত আদালতে তোলে পুলিশ। এই নিয়ে ওই ঘটনায় মোট ৪ জনকে ধরা হল। পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই আদালতে কাছে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানিয়েছি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত ও ডাক্তারি পরীক্ষায় গণধর্ষণের প্রমাণ মিললেও মামলা জোরদার করতে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের দেহরসের বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, কামদুনির ধর্ষণ-খুন এবং তার পরে রাজ্য জোড়া প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তারা। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার থেকে শুরু করে জবরদস্তি আন্দোলন রোখার চেষ্টা প্রতি ক্ষেত্রেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই পরপর এই দু’টি গণধর্ষণের ঘটনায় আর জনরোষের পুনরাবৃত্তি চায়নি প্রশাসন। বরং মামলা ‘জোরদার’ করতে তৎপর হয়েছেন কর্তারা। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও বলছেন, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য তাঁরা যা প্রয়োজন করবেন।
তবে মধ্যমগ্রামে ১৪ বছরের কিশোরীকে ফের ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে পুলিশের এখনও সন্দেহ রয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মধ্যমগ্রামের ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ)-কে দেওয়া ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও পদস্থ পুলিশ অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “মেয়েটি দ্বিতীয় বার ধর্ষণের কথা বললেও পুলিশ ধন্দে রয়েছে। সমস্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তার পরেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে।”
|