পুলিশি গাফিলতি নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। আর বুধবার মধ্যমগ্রামের গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে গিয়ে রাজ্য মহিলা কমিশন উদাসীনতার অভিযোগ তুলল স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে কয়েকটি প্রশ্নও তুলেছে তারা।
মহিলা কমিশনের বক্তব্য, ধর্ষিতা নাবালিকাটির যথাযথ যত্ন ও চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, তার সঙ্গে যে-ব্যবহার করা হয়েছে, তা অমানবিক। এই ঘটনায় এমন সব পদক্ষেপ করা হয়েছে, যা মামলার ক্ষতি করবে। এতে অপরাধীদের সুবিধা হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কমিশন-কর্তারা।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে লাঞ্ছিতা কিশোরীকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে ভর্তি করানো হয় মেয়েটির বাবাকেও। বুধবার সকালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মেয়েটির চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে।
মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণের ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে মঙ্গলবার রাতে রাজারহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ধৃতের নাম পাপাই রায়। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’ বুধবার পাপাইকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এই নিয়ে ওই ঘটনায় ছয় অভিযুক্তের মধ্যে তিন জন ধরা পড়ল।
মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা এ দিন বারাসত হাসপাতালে ধর্ষিতার সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় তদন্ত ও চিকিৎসায় বেশ কিছু অসঙ্গতি ও ত্রুটির কথা তুলে ধরেন। সেগুলি হল:
• গণধর্ষিতা মেয়েটি নাবালিকা। সুনন্দাদেবীর কথায়, ‘‘১৫ বছরের একটি মেয়েকে ছ’জন মিলে ধর্ষণ করেছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শনিবার মেয়েটিকে যখন বারাসত হাসপাতালে আনা হয়েছিল, চিকিৎসকদের উচিত ছিল তখনই তাকে ভর্তি করে নেওয়া। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি তার মানসিক চিকিৎসারও প্রয়োজন ছিল। মেয়েটি ‘ট্রমা’য় রয়েছে জেনেও হাসপাতাল তাকে ছেড়ে দিল কেন?’’
• কিশোরীটির শারীরিক অবস্থা এখনও খারাপ। তাকে যে-ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে, হাসপাতালের সুপারের ঘর সেখান থেকে অনেকটা দূরে। এ দিন কমিশনের সামনেই তাকে ট্রলিতে না-এনে হাঁটিয়ে আনা হয় সেখানে। সুনন্দাদেবী বলেন, ‘‘মেয়েটি এতটা রাস্তা হেঁটে আসতে আসতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। তাকে এ ভাবে আনা হবে কেন?’’
• ২৫ অক্টোবর গণধর্ষণের ঘটনার পরে ২৭ তারিখে মেয়েটিকে আদালতে তোলা হয়। তার গোপন জবানবন্দি নেওয়ার দিন ঠিক হয়েছে ৪ নভেম্বর। সুনন্দাদেবীর কথায়, ‘‘এত দেরিতে জবানবন্দির তারিখ ঠিক করাটা অন্যায়। মামলার ক্ষতি হবে, সুবিধা হয়ে যাবে অপরাধীদের। এই ধরনের মামলায় যতটা সতর্কতা নেওয়া দরকার, এ ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি।’’
মহিলা কমিশনের এই অভিযোগ ও প্রশ্ন নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কী বলছেন?
বারাসত হাসপাতালের সুপার সুপ্রিয় মিত্র বলেন, ‘‘মেয়েটির মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। চিকিৎসকেরা আগে দেখেছেন। তখন তাকে ভর্তি করার কথা মনে হয়নি তাঁদের। অবস্থা খারাপ হওয়ায় মেয়েটি এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।’’ ঘটনার পরে যে-চিকিৎসক ওই কিশোরীকে পরীক্ষা করেছিলেন, এ দিন তিনিও বলেন, ‘‘সে-দিন ভর্তি করার মতো খারাপ অবস্থা থাকলে ওকে ভর্তি করার কথাই বলতাম।’’
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য জানান, ‘স্ত্রীরোগ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে মেয়েটির চিকিৎসা করা হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির পেটে যন্ত্রণা বেড়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মেয়েটির কাউন্সেলিংও করানো হয়েছে। বুধবার ফের তার পূর্ণাঙ্গ ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে।’’
ওই গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। মেয়েটির বাড়ি ও মধ্যমগ্রাম থানায় যান কামদুনি, সুটিয়া ও বারাসত প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যেরাও। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
|