খয়রাশোলে ভবানীগঞ্জে ছড়িয়ে পড়া পেটের রোগের প্রকোপ কমেনি। শুক্রবারও নাকড়াকোন্দা ব্লক হাসপাতালে আরও ৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এ দিন সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক না থাকায় সমস্যায় পড়েন রোগীরা। ছিলেন না বিএমওএইচ হিসেবে ওই হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা খয়রাশোলের পাঁচড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক স্বরূপ মাড্ডিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইলামবাজার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে (বিএমওএইচ) নাকড়াকোন্দায় পাঠানো হয়।
কিন্তু বিএমওএইচ স্বরূপ মাড্ডি এ দিন সকালে হাসপাতালে আসেননি কেন? ব্লক হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পরিষেবা নিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষের সঙ্গে স্বরূপবাবু-সহ হাসপাতালের কিছু কর্মীর বচসা হয়। তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ না হলেও তাঁকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে লিখিতভাবে জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিককে জানান স্বরূপবাবু। জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। সেই আবসাদ থেকেই এ দিন সকালে ওই চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি। পরে বুঝিয়ে ওই তাঁকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টিও জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে।” |
নাকড়াকোন্দা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
তবে এই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। তার অন্যতম প্রধান কারণ, ৩০ শয্যা বিশিষ্ট ওই হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর আভাব। বিএমওএইচ-সহ মোট ৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা। থাকার কথা স্কুল হেলথের(এসএইচএমও) এক চিকিৎসকেরও। এই মুহূর্তে স্কুল হেলথের এক চিকিৎসক ছাড়া হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক নেই। বিএমওএইচ হিসেবে যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনিও খয়রাশোলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পাঁচড়া-র দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং পাঁচড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ফাঁকা রেখেই তাঁকে ব্লক হাসপাতলের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। ৮ জনের জায়গায় ৬ জন নার্স নাকাড়াকোন্দায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ছুটিতে। অন্য জায়গা থেকে চিকিৎসক এনে সামাল দেওার চেষ্টা করা হলেও সমস্যা থেকেই গিয়েছে।
এই কারণে হাসপাতালে পরিষেবা নিয়ে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ উঠে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার থেকে ভবানীগঞ্জের এত সংখ্যক মানুষ পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি একজন চিকিৎসক ওই গ্রামে থাকুক। একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প হোক। কিন্তু চিকিৎসকের আভাবে সেটা করা সম্ভব হয়নি। এই সব দাবি-সহ বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্সে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়।
কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন? এলাকায় প্রায় ২৫০০ জনের বাস। মোট ৪টি গভীর নলকূপ রয়েছে। পানীয় জলের জন্য মাত্র দু’টি নলকূপ ব্যবহার করেন বাসিন্দারা। পানীয় জল নলকূপ থেকে সংগ্রহ করলেও বাসন মাজা, কাপড় কাচা, স্নান— সব কাজের জন্য পুকুরের জল ব্যবহার করেন তাঁরা। আবার পঞ্চায়েতের হিসেবে মাত্র ৬-৮ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে। নানা কারণে পুকুরের জল দূষিত হওয়ায় এই সমস্যা। স্বাস্থ্যকর্মীরা এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেও, সেটা ঠিক মতো পালন না করা হচ্ছে না বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রকোপ কমতে সময় লাগবে বলে জানান, জেলা দফতরের এক কর্তা।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “উচ্চশিক্ষার জন্য ওই হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিসককে ছাড়ার ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। এই মুহূর্তে জেলায় বহু চিকিৎসকের পদ শূন্য। বর্তমানে সমস্যা মেটাতে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের আর এক চিকিৎসককেও খয়রাশোলে পাঠানো হয়েছে। কাজে যোগ দিয়েছেন বিএমওএইচ স্বরূপ মাড্ডিও।” বিষয়টি গুরুত্ব বুঝে এ দিন স্বরূপবাবুর সঙ্গে ওই হাসপাতালে আসেন ডেপুটি সিএমওএইচ(২) শুভব্রত ঘোষ, এবং এসিএমওএইচ (সিউড়ি সদর) অনিমেষ দত্ত। |