গ্যাস গ্রাহকদের আধার-শিবির ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে
ব কিছু ঠিকঠাক চললে শীঘ্রই কলকাতায় রান্নার গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরদের দোকানে শুধুমাত্র গ্রাহকদের জন্য আধার পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহের শিবির চালু হবে। বুধবার মহাকরণে রাজ্য সরকার, ব্যাঙ্ক, তেল সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জনগণনা দফতরের কর্তারা।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু হাওড়া ও কোচবিহারে আধার নম্বর তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়ে গেলেও কলকাতা যথেষ্টই পিছিয়ে। কলকাতার মাত্র ৫০ শতাংশের কিছু বেশি নাগরিক হয় আধার কার্ড পেয়েছেন বা তাঁদের আধার নম্বর তৈরি হয়েছে। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সরাসরি পেতে হলে গ্রাহকের আধার নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। তাঁকে সেই নম্বর ডিস্ট্রিবিউটর ও ব্যাঙ্কের কাছে জানাতে হবে। বাজার দরে গ্যাস কেনার পরে সেই নম্বরের ভিত্তিতে প্রাপ্য ভর্তুকির টাকা পৌঁছে যাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
এ রাজ্যের নাগরিকদের আধারে নাম নথিভুক্তি ও বায়েমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব জনগণনা দফতরের। সেই তথ্য তারপরে তারা আধার পরিচয়পত্রের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (ইউআইডিএআই) কাছে। কিন্তু অভিযোগ, নাম নথিভুক্তি ও ব্যায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের শিবির প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম হওয়ার জন্যই কলকাতায় এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, আধার নম্বর না-থাকলে গ্যাসের ভর্তুকি কী ভাবে মিলবে? সব সিলিন্ডারই তখন গ্রাহককে বাজার দরে কিনতে হবে। যদিও একটি অর্থবর্ষে গ্রাহকের ন’টি ভর্তুকির সিলিন্ডার প্রাপ্য।
গত সপ্তাহে এ নিয়ে এক দফা বৈঠকের পরে এ দিন ফের বৈঠক বসে মহাকরণ। রাজ্যের পক্ষে মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, খাদ্য সচিব অনিল বর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরে স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, এখনও পর্যন্ত ওই তিন জেলায় ১ নভেম্বর থেকেই এই পরিষেবা চালু হওয়ার কথা।
সরকারি সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছে আধার নম্বরের জন্য কলকাতার যে-সব রান্নার গ্যাস গ্রাহকের নাম নথিভুক্তি বা বায়োমেট্রিক তথ্য এখনও সংগৃহীত হয়নি, আপাতত তাঁদের জন্যই তিনটি তেল সংস্থার (ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম) ৮০ জন ডিস্ট্রিবিউটরের দোকানে জায়গা পেলে শিবির খুলবে জনগণনা দফতর। এ জন্য শীঘ্রই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও তেল মন্ত্রকের ছাড়পত্র মিলবে বলে তাদের আশা।
পরবর্তী পর্যায়ে ১ ডিসেম্বর থেকে হুগলি এবং ১ জানুয়ারি থেকে মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহককে ভর্তুকির টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া চালু হবে। অবশ্য সব ক্ষেত্রেই দেশের অন্যান্য জেলার মতো তিন মাসের একটা বাড়তি সময়সীমা পাবেন এখানকার গ্রাহকেরাও। যেমন কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে ১ নভেম্বরের পর থেকে তিন মাস পর্যন্ত আধার নম্বর না-পেলেও এখনকার মতোই ভর্তুকির দামে ন’টি সিলিন্ডার কিনতে পারবেন গ্রাহক। কিন্তু তারপর শুধুমাত্র আধার নম্বরে ভিত্তিতেই সরাসরি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই ভর্তুকির টাকা পাবেন। তখন আধার নম্বর না- থাকলে বাজার দরেই সিলিন্ডার কিনতে হবে।
তেল সংস্থাগুলির বক্তব্য, শিবিরের সংখ্যা বাড়লে বাড়তি সময়ের মধ্যে প্রায় সব গ্রাহকেরই আধার নম্বর তৈরি হয়ে যাবে। যদিও এই পরিষেবা চালুর জন্য কেন্দ্রের সময়সীমা নিয়ে রাজ্যের কিছুটা আপত্তি রয়েছে। রাজ্য চায়, আধার পরিচয়পত্রের কাজের আরও কিছুটা অগ্রগতির পরে কলকাতা-সহ তিন জেলায় এই পরিষেবা চালু হোক। কেন্দ্রকে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাবে রাজ্য।
আধার বৃত্তান্ত


১২ সংখ্যার একটি পরিচয়পত্র। তবে এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।


আধার কার্ড জালিয়াতি করা সম্ভব নয়। কারণ এটি কার্যত একটি নম্বর। এই নম্বরই সারা জীবন ধরে এক জনের পরিচয় হিসেবে গণ্য হবে। নম্বর দিয়েই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য মিলবে।


পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেলেই এই কার্ড করা যাবে।


কার্ডে তা উল্লেখ না থাকলেও তথ্য ভাণ্ডারে তা রাখা থাকবে।

পরিচয় যাচাই করার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাহায্যে প্রয়োজনীয় সব তথ্য বার করতে পারবেন।


পড়ুয়াদের সরকারি বৃত্তি পেতে আধার কার্ড বাধতামূলক। রান্নার গ্যাস, রেশন ব্যবস্থা-সহ সরকারি সুযোগ-সুবিধার ভর্তুকির টাকা সরাসরি আধার নম্বরের মাধ্যমে সুবিধাভোগীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আধার কার্ডের নম্বর নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হতে চলেছে।


বিভিন্ন পরিষেবার ভর্তুকি এই কার্ডের নম্বরের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাঙ্কে পাঠানো হলে বহু ভুয়ো নাম বাদ যাবে। তাই এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে, জালিয়াতি বন্ধ হবে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এই কার্ড দেশের দারিদ্র দূরীকরণে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে বলে বিশ্বব্যাঙ্ক মনে করে।

পুর এলাকায় এই কাজ করছে পুরসভা। কলকাতা পুরসভার বরো অফিসে গেলে এই ব্যাপারে জানা যাবে। অন্য পুরসভাগুলি থেকেও এই খবর মিলবে। পঞ্চায়েত এলাকায় এই তথ্য মিলবে বিডিও-র কাছে।


uidai.gov.in-এ লগ ইন করলে যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। আধার কার্ডের নম্বর যেমন জানা যাবে, তেমনই প্রয়োজনে ই-আধার কার্ড বার করে নেওয়া যাবে।

পুরকর্মীরা কিংবা বিডিও অফিসের কর্মীরা যাঁদের নাম জনগণনার (পপুলেশন) রেজিস্টারে তুলেছেন, একমাত্র তাঁদেরই আধার কার্ডের ছবি তোলার জন্য ডাকা হবে। যাঁদের নাম ওই রেজিস্টারে তোলা হয়নি, তাঁরা ডাক পাবেন না। এখন ২০১০ সালের ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের ভিত্তিতে আধার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। তাই ওই রেজিস্টারে নাম থাকা বাধ্যতামূলক।


নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলর কিংবা বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি ফর্ম ভর্তি করে নাম তুলতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ের যখন আধার কার্ড তৈরি হবে, তখন ডাক পাবেন ওই সব নাগরিক।


তাঁকে নতুন ঠিকানায় ওয়ার্ড অফিস, বরো অফিস কিংবা বিডিও অফিসে গিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে।


ধীরে ধীরে দেশের প্রতিটি প্রান্তেই আধার কার্ড তৈরি এবং এ ব্যাপারে যোগাযোগের জন্য অফিস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যদিও এখন তা তৈরি করা যায়নি।

(প্রতিবেদন: অশোক সেনগুপ্ত ও কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী)
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.