জমিজট-সহ নানা সমস্যায় কলকাতায় মেট্রোর চার-চারটি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার প্রেক্ষিতে দু’মাস আগে রেল বোর্ড জানিয়েছিল, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকাজই আপাতত প্রাধান্য পাবে। চলতি সপ্তাহে সে পথেই এগোল বোর্ড। জানিয়ে দিল, ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পে গতি আনতে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল) দায়িত্বের বেশির ভাগটাই সামলাবেন রেল কর্তৃপক্ষই।
রেল বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজে কয়েকটি প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে সমস্যা হচ্ছিল। সেটা কাটিয়ে উঠতেই এই সিদ্ধান্ত। কেএমআরসি-র বেশির ভাগ দায়িত্ব রেলের
দক্ষ অফিসাররাই পালন করবেন। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প এ বার থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করবে রেল বোর্ড।
যৌথ উদ্যোগে ওই প্রকল্প শুরু করেছিল রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। পরবর্তীকালে রাজ্য নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। প্রকল্পের বেশির ভাগ শেয়ার (৭৪ শতাংশ) এখন রেলেরই হাতে।
রেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে খুশি কলকাতা মেট্রো-সহ দু’টি জোনাল রেলের আধিকারিকেরা। খুশি প্রাক্তন রেলকর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, “এ বার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে গতি ফিরবে।” রেল প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরীও বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব ওই প্রকল্পের কাজে গতি আনতে। সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “মেট্রোর এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এবং রূপকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা চাইব দ্রুত কাজ হোক। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি না করে আমরা চাই মেট্রো যেন আরও বেশি করে মানুষের কাজে লাগে।”
বুধবার ময়দান স্টেশনে একটি চলমান সিঁড়ির উদ্বোধন করেন রেল প্রতিমন্ত্রী। সেখান থেকে মেট্রোয় যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পৌঁছন মহানায়ক উত্তমকুমার (টালিগঞ্জ) স্টেশনে। ওই স্টেশন পরিদর্শন করে ফেরেন পার্ক স্ট্রিটে। মেট্রোর কামরায় রেল প্রতিমন্ত্রীকে পেয়ে যাত্রীরা নানা সমস্যার কথা বলতে শুরু করেন। অফিস-টাইমে ট্রেনের দেরি, এসি না-চলা, গাদাগাদি ভিড়, মাঝপথে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানান তাঁরা। পাশে দাঁড়ানো মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারকে অধীর বলেন, “শুনুন যাত্রীরা কী বলছেন। অবিলম্বে এ সব দূর করার চেষ্টা করুন।”
মেট্রো নিয়ে যাত্রীদের নিত্য অভিযোগ অনেকবার পৌঁছেছে রেল বোর্ডেও। তারই অনুসন্ধানে অধীরের এ দিনের মেট্রো-সফর। ফিরতি পথে মেট্রোর সদর দফতর ‘মেট্রো ভবনে’ রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল) এবং মেট্রো কর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মন্ত্রী। প্রশাসনিক কথাবার্তার সঙ্গে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়েও আলোচনা হয়।
পরে পুজোর মেট্রো-সূচি জানান রেল প্রতিমন্ত্রী। এ বার সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী— তিন দিনই অন্যান্য বছরের মতো ভোর ৪টে পর্যন্ত মেট্রো চলবে। তবে, দশমীর দিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ছাড়বে শেষ মেট্রো। ২৯ সেপ্টেম্বর এবং ৬ অক্টোবর অতিরিক্ত কয়েকটি মেট্রো চালানো হবে। অধীর জানান, মেট্রোর সিগন্যালিং ব্যবস্থায় উন্নতির জন্য দমদম থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ‘ডুয়াল অডিও ফ্রিকোয়েন্সি’ চালিত ব্যবস্থা বসানো হবে। আরও দু’টি স্টেশনে চালু হবে যন্ত্রচালিত সিঁড়ি। পুজোয় মেট্রোর স্টেশনগুলিতে আরও বেশি আলো, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করবে।
|