মিশনারি সংগঠনের প্রতিবাদে সামিল আইসিএসই-ও
স্কুলের ঝাঁপ ফেলে ১৯শে কালা দিবস
মদমের ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস হাইস্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর প্রতি ভরসা রেখেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে ‘কড়া বার্তা’ দিতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর কালা দিবস পালন করবে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ খ্রিস্টান স্কুলস। তাদের সিদ্ধান্ত, রাজ্যের খ্রিস্টান মিশনারি পরিচালিত স্কুল ও কলেজগুলি ওই দিন বন্ধ রাখা হবে। আর তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আইসিএসই বোর্ডের অধীন সব স্কুলেও সে দিন ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ স্কুলস ফর দ্য আইএসসি।
তাঁদের অভিযোগের তির যে মূলত পুলিশের দিকে, অ্যাসোসিয়েশন অফ খ্রিস্টান স্কুলস সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি তথা আর্চবিশপ অফ ক্যালকাটা টমাস ডি’সুজা পরিষ্কার জানান, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদেই স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনে চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া (সিএনআই)-র কলকাতা ডায়োসেসের সাম্মানিক সচিব আবির অধিকারী এ দিন বলেন, “পুলিশই অধ্যক্ষা হেলেন সরকারকে ইস্তফা লিখে দিতে বাধ্য করেছে।” যে প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান (ডিসিডিডি) দেবাশিস বেজের মন্তব্য, “ওই দিন পরিস্থিতি অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যে হেতু ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাই তখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল, তা-ই নেওয়া হয়েছে। এখন কোনও রকম প্রশ্ন ওঠা দুর্ভাগ্যজনক।”
রবিবার আর্চবিশপকে টেলিফোন করে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে আর্চবিশপ বলেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে সে দিনের তাণ্ডবে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওঁর উদ্যোগ ও উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ।” তা হলে স্কুল বন্ধ রেখে কালা দিবস কেন?
সোমবার জামিনের পরে ব্যারাকপুর আদালতে অধ্যক্ষা হেলেন সরকার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
অ্যাসোসিয়েশন অফ খ্রিস্টান স্কুলসের সম্পাদক মলয় ডি’কস্টার ব্যাখ্যা, “আমরাও ধর্মঘটের পক্ষে নই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটা উদ্বেগ তো থাকেই। সে দিন পুলিশের সামনে যে ভাবে তাণ্ডব হয়েছে, তার প্রতিবাদে কড়া বার্তা দিতে চাই। আমাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হোক।” অ্যাসোসিয়েশন অফ স্কুলস ফর দ্য আইএসসি-র সম্পাদক তথা সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে এ দিন জানান, ১৯ সেপ্টেম্বর রাজ্যের সব আইসিএসই পাঠ্যক্রমের স্কুলে ক্লাস বন্ধ থাকবে। “ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাবে না, তবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাবেন। তাঁরা ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের মৃত ছাত্রীটির স্মৃতিতে সভা করবেন এবং ওই মৃত্যুকে ঘিরে দমদমের স্কুলটিতে যা ঘটেছে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন। এমন পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা নিয়ে কথা বলবেন।” জানান নবারুণবাবু। রাজ্য বিধানসভার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বিধায়ক তথা বেহালার ন্যাশনাল জেমস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ শেন ক্যালভার্ট এ দিন বলেন, “যে ভাবে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে তাণ্ডব চালানো হল এবং অধ্যক্ষাকে লাঞ্ছিত করা হল, তাতে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যই বিঘ্নিত হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এর প্রতিবাদ জানানো দরকার ছিল। সিএনআই যা করছে, তার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” রাজ্য সরকার, বিশেষত মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেও ক্যালভার্টের বক্তব্য, “ওই দিন স্কুলে ঠিক কী পরিস্থিতি ছিল, আমার জানা নেই। তবে পুলিশ আর একটু তৎপর হলে হয়তো এ ঘটনা এড়ানো যেত।”
সিএনআইয়ের আবিরবাবু এ দিন জানান, ক্রাইস্ট চার্চের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যু এবং সেই সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তাঁরা ছ’সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছেন। স্কুল সংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগ, ভাঙচুর, অধ্যক্ষার ভূমিকা ইত্যাদি খতিয়ে দেখতে গড়া হয়েছে ১০ সদস্যের পরিদর্শক কমিটি। আবিরবাবুর কথায়, “স্কুলের যা অবস্থা, এখনই খোলা যাবে না। তবে পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে রিপোর্ট দিতে।”
বিধানসভার শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি অবশ্য ক্রাইস্ট চার্চে অবিলম্বে পঠনপাঠন শুরু করতে শিক্ষা দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বরের ‘কালা দিবস’ ও স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। এ দিন কমিটির বৈঠক ছিল। তাতে স্কুলশিক্ষা দফতরকে কমিটির পরামর্শ: প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্ধ না-থাকে ও ছাত্র-শিক্ষকেরা যাতে কোনও রকম আশঙ্কায় না ভোগেন, সে জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। রাজ্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, বৈঠকে উপস্থিত স্কুলশিক্ষা সচিব অর্ণব রায়ের কাছে তা জানতেও চাওয়া হয় বলে বিধানসভা সূত্রের খবর। আর কমিটি সূত্রের খবর, মিশনারি স্কুলকে সামগ্রিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যে সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়েও অর্ণববাবু আশ্বাস দিয়েছেন, ১৯ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলা রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা হবে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরে টেলিফোনে জানান, প্রস্তাবিত কালা দিবস কর্মসূচি বা স্কুল বন্ধ রাখার ব্যাপারে সরকারের কোনও বক্তব্য নেই। “গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনও সংগঠন যেমন ভাবে খুশি প্রতিবাদ জানাতে পারে।” মন্তব্য শিক্ষামন্ত্রীর।
কিন্তু স্কুল বন্ধ রাখা ছাড়া প্রতিবাদ জানানোর অন্য পথ কি ছিল না?
শিক্ষামহলের একাংশে ইতিমধ্যে প্রশ্নটা উঠেছে। স্কুলে ভাঙচুর ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হেনস্থার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন ২৬ সেপ্টেম্বর মিছিল করবে। মিছিলের আহ্বায়ক তথা বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবার রাজ্য সম্পাদক হেরোদ মল্লিক বলেন, “বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবা, ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইনরিটি স্কুলস, ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ খ্রিস্টান স্কুলস এবং আইসিএসই পাঠ্যক্রমের স্কুলগুলির সংগঠন মিছিলে যোগ দেবে। মুসলিম, বৌদ্ধ ও শিখ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনও থাকবে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.