দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় যে-সব অভিভাবকের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের ধরতে পারেনি পুলিশ। যে-ছ’জন অভিভাবককে ধরা হয়েছে, ভাঙচুরে জড়িত অবস্থায় তাঁদের ছবি কয়েক দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়নি। তাই আদালত থেকে একে একে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বুধবারেও জামিন পেয়েছেন রূপা পাল ও বাবলা পাল এবং মুমু চন্দ ও দেবাশিস চন্দ নামে দুই অভিভাবক দম্পতি।
এ এক বিচিত্র পরিস্থিতি!
১২ সেপ্টেম্বর ওই স্কুলে ভাঙচুরের সময় যে-সব অভিভাবকের সক্রিয় ভূমিকা ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল, তাঁদের গ্রেফতার যাচ্ছে না কেন?
পুলিশের বক্তব্য, ওই সব অভিভাবক পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ তাঁদের খুঁজছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি দেবাশিস বেজ (ডিডি) বলেন, “সংবাদমাধ্যমে যাঁদের ছবি বেরিয়েছে, আমরা তাঁদের শীঘ্রই ধরে ফেলব।”
কোথায় আছেন ওই সব অভিভাবক? এ-রকম দু’জন অভিভাবকের ব্যাপারে বুধবার আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে খোঁজ চালানো হয়েছিল।
রেশমি দে: বাড়ি নাগেরবাজারের বাপুজি কলোনিতে। মেয়ে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার পরের দিন দুপুরে বাড়িতে বসে তিনি বলেছিলেন, “ঘটনার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি।” বুধবার তাঁর দোতলা বাড়ির বাইরের দরজায় অনেক ক্ষণ কলিং বেল বাজানোর পরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন এক মহিলা। নিজের পরিচয় দিলেন রেশমির জা বলে। রেশমি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনি বেশ কয়েক দিন বাড়িতে নেই। কোথায় গিয়েছেন জানি না। ওঁর পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই।” তিনি জানান, এর মধ্যে পুলিশ বেশ কয়েক বার হানা দিয়েছে তাঁদের বাড়িতে।
|
রেশমির প্রতিবেশীরা জানান, এখন পুলিশ তাঁদের পাড়ায় হানা দিচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই কাজটা পুলিশ যদি ঘটনার পরে পরেই করত, পাড়ার লোককে এ ভাবে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হতো না। রেশমির বাপের বাড়ি বাঙুরের ‘এ’ ব্লকে। সেখানে গেলে দরজা না-খুলে এক মহিলা বাড়ির ছাদ থেকে মুখ বাড়িয়ে শুধু বলেন, “ঘর খোলা যাবে না। দাদু অসুস্থ। যাঁকে খুঁজছেন, তিনি এ বাড়িতে নেই। কোথায় গিয়েছেন জানি না।” পাপিয়া মজুমদার: থাকেন দমদমের মল রোডের একটি ভাড়ার ফ্ল্যাটে। মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ভাঙচুরের ঘটনার পরের দিন বাড়িতে বসেই তিনি বলেছিলেন, “আমার এই কাজ করা উচিত হয়নি।” বুধবার দুপুরে তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। তাঁদের বাড়িওয়ালা প্রবীর দে বলেন, “ঘটনার দু’দিন পরে পাপিয়ারা চলে যান। তার পরে পুলিশ আসে। পাপিয়াকে না-পাওয়ায় আমাদের কাছে খোঁজখবর নেয়। পুলিশ ওঁর দাদুর বাড়িতে গিয়েও খোঁজখবর করে।”
পাপিয়ার বাড়ির কাছেই তাঁর দাদু দুলাল নন্দীর বাড়ি। দুলালবাবু দমদমের মল রোড এলাকার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর। বৃদ্ধ দুলালবাবু জানান, পাপিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। পাপিয়া ফোনে বলেছেন, রাগের মাথায় এই কাণ্ড করে ফেলেছেন। পাপিয়াকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলছেন না কেন?
দুলালবাবু বলেন, “ওকে আত্মসমর্পণ করতে বলব কেন? পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকে ওদের ভাঙচুর করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ বার পুলিশই ওকে খুঁজে বার করুক।”
|