সাত বছরের বালিকার সৌজন্যে বৃন্দাবনের উদ্দেশে রওনা হয়ে নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বাড়ি ফিরলেন সত্তর বছরের এক বৃদ্ধা। শুক্রবার ইলাহাবাদ থেকে কোচবিহারের বক্সিরহাটের বাড়িতে ফিরেছেন বৃদ্ধা দুর্গারানি সাহা। এদিন আচমকা তিনি বাড়ি ফিরে আসায় নিখোঁজের পর থেকে শুরু হওয়া পরিজনদের কান্নাকাটির ছবিটাও মূহূর্তে পাল্টে যায়। বৃদ্ধার খোঁজে বার হওয়া তিন ছেলে ও জামাইকে তড়িঘড়ি বিষয়টি মোবাইলে খবর জানানো হয়। বৃদ্ধার পরিবারের লোকেরা তো বটেই গোটা এলাকা বাসিন্দা ওই বালিকা কাজল নৈনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বৃদ্ধার পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, সুভাষপল্লির সভ্রান্ত বাসিন্দা ব্যবসায়ী বলাই সাহার স্ত্রী দুর্গাদেবী গত ১৮ অক্টোবর এলাকার পরিচিত কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে মহানন্দা এক্সপ্রেসে বৃন্দাবনের উদ্দেশে রওনা হন। ওই রাতেই পটনা স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়ালে প্ল্যাটফর্মে নেমে তিনি দলছুট হয়ে পড়েন। ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ায় তাঁকে কাঁদতে দেখে দুই যুবক দিল্লিগামী অন্য একটি ট্রেনে তাঁকে তুলে দেন। দিল্লি পৌঁছলেও ভাষাগত সমস্যায় তিনি কাউকে হারিয়ে যাওয়ার কথা বোঝাতে পারেননি। পরেরদিন নিজেই অন্য একটি ট্রেনে চেপে তিনি ইলাহাবাদে চলে যান। দিনভর পরিচিতদের খোঁজে স্টেশনে কাটান। সন্ধ্যা নাগাদ রাত কাটানোর আশ্রয় জোগাড় করতে স্টেশন ও লাগোয়া এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে আর্জি জানালেও কেউ আমল দেননি। |
বিষণ্ণ মুখে দুর্গাদেবীকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে বছর সাতেকের কাজল। বৃদ্ধার মুখে বাংলা কথা শুনে সে জানিয়ে দেয় তার মা বাংলা জানেন । কিছুটা নিশ্চিত হয়ে বালিকার ডাকে ওই বাড়িতে যান। বালিকা মা চায়না দেবী ও বাবা পেশায় রঙমিস্ত্রি স্বামী সুরেশ নৈনিকে পুরো ঘটনা জানান। তাঁরা বৃদ্ধাকে খাওয়ানোর পর নিজেদের এক চিলতে ঘরের একমাত্র খাটিয়ায় বৃদ্ধাকে শুতেও দেন।
পরেরদিন সুরেশবাবুর ট্রেনের টিকিট কেটে বৃদ্ধাকে হাওড়া হয়ে বক্সিরহাটের উদ্দেশে রওনা করে দেন। বাড়িতে বসে দুর্গাদেবী বলেন, “দিল্লিতে একরাত স্টেশনে কাটিয়ে ক্লান্ত ছিলাম। ভয়ও হচ্ছিল। ইলাহাবাদে তাই আশ্রয় খুঁজতে যাই। বাংলায় কথা অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না। অসহায় অবস্থার মধ্যে দেবদূতের মত এগিয়ে আসে বছর সাতেকের মেয়েটি। ওর মা বাঙালি বলায় বলে সমস্যা হয়নি। ওরা সাহায্য না করলে কী করতাম জানি না।”
দুর্গাদেবীর স্বামী বলাই সাহা বলেন, “আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পুলিশে মিসিং ডায়েরি করা হয়। তিন ছেলে ও মেয়ে জামাই খোঁজে বার হয়। ভগবানের দয়া তো আছেই। বাচ্চা মেয়েটি না থাকলে যে কী হত?” দুর্গাদেবীর নাতনি অর্পিতার কথায়, “ঠাকুমার সঙ্গে যাওয়া একজনের পরিবারের মাধ্যে হারিয়ে যাওয়ার খবর পাই। যে সংস্থার মাধ্যমে ঠাকুমা গিয়েছিল তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।”
তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন সাহা জানান, দুর্গাদেবীর বাড়ি ফেরার পিছনে ওই বালিকারই মূল কৃতিত্ব রয়েছে। কারা তীর্থ করানোর নামে নিয়ে গিয়ে এমন দায়িত্বহীনতার কাজ করেছেন তা খোঁজ নিচ্ছি। এলাহাবাদের নৈনি পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে গৃহকর্তা সুরেশ নৈনি বলেন, “মেয়ে কাজল বৃদ্ধাকে ডেকে আনে। আপনজনের মত ওঁকে রেখেছিলাম। বাড়িতে পৌঁছে উনি ফোন করেছিলেন। খুব ভাল লাগছে।” |