কড়েয়ার আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর জন্য পুলিশ অফিসারদের দোষী সাব্যস্ত করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। বুধবার আমিনুলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে তারা। দু’মাসের মধ্যে টাকা দিতে হবে বলে কমিশন জানিয়েছে।
ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে, মাওবাদী সন্দেহে ধৃত শিলাদিত্য চৌধুরীকে এবং এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল কমিশন। এর মধ্যে অম্বিকেশবাবু ও শিলাদিত্যবাবুকে সময়সীমার মধ্যে টাকা দেয়নি সরকার। সুদীপ্তের পরিবারকে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সময়সীমা এখনও শেষ হয়নি। আর আমিনুলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ প্রসঙ্গে এ দিন রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ কর্তা মহাকরণে বলেন, “সরকার এখনও ওই সুপারিশ হাতেই পায়নি।”
গত বছর অক্টোবরে শাহাজাদা বক্স নামের এক ব্যক্তি কড়েয়া এলাকার এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন আমিনুল। অভিযোগ, শাহাজাদার সঙ্গে পুলিশের দহরম-মহরম থাকায় তাঁকে গ্রেফতার না-করে উল্টে আমিনুলের বিরুদ্ধেই পাল্টা ডাকাতির মামলা দায়ের করে পুলিশ। পুলিশি হেনস্থায় জেরবার হয়ে ৩ ডিসেম্বর থানার সামনেই নিজের গায়ে আগুন দেন আমিরুল। ১ জানুয়ারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল হয় রাজ্য জুড়ে। তার পরে কলকাতা পুলিশ বিভাগীয় তদন্ত চালিয়ে কড়েয়া থানার অভিযুক্ত দুই সাব-ইনস্পেক্টর বিনোদ কুমার ও রঞ্জিত যাদব এবং কনস্টেবল নাসিম খানকে সাসপেন্ড করে। |
কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয়কুমার হালদার এ দিন জানান, সংবাদমাধ্যমে আমিনুল-বৃত্তান্ত জেনে মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। বেশ কয়েক জন পুলিশ অফিসারকে এবং ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। সব দিক খতিয়ে দেখে কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এবং দুই সদস্য বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল ও প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন রায় মনে করেন, পুলিশের গাফিলতিতেই আমিনুল গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। তাই আমিনুলের পরিবারকে দু’মাসের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে কমিশন।
মানবাধিকার কমিশন তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে তদন্ত চালানোয় এবং দোষীদের চিহ্নিত করায় এ দিন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আমিনুলের ভাই আনোয়ার ইজহার। তিনি বলেন, “আমরা টাকা চাই না। দোষীদের শাস্তি চাই।” ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে আমিনুলের পরিবার। |