প্রসবের সময় শিশুর ধড়-মুণ্ড
আলাদা, বিক্ষোভ হাসপাতালে
প্রসব করানোর সময় ধড় থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে শিশুর মুণ্ড।
শুক্রবার উলুবেড়িয়া হাসপাতালের লেবার-রুমে এই দৃশ্য দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ দেখালেন প্রসূতির পরিবারের লোকজন। থানাতেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
যদিও চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রসবের সময় কোনও ভাবে মায়ের দেহের মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু হলে যন্ত্র দিয়ে শিশুর মাথা কেটে বার করা হয়। এটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এতে আলাদা করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর দেহ বার করার ঝামেলা এড়ানো যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ডি-ক্যাপিটেশন।’ যদিও এই পদ্ধতি এখন খুব একটা প্রচলিত নয়।
শুক্রবার সকালে ওই হাসপাতালে যে চিকিৎসক প্রসব করাচ্ছিলেন সেই মহিলা ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ আশিস ঘোষ বলেন, “শিশুটি মায়ের দেহের ভিতরেই মারা গিয়েছিল। তাকে বার করতে গিয়ে এই কাণ্ড।” হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত কাঁড়ারের কথায়, “ঠিক কী হয়েছিল তা জানতে তদন্ত কমিটি গড়ার সুপারিশ করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। শিশুটির দেহের ময়না-তদন্ত করানো হবে।” জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি ঠিকঠাক তত্ত্বাবধান করতে না পারার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং কতর্ব্যরত নার্সকে শো-কজ করা হয়েছে। রাজ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তদন্ত শেষ না হলে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।”
কী হয়েছিল এ দিন?
উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরের দত্তপাড়ার বাসিন্দা সোমা মাজি নামে ওই প্রসূতিকে সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওয়ার্ডে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মা বন্দনা মাজি এবং খুড়শাশুড়ি নমিতা মণ্ডল। ভর্তি হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই সোমাদেবীর প্রসব-যন্ত্রণা ওঠে। তাঁকে লেবার-রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমাদেবীর মা বন্দনাদেবীর কথায়, “মেয়েকে লেবার-রুমে নিয়ে যাওয়ার পরে নার্সরা এসে জানান ও মৃত সন্তান প্রসব করেছে। লেবার-রুমে গিয়ে দেখি, বাচ্চার মাথা টেবিলে রাখা। সেখানে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মেয়ের শরীর থেকে বাচ্চার একটি হাত বেরিয়ে আছে।” এই ঘটনার পরেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন প্রসূতির বাড়ির লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, বাচ্চা সুস্থ এবং জীবিতই ছিল। প্রসব করানোর সময়ে চিকিৎসকের গাফিলতিতে ধড়-মুণ্ড আলাদা হয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ আসে। হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সোমাদেবীর স্বামী হারাধন মাঝি। থানাতেও ডায়েরি করেন। ‘ফরসেপ ডেলিভারি’র সময় কি এই ভাবে শিশুর ধড়-মুণ্ড আলাদা হওয়া সম্ভব?
এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তরুণকান্তি ঘোষ জানান, অনেক সময় প্রসবের সময় শিশুর কোমরের নীচের অংশ আগে বার হয় বা শরীর বেঁকে গিয়ে তেরচা হয়ে হাত দু’টি বেরিয়ে আসে। এই রকম অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। তখন ‘এমব্রায়োটমি সিজার’ যন্ত্র ঢুকিয়ে মায়ের শরীরের মধ্যেই শিশুর মুণ্ড কেটে জরায়ু দিয়ে বার করা হয়। তার পর বার করা হয় দেহ। এতে আর আলাদা করে মায়ের পেট কাটতে হয় না। তাঁর কথায়, “দেখতে হবে, উলুবেড়িয়া হাসপাতালের ক্ষেত্রে এই রকম হয়েছিল কি না।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীরও জানান, তাঁদের ছাত্রজীবনে এ রকম প্রসব করিয়েছেন। তাঁর কথায়, “ওই পদ্ধতি আজকালকার দিনে আর চলে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.