অগ্নিকাণ্ডের পরে অভিযোগের তির উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন ঘরপোড়া মানুষেরা। সেই অভিযোগ অস্বীকার করতে সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন ডাকলেন মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস। পাশাপাশি, তিনি পাল্টা অভিযোগ আনলেন ‘অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টে’-এর রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
শুধু সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীই নন, বস্তির আগুনের ঘটনায় সিপিএম-ও ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে বলে অভিযোগ তোলেন দুলালবাবু। তিনি বিরোধী নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রেরও নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন।
গত চার মাসের মধ্যে মহেশতলা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ষোলো বিঘা বস্তিতে দু’বার আগুন লাগে। দু’বারই বস্তিবাসীদের অভিযোগের তির মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাসের দিকে ছিল। গত ২০ নভেম্বর ওই বস্তির একাংশে আগুন লাগলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন দুলালবাবু। অভিযোগ, তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন বস্তিবাসীদের একাংশ। সে বারও দুলালবাবুর বিরুদ্ধে বস্তিবাসীদের তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। শনিবার ভোরে ফের ওই বস্তির একাংশ পুড়ে যায়। ফের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকী, তাঁর টাকাপয়সা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। দুলালবাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পরে আর্থিক ভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন বলেও তাঁর বিরোধীদের দাবি। দুলালবাবু বলেন, “আমি ব্যবসায়ী। আমার প্রচুর টাকা এবং তা বৈধ। আয়-ব্যয়ের হিসেব আয়কর দফতরে আছে। তদন্ত করলেই সব স্পষ্ট হবে। আমি বছরে যা আয়কর দিই, চার-পাঁচ জনের তা বার্ষিক আয়ের সমান।” |
কিন্তু বারবার একই অভিযোগ কেন উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে?
দুলালবাবু বলেন, “এখানে কেএমডিএ এলাকায় কিছু জবরদখলকারী আছেন। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ১১৮৪টি বাড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কেএমডিএ এলাকার জবরদখলকারীরা ওই বাড়ি পাবেন। ওই এলাকায় রেলেরও জমি রয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, সেখানেও জবরদখলকারী আছেন। তাঁরা কোনও সুবিধা পাবেন না বলে নানা চক্রান্ত করছেন। তিনি বলেন, “বছর দু’য়েক আগে কয়েক জন স্থানীয় এআইইউডিএফ নেতা আমাকে ওই প্রকল্পে বাড়ির ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। সাফ না বলে দিয়েছিলাম। সেই থেকেই চক্রান্ত শুরু হয়েছে।” দুলালবাবুর বক্তব্য, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত করুক। আমাকে তো জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। জেলা পুলিশ হয়তো ব্যস্ত। সে ক্ষেত্রে সিবিআই ও সিআইডি তদন্ত করুক।”
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কী বলছেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী?
তাঁর বক্তব্য, “আমি কোথাও চক্রান্ত করি না। কোনও থানায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। দুলালবাবু মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। ওই বস্তিতে পানীয় জল, বিদ্যুতের মতো কোনও পরিষেবার ব্যবস্থা করেননি তিনি। বস্তিবাসীরা আমার কাছে অভিযোগ করেন। তাই অগ্নিকাণ্ডের পরে আমি সেখানে যাই।” দুলালবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীরও হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। আমি সব জানাব। ওই বস্তির উন্নয়ন নিয়ে আন্দোলনের পথে যাব।” বস্তিবাসীদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে দুলালবাবু বলেন, “সেখানকার সকলেই বহিরাগত। আইনি জটিলতার জন্য ওদের রেশনকার্ড, বিপিএল কার্ড-সহ নানা পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আগের বাম পরিচালিত পুরসভাও দিতে পারেনি।”
রবিবার ষোলো বিঘা বস্তিতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। তিনিও দুলালবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। কিন্তু এ দিন দুলালবাবুর পাশে বসে মহেশতলা পুরসভার কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান প্রশান্ত মণ্ডল অবশ্য সব বিষয়েই চেয়ারম্যানের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। বলেন, “জোটধর্ম মেনেই মহেশতলা পুরসভা পরিচালনা করা হয়। আমি রাজ্য সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছি। তবে ষোলো বিঘা বস্তিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঠিক কী বলেছেন, তা আমি জানি না।” |