সল্টলেক
জমি হস্তান্তরে ফাঁক বোজাতে আইনে বদল
ল্টলেকে লিজ জমির হস্তান্তরে ছাড় দিয়ে আইন হয়েছিল, রক্তের সম্পর্ক আছে এমন কাউকে বিনা মাসুলে জমি হস্তান্তর করতে পারবেন লিজগ্রহীতা। অন্যদের জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, অনুমতি সাপেক্ষে নগরোন্নয়ন দফতরকে নির্দিষ্ট হারে মাসুল দিতে হবে। আশা ছিল, এতে বেআইনি জমি হস্তান্তরে রাশ টানা যাবে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, আইনের ফাঁক গলে রক্তের সম্পর্কহীনদেরও আত্মীয় সাজিয়ে মাসুল ফাঁকি দিয়ে বহাল তবিয়তেই চলছে বেআইনি হস্তান্তর। অগত্যা ফের আইন পরিমার্জনের পথে রাজ্য।
কী ভাবে চলছে এই বেআইনি হস্তান্তর? নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন বলেন, “যাঁর নামে জমির লিজ, তিনি ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ এবং ‘উইল’ অন্য ব্যক্তির নামে করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যিনি এই অধিকার দিচ্ছেন এবং যাঁকে এই দেওয়া হচ্ছে, দু’জনের রক্তের সম্পর্ক নেই। অথচ, তাঁরা নির্দেশ মতো কাঠাপিছু ধার্য মাসুল দিচ্ছেন না।”
মাসুল ছাড়াই যাঁরা বিধাননগরে জমির মালিকানা পেয়েছেন, তেমন এক জনের বক্তব্য, ‘‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি এবং উইল এই মালিকানা মিলছে। এই দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা হাইকোর্টে গিয়েছি।” এই পরিস্থিতি এড়াতে সম্প্রতি ওই আইন পরিমার্জনের পরামর্শ দেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়। তাতে বলা হয়, রক্তের সম্পর্ক না থাকলে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বা উইল থাকলেও ধার্য মাসুল দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, “সংশ্লিষ্ট জটিলতা এড়াতে আমরা অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ রূপায়িত করেছি। যেখানে রক্তের সম্পর্ক নেই, সেখানে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি এবং উইল থাকলেও মাসুল দিতে হবে।” অন্যথায় জমির মিউটেশন হবে না। দেবাশিসবাবু বলেন, “নগরোন্নয়ন দফতরের একটি সাম্প্রতিক নির্দেশিকার বলে এটা কার্যকর করা। বিধানসভায় এটি পাশ করানোর প্রয়োজন নেই।”
বিধাননগরের প্লট বিলি হয়েছিল মূলত ৯৯৯ বছরের লিজে। তাই জমির মালিকানা বা বিক্রির অধিকার সরকারি ভাবে কারও উপরে বর্তায়নি। ১৯৯৩ সালের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ট্রান্সফার) অ্যাক্ট’-এ বলা ছিল, রক্তের সম্পর্ক ছাড়া লিজগ্রহীতা কাউকে জমি হস্তান্তর করতে পারবেন না। কিন্তু এলাকার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় জমির দাম। ফলে, বেআইনি ভাবে মালিকানা হস্তান্তর বাড়ছিল। সমাধানের পথ খুঁজতে ১৯৯৩ সালের ২৭ মে সরকার বিধাননগর পুরসভা, পুলিশ, নগরোন্নয়ন দফতর, কেএমডিএ-র প্রতিনিধি ও মহকুমা অফিসারদের নিয়ে সাত সদস্যের কমিটি তৈরি করে। ২০০৬ সালে রাজ্য বিধাননগরের বাণিজ্যিক প্লটে শর্তসাপেক্ষে হস্তান্তরে সায় দেয়। কিন্তু এ সবেও ঠেকানো যায়নি জমির বেআইনি হস্তান্তর।
২০১১-এ রাজ্যে সরকার বদলের পরে ঠিক হয়, বিধাননগরে জমির বেআইনি হস্তান্তর শর্তসাপেক্ষে বৈধ করা হবে। ২০১২-র জুন মাসে এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ঠিক হয়, যাঁর নামে লিজ, তিনি স্থানীয় পুলিশ ও স্থানীয় পুরসভার লিখিত অনুমতি থাকলে কাঠাপিছু ৫ লক্ষ টাকা নগরোন্নয়ন দফতরকে মাসুল দিয়ে জমি হস্তান্তর করতে পারবেন।
২০১২-র জুনে মাসুলের বিনিময়ে জমি হস্তান্তরের অনুমতির সিদ্ধান্তের সময়ে রাজ্য জানিয়েছিল, মাসুল বাবদ এক হাজার কোটিরও বেশি টাকা আয় হবে। ১৪ মাসে কত আয় হয়েছে? দেবাশিসবাবু বলেন, “কমবেশি আবেদন জমা পড়েছে ৭৫টি। ৫০টি-রও বেশি আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। আয় হয়েছে এক কোটির উপরে।”
তবে আয় যে যথেষ্ট হয়নি, তা মানছেন নগরোন্নয়ন-কর্তারা। তাঁদের এক জন বলেন, “বিধাননগরে প্লট প্রায় ১৩ হাজার। ২০১২-র ফেব্রুয়ারি মাসে সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ৪০০০ প্লট বেআইনি হস্তান্তর হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি কল্যাণ সমিতির হিসাবে, সংখ্যাটি সে সময়ে ছিল প্রায় ছ’হাজার।” দেবাশিসবাবু বলেন, “বেসরকারি সমীক্ষায় দেখেছি, সল্টলেকে মোট প্লটের এক-তৃতীয়াংশ বেআইনি হস্তান্তর হয়েছে। ভবিষ্যতে এ রকম যাতে না হয়, তার জন্য সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.