জ্যোতি আলুর দাম ১৪ টাকা কিলোয় বেঁধে দিল রাজ্য সরকার। এর পরে ব্যবসায়ীরা জ্যোতি আলুর দাম বেশি নিলে পুলিশ বা দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত ‘টাস্ক ফোর্স’ ব্যবস্থা নেবে বলে শুক্রবার জানান রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তা ছাড়া, ভিন্-রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
মন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের হিমঘরগুলিতে যে পরিমাণ আলু এখনও মজুত আছে, তাতে দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু আলুর দাম বাড়ানোয় মজুতদারদের ভূমিকা রয়েছে। তাই দাম বেঁধে দেওয়া হল। এর অন্যথা হলে পুলিশ বা টাস্ক ফোর্স ব্যবস্থা নেবে।”
মহাকরণে এ দিন হিমঘর মালিক, আলু ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, গত মরসুমে এ রাজ্যে ৯০ লক্ষ টন আলু উৎপন্ন হয়েছিল। এখনও রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ১৮-১৯ লক্ষ টন আলু মজুত আছে। এই পরিস্থিতিতে আলুর দাম বাড়ার কথা নয়। এ দিন হুগলির তারকেশ্বরে ৫০ কিলোগ্রাম জোতি আলু ৬৫০ টাকায় বেচেছেন চাষিরা। কিন্তু খোলা বাজারে পৌঁছতে পৌঁছতে সেই আলুর দাম ১৪ টাকা কিলো হয়ে গিয়েছে। কৃষি বিপণন দফতরের একাধিক কর্তার ধারণা, শীত পড়ার আগে ফের আলুর দাম বাড়ানোর একটা চেষ্টা হতে পারে। আলু ব্যবসায়ীদের তরফে ‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র কর্তা স্বপন সামন্ত বলেন, “এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। রাজ্য সরকার ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।” কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা বলেন, “এ রাজ্যে চন্দ্রমুখী আলুর তুলনায় জ্যোতি আলুর বিক্রি বেশি। তাই ওই আলুর দামটাই বেঁধে দেওয়া হল।”
দাম তো বেঁধে দেওয়া হল, কিন্তু তা মানা হচ্ছে কি না, দেখা হবে কী করেইতিমধ্যেই সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল থেকে। পুলিশেরও একটা বড় অংশ পড়েছে ধন্দে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “প্রথম কথা, নজরদারির জন্য পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীর অভাব। তা বাদ দিলেও কোন বাজারে, কোন ব্যবসায়ী আলুর দাম বেশি নিচ্ছেননির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ না পেলে আদৌ কি ধরা সম্ভব পুলিশের পক্ষে?”
রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ-এর এক কর্তা আবার অন্য সমস্যার কথা তুলেছেন। তিনি বলেন, “বড় মজুতদারদের কালোবাজারি রুখতে আইন রয়েছে। খুচরো ব্যবসায়ীরা বেশি দাম নিলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ায় সমস্যা রয়েছে। কারণ, তাঁদের কাছে বেশি আলু মজুত থাকে না। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু মজুত না রাখলে ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরাসরি কালোবাজারির আইন প্রয়োগে অসুবিধা হতে পারে।”
তা হলে রাজ্য সরকার নজরদারি করবে কী করে? ব্যবস্থাই বা কী ভাবে নেওয়া হবে?
সরাসরি জবাব না দিয়ে কৃষি বিপণনমন্ত্রী বলেন, “খুচরো ব্যবসায়ীদের উপরে কালোবাজারির অভিযোগ আনার আইনি জটিলতা নিয়ে এনফোর্সমেন্ট দফতরের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। এই ধরনের কোনও প্রশ্ন থাকলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।” |