পুলিশকেই দুষলেন অধ্যক্ষা হেলেন
ন্তর্বর্তী জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন সোমবার। দু’দিন পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের অধ্যক্ষা হেলেন সরকার প্রথমেই বললেন, “ঐন্দ্রিলার মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” আর তার পরেই বললেন, “বৃহস্পতিবার স্কুলে যা ঘটেছে সেটাও অনভিপ্রেত।” ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন, বিষয়টি বিচারাধীন বলে। কিন্তু সে দিন স্কুলে হাঙ্গামা মোকাবিলা থেকে শুরু করে তাঁর ইস্তফা ও গ্রেফতার প্রতিটি প্রসঙ্গেই দুষলেন পুলিশকে।
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সরাসরি সেই অভিযোগকে সমর্থন করেই অধ্যক্ষা হেলেন সরকার এ দিন বলেন, “সে দিন ভাঙচুর করেছিল যে জনতা, পুলিশ তাদেরই দাবি মতো চলছিল। পুলিশের সামনেই স্কুলে ভাঙচুর চলতে থাকে।”
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজের দাবি, গত বৃহস্পতিবার ভাঙচুরের সময় তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। নয়তো জনতা প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্য শিক্ষিকাদের পিষে ফেলত।
তাঁর কথায়, “ওই দিন ঐন্দ্রিলার মৃত্যুটাই ছিল সব থেকে বড় ব্যাপার। পরিস্থিতি এতই ঘোরালো ছিল যে উন্মত্ত জনতাকে কিছুতেই সামলানো যাচ্ছিল না।”

জামিন পাওয়ার দু’দিন পর বুধবার
সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
উত্তেজিত জনতার সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রথমে মাইকে ক্ষমা চান অধ্যক্ষা। তার পরে সাদা কাগজে লিখে ইস্তফা দেন। তাতেও জনতাকে শান্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে ইস্তফাপত্র লিখতে হয় নিজের প্যাডে। এর পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে স্কুল থেকে নিয়ে যায়। যে প্রসঙ্গে এ দিন অধ্যক্ষা দাবি করেন, “যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে স্কুলের শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য পুলিশেরই চাপে গ্রেফতার বরণ করেছিলাম।” পুলিশের বক্তব্য, সেই সময় যা উচিত বলে মনে হয়েছিল, তা-ই করা হয়েছে। গ্রেফতারের পরে অধ্যক্ষাকে সসম্মানেই নিজেদের হেফাজতে রাখা হয়েছিল।
আর ইস্তফা? এই ক্ষেত্রেও পুলিশের উপরেই দায় চাপিয়েছেন অধ্যক্ষা। সোমবার জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। এ দিন বিশপ’স হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, সে দিন গোলমাল শুরু হওয়ার পরে তিনি নিজেই পুলিশে খবর দিয়েছিলেন এবং কিছু ক্ষণ পরেই পুলিশ আসে। উত্তেজিত জনতার দাবি মতো পুলিশ তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজের অবশ্য দাবি, “অধ্যক্ষা স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন। তার আগে তিনি স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথাও বলেন। পুলিশ কোনও ভাবেই চাপ দেয়নি।” তিনি এ-ও বলেন, “পুলিশ কোন পরিস্থিতিতে কী করেছে, অধ্যক্ষা নিজেও তা দেখেছেন। তার পরেও পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর এই ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত অভিরুচির ব্যাপার। এ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
অধ্যক্ষার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের একাংশ নানা অভিযোগ তুলেছেন। তার সবই অস্বীকার করে অধ্যক্ষা বলেন, “আমার স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবকরা আমাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয়, আমি নির্দোষ।” চাপের মুখে ইস্তফা দিলেও তিনি যে ওই স্কুলে ফিরে গিয়ে অধ্যক্ষার চেয়ারেই বসতে চান তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন এ দিন। স্কুল পরিচালন সমিতিও জানিয়েছে, তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়নি।
এ দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথার শুরুতেই ঐন্দ্রিলার মৃত্যুকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে হেলেনদেবী বলেন, “ওর পরিবারকে সমবেদনা জানাই। কিন্তু স্কুলে সে দিন যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সেটাও অনভিপ্রেত।” তিনি জানান, ওই দিন ঐন্দ্রিলার বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয় যে, সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বৃহস্পতিবার প্রবীণ শিক্ষিকার আড়ালে
আতঙ্কিত অধ্যক্ষা। —ফাইল চিত্র।
কিন্তু পুলিশ যে ঐন্দ্রিলাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং তোলাবাজির অভিযোগ এনেছে? অধ্যক্ষা বলেন, “পুলিশ সব পারে। আমি ওই সব অভিযোগ মানি না। আর, ঐন্দ্রিলা তো আত্মহত্যা করেনি, তাই প্ররোচনা দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।” আরও অভিযোগ উঠেছে যে, উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছাত্রী ঐন্দ্রিলাকে আটকে রেখে ‘র্যাগিং’ করেছিল এবং সে কথা জেনেও অধ্যক্ষা ব্যবস্থা নেননি। এই অভিযোগ উড়িয়ে অধ্যক্ষা বলেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই।” পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত করছে। ফরেন্সিক দলও গিয়েছিল ঘটনাস্থলে।
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে সব মিশনারি স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিশ্চিয়ান স্কুলস। ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিএসই পাঠ্যক্রমের স্কুলগুলিও। কিন্তু পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানাতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখাটা জরুরি ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষামহলেই।
অধ্যক্ষার আইনি পরামর্শদাতা তথা লা মার্টিনিয়ার স্কুলের সম্পাদক সুপ্রিয় ধর এ দিন জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর হেলেন সরকারের জামিনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে ব্যারাকপুর কোর্টে। তার পরে অধ্যক্ষার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানানো হবে। পাশাপাশি, স্কুলের যে সব ছাত্রীর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কাগজপত্র ওই দিনের গোলমালে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে কথা জানিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান ক্রাইস্ট চার্চের পরিচালন সমিতির সম্পাদিকা ডোরা অর্পণা মণ্ডল। পর্ষদ ও সংসদ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সব রকম সাহায্য করা হবে।
ক্রাইস্ট চার্চের ঘটনার তদন্ত করে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বুধবার স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এ দিন এই নির্দেশ দেয় কমিশন। এডিজি পদের কোনও অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের মন্তব্য-সহ রিপোর্টটি দিতে বলা হয়েছে।
মৃত্যু, ঝড়, তার পর
নিজেই পুলিশকে খবর দিই। কিছু ক্ষণ পরেই পুলিশ আসে। পুলিশের সামনেই স্কুলে ভাঙচুর চলতে থাকে। সে দিন আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকিনি। নয়তো জনতা প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্য শিক্ষিকাদের পিষে ফেলত।
যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে স্কুলের শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ও সম্পত্তি রক্ষায় পুলিশেরই চাপে গ্রেফতার বরণ করি। সেই সময় যা উচিত বলে মনে হয়েছিল, তা-ই করা হয়েছে। অধ্যক্ষাকে সসম্মানেই পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।
উত্তেজিত জনতার দাবি মতো পুলিশ আমাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন। তার আগে স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথাও বলেন।
ঐন্দ্রিলা তো আত্মহত্যা করেনি, তাই প্ররোচনা দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। পুলিশ সব পারে। ওই সব অভিযোগ মানি না। অধ্যক্ষা নিজেও দেখেছেন, পুলিশ কোন পরিস্থিতিতে কী করেছে। এই ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত অভিরুচির ব্যাপার।
র‌্যাগিংয়ের কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই। তদন্ত চলছে। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।
অধ্যক্ষা, ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল
গোয়েন্দা প্রধান, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.