আগামী ১ নভেম্বর থেকেই আধার নম্বরের ভিত্তিতে রান্নার গ্যাসে সরাসরি ভর্তুকি চালু হওয়ার কথা কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে। কিন্তু তার সাত দিন আগে পর্যন্তও গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে ওই নম্বর জমা দিয়েছেন মাত্র ৩% গ্রাহক!
গ্রাহকদের মধ্যে শতকরা কত জনের কাছে আধার কার্ড বা নম্বর পৌঁছেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যাঁরা তা হাতে পেয়েছেন, তাদের মধ্যেই বা কত জন গ্যাস এজেন্সিগুলিকে আধার সংক্রান্ত তথ্য জমা দিচ্ছেন, তা-ও অন্ধকারে। কিছু ক্ষেত্রে আবার আধার নম্বর গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে তুলতে (আপডেট করতে) মাসের পর মাস সময় লাগিয়ে দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। ফলে সব মিলিয়ে আর সাত দিনের মধ্যে আধার-ব্যবস্থা কী ভাবে চালু হবে, তার উত্তর নেই কারও কাছেই।
তার উপর সম্প্রতি এক অন্তর্বর্তী রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পাওয়ার মতো সরকারি সুবিধা পেতে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক হতে পারে না। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার এক কর্তার মতে, শীর্ষ আদালতের ওই রায় যে অন্তর্বর্তী নয়, তা বুঝতে পারেননি অনেক গ্রাহকই। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, আধার কার্ড জমা দেওয়ার প্রয়োজন আর নেই। কিন্তু আসলে মামলা এখনও চলছে। পরবর্তী শুনানি ২৯ অক্টোবর। তাই আধার কার্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান তাদের চূড়ান্ত রায়ের আগে বোঝা সম্ভব নয়।
তেল সংস্থা সূত্রে খবর, গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকির জন্য আধার নম্বরের প্রয়োজনীয়তার প্রচার চালাতে গিয়ে সম্প্রতি হাওড়ার দাশনগরে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন এক ডিস্ট্রিবিউটরের কর্মীরা। জনতার দাবি ছিল, এই প্রচার বেআইনি। যদিও ইন্ডিয়ান অয়েলের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর তথা পূর্বাঞ্চলে তেল সংস্থাগুলির কো-অর্ডিনেটর ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “এই প্রকল্প চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তেল মন্ত্রককে যে নির্দেশ দিয়েছিল, সেই নির্দেশিকা মেনেই কাজ করছি। তার কোনও পরিবর্তন এখনও হয়নি।” অবশ্য আদালতের নির্দেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য তিনি করেননি।
আধার নিয়ে মানুষের সচেতনতা হয়তো এখনও তৈরি হয়নি। অপেক্ষা রয়েছে শীর্ষ আদালতের রায়েরও। কিন্তু অনেকেরই মতে, সব কিছুকে ছাপিয়ে সামনে চলে আসছে আধার কার্ড বা নম্বর দেওয়ার বিষয়ে সরকারি উদাসীনতা। প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভাব। এমনকী তা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে প্রকল্প রূপায়ণের সদিচ্ছা নিয়েই।
এই তিন জেলায় এমন অনেকেই আছেন, আধারের জন্য যাঁদের ছবি তোলার কাজ সারা হয়ে গিয়েছে এক বছর আগেই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কার্ড তাঁরা হাতে পাননি। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরাসরি ওয়েবসাইট থেকে আধার নম্বর সংগ্রহের কথা বলছে ঠিকই। কিন্তু কম্পিউটার, নেট সংযোগ এবং এই দু’টি জিনিস ব্যবহারের দক্ষতা অনেকেরই নেই। ফলে তাঁরা কী করবেন, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
অত্যন্ত ঢিমেতালে চলছে নতুন আধার কার্ডের কাজও। এমনিতে কার্ড তৈরির জন্য পুরসভা (কলকাতা ও হাওড়া) ও স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের শিবির তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় জনগণনা দফতরের। কিন্তু ওই শিবিরের সংখ্যা এখনও এতই কম যে, অনেকের তথ্যই সংগ্রহ করা যায়নি। অনেক জায়গায় হয়নি একটি শিবিরও।
জনগণনা দফতরের বক্তব্য, শিবির সংক্রান্ত তথ্য পুরসভা, বরো বা ওয়ার্ড অফিসেই মেলার কথা। জেলার ক্ষেত্রে তা পাওয়া উচিত বিডিও অফিস কিংবা জেলাশাসকের দফতরে।
কিন্তু অভিযোগ, তথ্য ঠিকমতো মিলছে না।
এই পরিস্থিতিতে অন্তত ওই তিন জেলায় আধার কার্ডের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে মাস খানেক আগে রাজ্য, কেন্দ্র ও তেল সংস্থাগুলির বৈঠকে প্রস্তাব উঠেছিল ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছেই অস্থায়ী শিবির খোলার। কিন্তু তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও তেল মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন আসেনি।
উল্লেখ্য, আধারকে ভিত্তি করে রান্নার গ্যাসে সরাসরি ভর্তুকির পদ্ধতি ইতিমধ্যেই পুরোদস্তুর চালু হয়ে গিয়েছে দেশের বেশ কিছু জেলায়। ১ নভেম্বর থেকে তা চালু হওয়ার কথা রাজ্যের ওই তিন জেলাতেও। ফলে তখন ভর্তুকির কোটার (গৃহস্থালীতে ব্যবহারের জন্য প্রতি আর্থিক বছরে ন’টি পর্যন্ত) গ্যাসও প্রথমে বাজার দরে কেনার জন্যই বুক করতে হবে। তার পর এলপিজি-সিলিন্ডার কিনলে এবং ব্যাঙ্কের কাছে আধার নম্বর দেওয়া থাকলে, ভর্তুকির টাকা সরাসরি পৌঁছে যাবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টেই। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম তিন মাস আধার নম্বর দিতে না-পারলেও গ্যাসে ভর্তুকি পাওয়া যাবে। তার পর তা আর মিলবে না। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে ১ নভেম্বরের আগে আধার-সমস্যা কী ভাবে মিটবে, উত্তর নেই তারই।
|