সরঞ্জাম নেই, খোঁড়াচ্ছে দন্ত চিকিৎসা
রের বাইরে ঝুলছে বোর্ড। লেখা ‘ওপিডি, ডেন্টাল’। ভিতরে চেয়ারে বসে রয়েছেন চিকিৎসক। সামনে একটি কাঠের টেবিল। পাশে রোগীদের বসার জন্য রয়েছে কাঠের টুল। আর রয়েছে অনেক দিনের পুরনো একটি ভাঙাচোরা ‘ডেন্টাল চেয়ার’। টেবিলে প্রেসক্রিপশন লেখার কাগজ, রেজিস্টার, পাশে একটি ছোট্ট টর্চ।
এক নজরে এটাই হুড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দন্ত বিভাগের ছবি। রোগীরা যাওয়ার সময় স্বগতোক্তি করছেন, “কিছুই তো নেই। এখানে হবে না। জেলা হাসপাতালে না হলে অন্য জায়গায় যেতে হবে।’’ কারণ, চিকিৎসক থাকলেও এখানে চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামোই নেই। তাই দাঁতের রোগের চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। একদিন বা দু’দিন নয়, হুড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই অব্যবস্থা চলছে বছর খানেক ধরে। দাঁতের প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসছেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা তাঁরা পাচ্ছেন না। বদলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসা পেতে গেলে যেতে হবে জেলা হাসপাতালে।
দাঁতের সমস্যা নিয়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন স্থানীয় শুকনিবাসা গ্রামের যুবক দুলাল সোরেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, “দাঁতের যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তারবাবু জানালেন দাঁতটা তুলতে হবে। কিন্তু এখানে দাঁত তোলার কোনও ব্যবস্থা নেই। যেতে হবে জেলা সদরে।” একই অভিজ্ঞতা হয়েছে হুড়ার বাসিন্দা মৃন্ময় কুণ্ডুর। তাঁর কথায়, “দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ছিল। ডাক্তারবাবু জানালেন দাঁত পরিস্কার করাতে হবে। কিন্তু এখানে হবে না। সদর হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।” কাশীপুর ব্লকের ডমনকিয়ারি গ্রামের বাসিন্দা দেবচন্দ্র সোরেনও দাঁতের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তিনি বলেন, “এখানে চিকিৎসা না পেয়ে পুরুলিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে দাঁত তোলার আগে রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলেছে। কিন্তু চাষবাস ফেলে বার বার পুরুলিয়া শহরে যাওয়াও তো সমস্যার। ওষুধ খেয়ে যন্ত্রণা ঠেকিয়ে রাখতে হয়।”

হুড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দন্ত বিভাগ।—নিজস্ব চিত্র।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার দন্ত বিভাগে শুধু পুরনো একটি হাইড্রোলিক চেয়ার রয়েছে। যা ভাল করে কাজ করে না। দাঁত তোলার কোনও যন্ত্রপাতি নেই। তাই যাঁদের ওষুধে কাজ হয়, চিকিৎসক তাঁদের ওষুধ লিখে দেন। দাঁত তোলা বা এ ধরনের পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। দন্ত বিভাগের চিকিৎসক ঊষাপতি রায় বলেন, “পরিকাঠামো যা রয়েছে তা দিয়েই আমরা যথাসাধ্য পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” হুড়ার বিএমওএইচ দেবশঙ্কর হাঁসদা বলেন, “দন্ত বিভাগে জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।”
জেলায় দন্ত চিকিৎসার হালও হুড়ার ওই বর্হিবিভাগের মতোই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে পুরুলিয়ায় ১২ জন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তার মধ্যে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে রয়েছেন চার জন। বকি আট জন রয়েছেন রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। জেলায় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ২০। ফলে এই মুহূর্তে জেলার বেশির ভাগ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। হুড়া চিকিৎসা করাতে আসা দন্ত রোগীদের আক্ষেপ, এই অবস্থার মধ্যে যদিও বা সেখানে একজন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তিনিও রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা করতে পারছেন না।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “হুড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যার কথা আমি জানি। সেখানে দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেওয়ার জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.