জেলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বেশ কয়েকটি আইটিআই কলেজ তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ওই সব আইটিআই প্রকল্পর অধিকাংশই জমিজটে আটকে রয়েছে। মগরাহাট, পাথরপ্রতিমা, ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুরে আইটিআই কলেজ নির্মাণের কাজ গতি হারিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। একমাত্র ব্যতিক্রম ক্যানিং-২ নম্বর ব্লক। এখানে কলেজের বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। যে জমিতে কলেজটি তৈরি হয়েছে তা অবশ্য বাম আমলে অধিগৃহীত। |
জমি জটের মতো মূল সমস্যার কারণে যেখানে বেশিরভাগ আইটিআই প্রকল্প থমকে রয়েছে সেখানে আইটিআই-এর জন্য একজন জমি দান করলেও আজও সেখানে কোনও কাজই শুরু হয়নি। ঘটনাটি বাসন্তীর উত্তর সোনাখালি এলাকার। এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে ৯ বিঘা জমি রাজ্য সরকারকে দান করেছিলেন উত্তর সোনাখালির কৃষক দম্পতি জয়দেব মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী নির্মলা। ২০১০ সালে জয়দেববাবুর দান করা জমিতে আইটিআই কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ওই জমিতে আইটিআই কলেজের জন্য রাজ্য সরকার অনুমোদনও দেয়। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে সরকারে ক্ষমতার হাত বদলের পর বাসন্তীর আইটিআই কলেজ নির্মাণের সব রকম তৎপরতা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যে পালা বদলের পরে শিক্ষার প্রসারে প্রতিটি মহকুমায় একটি করে আইটিআই নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ ও আইটিআই কলেজের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কেন বাসন্তীর আইটিআই কলেজে নির্মাণে পদক্ষেপ করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জয়দেববাবুর কথায়, “২০১০ সালে সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য লোকমান মোল্লা আমার কাছে এসে আইটিআই গড়ার জন্য জমি দান করতে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর অনুরোধে সাড়া দিয়ে এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ৯ বিঘা জমি সরকারকে দান করেছিলাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা। অথচ ওই জমিতে আজও কিছুই করা হল না।” ইটভাটার ব্যবসায়ী জয়দেববাবু আরও জানান, ওই জমি দান করার পরে তাঁর মাত্র চার বিঘা কৃষিজমি রয়েছে। ইটভাটার পাশাপাশি ওই জমিতে চাষ-আবাদ করে সংসার চালান তিনি। তাঁর দাবি, “রাজ্য সরকার যদি জমি নিয়ে তা ব্যবহার করতে না চায় তা হলে ফেরত দিক।”
লোকমান মোল্লা বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। প্রতি মহকুমায় আইটিআই গড়া হবে বলে রাজ্য সরকারই বলছে। অথচ বাসন্তীতে জমি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। সরকার কেন গড়িমসি করছে বুঝতে পারছি না।” স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের পাশাপাশি যদি বাসন্তীতেও একটি আইটিআই কলেজ হত তাহলে সুন্দরবনের একটি বৃহত্তর অংশের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হতেন।
এ ব্যাপারে কারিগরি প্রশিক্ষণ দফতরের অধিকর্তা হরিপ্রসন্ন দে বলেন, “বাসন্তীতে ওই জমিতে আইটিআই নির্মাণের বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব বলে মনে করছি।”
যদিও রাজ্য সরকারের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন জয়দেববাবু। তাঁর কথায়, “বছর দুয়েক ধরেই শুনছি ওই জমিতে শীঘ্রই কলেজ তৈরি হবে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। তবে উনি যখন বলেছেন তখন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখাই যাক।” |