দমদম ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে ভাঙচুর, অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষিকাদের হেনস্থা এবং অধ্যক্ষাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যের মিশনারি পরিচালিত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে। ক্রাইস্ট চার্চের ঘটনার প্রতিবাদে এ ভাবেই শিক্ষায় কালা দিবস পালন করতে চাইছে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্রিশ্চিয়ান স্কুলস।
বিভিন্ন মিশনারি সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বন্ধ থাকবে প্রায় ৭০০ স্কুল-কলেজ। ক্লাস হবে না আইসিএসই পাঠ্যক্রমের প্রায় ২০০টি স্কুলেও। যদিও আইসিএসই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আসবেন। ভবিষ্যতে কোথাও ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের মতো ঘটনা ঘটলে কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে বৈঠকও হবে। কিন্তু শিক্ষকমহলেরই একাংশের প্রশ্ন, প্রতিবাদ জানানোর জন্য পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কেন? পঠনপাঠন বন্ধ মানে তো ছাত্রছাত্রীদেরই ক্ষতি। ক্লাস বন্ধ না-রেখেও তো জারালো প্রতিবাদ জানানো যেতে পারত।
মডার্ন হাইস্কুলের আধিকর্তা দেবী কর যেমন জানিয়েছেন, আইসিএসই পাঠ্যক্রমের স্কুল হলেও সেখানে ক্লাস বন্ধ রাখা হবে না। তিনি বলেন, “আমি এই পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি না। তাই ক্লাস বন্ধ রাখার প্রশ্নই ওঠে না। স্বাভাবিক রুটিন মেনেই স্কুল হবে।”
ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে মিশনারি স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশা প্রকাশ করেছিলেন, মিশনারি সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। তার পরের দিন, রবিবার মুখ্যমন্ত্রী টেলিফোন করেন আর্চবিশপ অফ ক্যালকাটা তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্রিশ্চিয়ান স্কুলসের সভাপতি টমাস ডি’সুজাকে। তিনি নিজের উদ্বেগের কথা জানান, তাণ্ডবে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার আশ্বাসও দেন। তার পরেই ভাঙচুরের অভিযোগে বেশ কয়েক জন অভিভাবক ও বহিরাগতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তার পরেও স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলগুলির সংগঠন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিশ্চিয়ান স্কুলসের সম্পাদক মলয় ডি’কস্টা বুধবার বলেন, “প্রতিবাদ নানা ভাবেই জানানো যায়। কিন্তু ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় ছাত্র, শিক্ষকেরা আক্রান্ত। শিক্ষিত মানুষের কাছে এটা একটা লজ্জাজনক ঘটনা। ভবিষ্যতে যাতে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনটা না-হয়, সেই জন্যই একটা কড়া বার্তা দেওয়া দরকার।” প্রায় একই কথা জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ স্কুলস ফর দ্য আইএসসি। ওই সংগঠনের সম্পাদক তথা সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে বলেন, “একটা সচেতনতার বার্তা দেওয়ার দরকার ছিল। ক্লাস নিয়ে প্রতিবাদ জানালে বার্তাটা যথাযথ ভাবে দেওয়া যেত না।” তবে এক দিন স্কুল বন্ধ রাখায় পঠনপাঠনের যে-ক্ষতি হবে, ভবিষ্যতে বাড়তি ক্লাস নিয়ে তা পূরণ করে দেওয়া হবে বলে সংগঠনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আজই আবার বাস ধর্মঘটের প্রথম দিন। এর মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকায় অভিভাবকদের একাংশ অবশ্য কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। এক অভিভাবক বলেন, “অন্তত একটা দিন রাস্তায় বেরিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে না!”
|