হাঙ্গামার ছবিই তোলেনি পুলিশ, প্রমাণের অভাবে জামিন দু’জনের
স্ত্র, মগজাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও পুলিশের আচরণ অনেক ক্ষেত্রে ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ ওঠে। দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে সাম্প্রতিক হাঙ্গামার ঘটনাতেও তার প্রমাণ মিলল।
ভাঙচুর হচ্ছে জেনেও পুলিশ বৃহস্পতিবার ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ওই স্কুলে যায়নি। তাই কারা সে-দিন ভাঙচুর করেছে, তার কোনও তাজা প্রমাণ নিজেদের কাছে রাখতে পারেনি তারা। ক্যামেরা নিয়ে যাওয়াটা যে দরকার, সেই মগজাস্ত্র ব্যবহার না-করার খেসারত মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতে দাঁড়িয়েই দিতে হল তাদের। ধৃত দুই অভিভাবক ধীরেন রাজবংশী ও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ভাঙচুরে সামিল হয়েছিলেন, এমন কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। তাই ওই দু’জনের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
ভাঙচুরের অভিযোগে শুক্রবার রাতে ওই অভিভাবকদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল গোলাম মহম্মদ নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি বহিরাগত। কেন তিনি ওই দিন ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে গিয়েছিলেন, আদালতে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি গোলাম মহম্মদের আইনজীবী। আদালত ওই ব্যক্তির জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাঁকে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় এ-পর্যন্ত পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে দুই মহিলা-সহ ছ’জন অভিভাবক। বাকি ন’জন বহিরাগত। তাঁদের মধ্যে বরুণ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তিকে দমদম থেকেই ধরেছে পুলিশ।
অধ্যক্ষা হেলেন সরকারের সমর্থনে মোম-বার্তা। মঙ্গলবার ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
স্কুলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সহ-অধ্যক্ষার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে-ন’টি ধারায় মামলা হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি জামিন-অযোগ্য ধারাও আছে। এ দিন আদালতে পুলিশ কেন ধৃত দু’জনের জামিন আটকাতে পারল না, ইতিমধ্যেই পুলিশমহলে সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি কৌঁসুলি শঙ্করদাস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বারবার ওই দুই অভিভাবকের জামিন নাকচের আর্জি জানিয়েছিলেন। ধীরেনবাবুর আইনজীবী কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের কারও নাম এফআইআরে নেই। এঁরাই যে ভাঙচুর করেছেন, পুলিশের কাছে তার কোনও প্রমাণও নেই। শুধু নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পুলিশ নিরীহ মানুষগুলোকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। জামিন-অযোগ্য ধারায় জেল খাটাতে চাইছে।”
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় দুই অভিভাবক ধীরেনবাবু ও বিশ্বজিৎবাবুর জামিন মঞ্জুর করেন। গোলাম মহম্মদকে সাত দিনের জন্য জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। দমদমের বাসিন্দা ধীরেনবাবু বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। গণ্ডগোলে আটকে যাই। তারই খেসারত দিতে হল এই ভাবে। পুলিশ সত্যিকারের হামলাকারীদের ধরুক।’’ জামিনে ছাড়া পাওয়া বিশ্বজিৎবাবুর মেয়েও ওই স্কুলের ছাত্রী।
এই মুহূর্তে পুলিশের হেফাজতে আছেন দুই অভিভাবক দম্পতি। আজ, বুধবার তাঁদের আদালতে তোলা হবে। ওই দু’জনের ক্ষেত্রে কি পুলিশের কাছে হামলায় জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ আছে? ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রের খবর, যে-সব হামলাকারী অভিভাবকের ছবি সংবাদপত্রে বেরিয়েছে কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, তাঁরা সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ যাঁদের ধরেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও জোরালো প্রমাণই নেই তদন্তকারীদের হাতে। সরকারি আইনজীবী শঙ্করদাসবাবু বলেন, ‘‘দেখা যাক, বাকি ধৃতদের ক্ষেত্রে কী হয়।’’
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বস্তরে। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা এবং অনধিকার চর্চার অভিযোগ এনেছেন স্কুলের পরিচালন-কর্তৃপক্ষ। হাঙ্গামার দিন পুলিশ যে-ভূমিকা নিয়েছিল, মহাকরণও তা সমর্থন করেনি। ওই স্কুলের অধ্যক্ষা হেলেন সরকারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনেও শেষ পর্যন্ত আদালতে তা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। এ দিন আদালতে পুলিশের মুখ আরও এক বার পুড়ল বলেই মনে করছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, সে-দিন পুলিশ নিজেরাও আক্রান্ত হয়েছিল। সে-ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের উপরে হামলা এবং সরকারি কর্তব্যে বাধাদানের অভিযোগও আনতে পারত ধৃতদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ তা করেনি। ওই অভিযোগ থাকলে এ ভাবে পুলিশকে আদালতে হেনস্থা হতে হত না।
যে-সব হামলাকারী অভিভাবকের ছবি সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে, ছ’দিনেও পুলিশ তাঁদের কাউকে ধরতে পারল না কেন? ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে অনেকে পলাতক। তাদের গ্রেফতার করার জন্য তল্লাশি চলছে। আমাদের মূল কাজ, ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা সেটাই করছি।’’

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.