মূর্তি-বেদির ভিড়ে গতিহারা রাজপথ
রাজপথ হোক বা পাড়ার গলি— কোথাও দাঁড়িয়ে রাজীব, ইন্দিরা। কোথাও আবার নেতাজি, ক্ষুদিরাম-সহ অন্যান্য নেতা-মনীষী। কোথাও আবার ফুটপাথের উপরেই শহিদ বেদি।
রাস্তার মাঝে কিছুটা জায়গা জুড়ে থাকা এই সমস্ত নেতা, মনীষী বা বেদিকে পাশ কাটিয়ে চলতে গিয়ে স্বভাবতই শ্লথ হচ্ছে গাড়ির গতি। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। ফুটপাথের উপরে বেদি থাকায় বহু ক্ষেত্রেই পথচারীদের রাস্তায় নেমে যেতে হচ্ছে।
কালের নিয়মেই কলকাতায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। যখন যিনি রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছেন, তিনিই শহরকে গতিশীল করতে চেয়েছেন। উড়ালপুল থেকে রাস্তার সম্প্রসারণ, নানা কাজ হয়েছে। কিন্তু রাস্তার মাঝে কিংবা ফুটপাথের উপরে থাকা মূর্তি ও বেদিগুলি সম্পর্কে বিকল্প ব্যবস্থার কথা কেউই ভাবেননি।

গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ
আবার রাস্তা কিংবা ফুটপাথে এ সব মূর্তি ও বেদি বসানোর অনুমতি কে দিল, কবে দিল, তা নিয়েও পুরসভা, পুলিশ বা প্রশাসন কারও কাছেই কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় না। যেটুকু জানা যায়, তার সারাংশ করলে দাঁড়ায়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রদর্শন কিংবা স্থানীয় স্তরে ‘সস্তার’ রাজনীতিতে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতেই স্থানীয় নেতারা এই সব মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তৈরি হয়েছে রাজনীতির লড়াইয়ে প্রাণ হারানো অজানা-অচেনা নেতা, কর্মীর বেদিও।
শহরের এই সমস্ত মূর্তি বা বেদি পথের গতিকে শুধু শ্লথই করেনি, দিনের পর দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নোংরায় ভরে উঠেছে। সেখানেই প্রশ্ন, যখন এই মূর্তিগুলির উদ্বোধন করা হয়, তখন ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু তার পরে কেউ খোঁজ রাখে না। তবে বছরে দু’বার, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনে মালা পরানো, সঙ্গে ছোট্ট অনুষ্ঠানও হয়। সেই মালাই সারা বছরের সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রমাণ বয়ে চলে। শহরবাসীর প্রশ্ন, রাস্তার ধারে বা মাঝে একটি মূর্তি বা বেদি বানিয়েই কি কারও প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন সম্ভব?
এ বার দেখা যাক, শহরের কয়েকটি মূর্তি, বেদির অবস্থা।
নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট ও গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে রয়েছে রাজীব গাঁধীর একটি আবক্ষ মূর্তি। তীব্র গতিতে আসা গাড়ি এই মূর্তির সামনে এসেই গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছে। তালতলা বাজারের সামনে তীব্র যানজট। মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ইন্দিরা গাঁধীর মূর্তি। সেখানে এক ট্রাফিককর্মী বললেন, “দেখছেন কী অবস্থা! রাস্তার মাঝের এই মূর্তির জন্য গাড়ি ঠিকমতো যেতে পারছে না।”

তপসিয়া
তপসিয়া রোডে হিন্দু কবরস্থানের দেওয়াল লাগোয়া একটি কালো শহিদ বেদি রয়েছে। তার ফলক থেকে জানা গেল, দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটি ওই বেদি তৈরি করেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাস্তা চওড়া করার জন্য ওই বেদি সরানো নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ বেধেছিল। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে মূর্তি বা বেদিকে কেন্দ্র তৈরি পার্কগুলি। যেমন, ঢাকুরিয়ায় দক্ষিণাপণের সামনেই একটি বড় বাগান তৈরি করা হয়েছে। তার এক দিকে রাজীব, অন্য দিকে ইন্দিরার মূর্তি। মাঝে রয়েছে ট্রাফিক বুথ। এক পথচারীর কথায়, “এমনিতেই রাস্তায় হাঁটার জায়গা নেই। তার উপরে রাস্তার মাঝে জায়গা দখল করে রয়েছে এই পার্ক।” উত্তর কলকাতার গিরিশ অ্যাভিনিউ, বিধান সরণি-সহ বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাথেও মূর্তি-শহিদ বেদির রমরমা।
এই অবস্থায় শহরবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার ও পুরসভার মাথায় কি এই মূর্তি বা বেদি সম্পর্কে কোনও বিকল্প ভাবনার কথা আসতে পারে না? পারে, সে রকম ভাবনার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবছেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজারহাটে একটি মূর্তির পার্ক তৈরির কথা ভাবছে সরকার। যাতে সেখানে শহরের সব মূর্তি ও বেদিগুলিকে যথাযথ সম্মানে রাখা যায়। তাতে শহরের রাস্তা, ফুটপাথ প্রয়োজন মতো চওড়া করা বা অন্য কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
হাজরা মোড় তালতলা
প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী, তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই মূর্তি বসানোর জন্য অনুমতি নেওয়া হত না। তবে এগুলির সঙ্গে আত্মসম্মান জড়িয়ে থাকে বলে তা সরানোও সম্ভব হয় না। রাজ্য সরকার সেগুলিকে এক জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করলে তা হবে খুবই ভাল উদ্যোগ।”
রাস্তার মাঝে থাকা কোনও মূর্তি যদি অসুবিধার কারণ হয়, তবে তা সরিয়ে দেওয়ায় আপত্তি নেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের। তাঁর দাবি, “ইন্দিরা ও রাজীব গাঁধীর অধিকাংশ মূর্তি আইল্যান্ডে আছে। সেগুলিতে অসুবিধা হচ্ছে না। তাই ওই সব মূর্তি যদি সরকার সরাতে চায়, তা হলে অবশ্যই বাধা দেওয়া হবে।” অন্য দিকে, প্রাক্তন মেয়র, সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্য বলেন, “অনুমতি ছাড়াই সব তৈরি হয়েছে। তবে শুধু মূর্তি আর বেদি সরালে হবে না। সব ধর্মীয় স্থান, পার্টি অফিসও একই সঙ্গে সরাতে হবে। তা হলে অবশ্যই এই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানাব।”

ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.