রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের শিবিরে যোগদানের যে ঢেউ চলছে, তার ধাক্কা লাগল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকেও! দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক মইনুদ্দিন শামস দল ছাড়ার তৎপরতা শুরু করেছেন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে। তৃণমূল সূত্রের খবর, শাসক দলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগও হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্ত এখনও ঘোষিত না-হলেও মইনুদ্দিনের মনোভাবের আঁচ পেয়ে তাঁকে বোঝাতে আসরে নেমেছে ফ ব নেতৃত্ব। তবে এখনও পর্যন্ত তাতে ইতিবাচক ফল মেলেনি। কলকাতায় ফ ব-র যে কোনও কর্মসূচিতে লোক আনতে মইনুদ্দিনই যে হেতু ভরসা, তাই জেলা সম্পাদকের এ হেন তৎপরতায় বিড়ম্বনায় পড়েছে এই বাম শরিক।
ফ ব সূত্রের খবর, নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা এবং রাজনৈতিক আকাঙ্খাই মইনুদ্দিনদের দলত্যাগের উদ্যোগের নেপথ্যে। প্রাক্তন মন্ত্রী কলিমুদ্দিন শামসের ছেলে মইনুদ্দিন অতীতে কবিতীর্থ এবং সম্প্রতি কলকাতা বন্দর থেকে ফ ব-র টিকিটে বিধানসভা ভোটে বেশ ক’বার লড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর ভাই নিজামুদ্দিন অবশ্য কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। কয়েক মাস আগে কলিমুদ্দিনের মৃত্যুর পরে অন্ত্যেষ্টির অধিকার নিয়ে তাঁর পরিবারের মধ্যে বিবাদ বেধেছিল। যার মীমাংসা হয়েছিল তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের হস্তক্ষেপে। তখন থেকেই তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শামস ভাইদের সম্পর্ক ভাল। ইতিমধ্যে নিজামের পাশের ওয়ার্ডে ফ ব-রই কাউন্সিলর শামিমা রেহান খানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়িয়েছিলেন তাঁরা। আবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে তাঁর অন্তর্ভুক্তির দাবি বিবেচনা করা হবে বলে যে আশ্বাস মইনুদ্দিনকে দিয়েছিলেন ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্ব, তা-ও বাস্তবায়িত হওয়ার লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতেই মইনুদ্দিন দলে থাকতে চাইছেন না বলে ফ ব-র একটি সূত্রের ব্যাখ্যা।
একবালপুরে তাঁদের বাড়িতে কয়েক দিন ধরেই অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করছেন মইনুদ্দিন। তিনি দল ছাড়তে পা বাড়িয়েছেন? শুক্রবার স্বয়ং মইনুদ্দিনের মন্তব্য, “এখনও দলেই আছি। তবে বাবা একটা কথা বলতেন, যা রটে, তার কিছু তো বটে!” তাঁকে নিরস্ত করার জন্য এ দিনই বাড়িতে দূত পাঠিয়েছিলেন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। দলের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “ওঁর কিছু ক্ষোভ আছে। বোঝানোর চেষ্টা করছি। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় দলের রাজ্য দফতরে উনি আলোচনা করতে আসবেন।” মইনুদ্দিন অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি আদৌ আলোচনা করতে যাবেন কি না, ঠিক নেই! তাঁর বাড়ির নিচের তলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামিমার যে দফতর ছিল, তা-ও এ দিনই গোটাতে বলে দিয়েছেন। ফলে, ঘটনাপ্রবাহের ইঙ্গিত অন্য রকম!
তৃণমূলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার কথায়, “বিভিন্ন দল থেকেই অনেকে আসছেন। শামসদের নিয়ে একটা প্রক্রিয়া চলছে কিছু দিন ধরে।” একটি সূত্রের ইঙ্গিত, মইনুদ্দিন কাউন্সিলর ভাইকেও সঙ্গে নিয়ে গেলে সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে তাঁকে পুরসভার মেয়র পারিষদে জায়গা দেওয়া হতে পারে বলে তিনি আশ্বাস পেয়েছেন। শেষ চেষ্টা চালালেও ফ ব মানসিক ভাবে বিচ্ছেদের খবরের জন্য প্রস্তুত। দলের একাংশের বক্তব্য, ৭৭ ও ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ ঘিরে অশান্তি বেধেছিল দলেই। সঙ্গে আছে কিছু ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ। ফ ব-র রাজ্য কমিটির এক সদস্যের দাবি, “যে হেতু কারণগুলো এই রকম, মনে হয় না দল ছাড়লে বেশি কাউকে ওঁরা সঙ্গে পাবেন।” |