হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জমি অধিগ্রহণের জট কাটল।
ছ’মাস আগে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সেন্ট্রাল স্টেশনের জন্য রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ খারিজ করে দিয়েছিল। সোমবার ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায় স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
ফলে এখন সেন্ট্রাল স্টেশন এলাকায় মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাজ শুরুর ক্ষেত্রে এখন আর কোনও বাধা রইল না। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারি হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ খারিজের নির্দেশেরও আর কোনও মূল্য রইল না। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আপিল মামলাটি চলবে। আগামী ৩ এপ্রিল ফের তার শুনানি হবে। ডিভিশন বেঞ্চ যে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে এই প্রকল্পের কাজ চালু রাখার পক্ষে, তা সওয়াল চলার সময়ে বার বার বুঝিয়ে দিয়েছে তারা। এ দিন মামলার রায় শুনে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “আমরা আনন্দিত। আমরা চাই রাজ্য সরকার এই প্রকল্পটি রূপায়িত করতে এগিয়ে আসুক। এতে রাজ্যেরই লাভ হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে মানুষের কাছে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।”
|
প্রথম দিকে রাজ্য সরকার সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল মামলা করায় আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান শাসক দলের হাত থেকে রেলমন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ায় রাজ্য সরকার রেলের এই প্রকল্প সম্পর্কে আগ্রহ হারায়। ফলে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল মামলা করেও তা প্রত্যাহার করে নেয় তারা। এর জেরে ৫০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ আটকে যায়। পরে রাজ্য সরকারের এই মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হওয়ায় ফের আপিল মামলা করে সরকার। কিন্তু মামলার শুনানির সময়ে তাদের সক্রিয়তার অভাব দেখা যায়।
প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ এই সক্রিয়তার অভাব দেখেই সরকারের কাছে জানতে চায়, রাজ্য সরকার জনস্বার্থের পক্ষে না বিপক্ষে। ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও জানিয়ে দেয়, সরকার যদি এই আপিল মামলা প্রত্যাহার করে, তা হলে জনস্বার্থে হাইকোর্ট এই আপিল মামলা চালাবে। ১৫ মার্চ মামলার শুনানির সময়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, সোমবার তিনি মামলার রায় দেবেন।
ফলে এ দিন আর নিষ্ক্রিয় থাকার উপায় ছিল না রাজ্য সরকারের। সরকারি আইনজীবী শাক্য সেন জানিয়ে দেন, সরকার আপিল মামলা চালাবে। তিনি জানান, ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর তৎকালীন রাজ্য সরকার বৌবাজার স্ট্রিটে সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে প্রায় ১ একর জমি অধিগ্রহণের নোটিস দেয়। সল্টলেকের দত্তাবাদ এবং সেন্ট্রাল স্টেশন এলাকা ছাড়া ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।
ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জট দেখে কোনও কোনও রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হয়, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো রুট বদলে শিয়ালদহ পর্যন্ত এসে ধর্মতলা হয়ে বিবাদী বাগে যাবে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তা করা যাবেনা। রেলের যুক্তি ছিল, সেন্ট্রাল স্টেশন হবে ইস্ট-ওয়েস্ট ও কবি সুভাষ-দমদম মেট্রোর জংশন স্টেশন। তা ছাড়া, ধর্মতলা হয়ে ঘুরে গেলে ওই প্রকল্পের খরচ আরও ৫০০ কোটি বেড়ে যাবে।
দমদম-কবি সুভাষ মেট্রোর লাইনের নীচ দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর লাইন নিয়ে যেতে সুড়ঙ্গ খুঁড়তেই প্রয়োজন ছিল ওই প্রায় এক একর জমি অধিগ্রহণ। যার জন্য বৌবাজার এলাকায় ২৫০টি বাড়ি ভাঙতে হত। এর পরেই ওই এলাকার ভাড়াটেদের একটি সংগঠন কলকাতা হাইকোর্টে অধিগ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে। সেই মামলায় ২০১২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারের ওই অধিগ্রহণ খারিজ করে দেন।
এ দিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় জানান, অধিগ্রহণের পরে দু’বছরের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করতে হয়। তা করা না হলে অধিগ্রহণ খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছে ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর এবং ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর। তাই দু’বছরের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী ৬(২) ধারায় এই প্রায় এক একর জমি অধিগ্রহণ করে। রাজ্য সরকারের এই সওয়াল শোনার পরেই ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় স্থগিত করে দেয়।
|