|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
স্বতঃস্ফূর্ত চিত্রকর সৌমিত্র |
শিলাদিত্য সেন |
আশ্বিনে দিন সোনার আলোয় মোড়া
ছুটেছে কোথায় দুরাকাঙ্ক্ষার ঘোড়া
অসীমের তাল বাজে সে অশ্বখুরে
আমারও এ মন যেতে চায় বহু দূরে।
— সৌমিত্রর কবিতায় এই লাইনগুলো মনে পড়ে যোগেন চৌধুরীর, সৌমিত্রর আঁকা ছবিগুলো দেখতে-দেখতে। বলতে গেলে তাঁর উৎসাহেই সাম্প্রতিক এক প্রদর্শনীতে আবিষ্কার করা গেল চিত্রকর সৌমিত্রকে। কিউরেটর জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য স্বীকারও করেছেন, যোগেন চৌধুরীই সৌমিত্র-প্রতিভার এই বিস্ময়কর দিকটিতে তাঁকে মনোনিবেশ করতে বলেন প্রথম। জ্যোতির্ময়ের ভাবনা ও বিন্যাসে একটি ক্যাটালগও বেরিয়েছে ছবিগুলির: ফর্মস উইদিন/ সৌমিত্র চ্যাটার্জি (আর্ট অলিন্দ। পরি: ভারতী বুক স্টল)। তাতে যোগেন তাঁর রচনায় প্রথমে নিজের মুগ্ধতার কথা বলেছেন সৌমিত্রর অভিনয় নিয়ে, তার পর কী ভাবে সৌমিত্রকে তাঁর কবিমন টেনে নিয়ে গিয়েছে ছবি-আঁকায়, বলেছেন সে কথাও। কোনও প্রথাগত শিক্ষায় দুরস্ত না হয়েও শুধু স্বতঃস্ফূর্ততা থেকেই আশ্চর্য রকমের সৃষ্টিশীল সৌমিত্র; চিত্ররীতির নানাবিধ ব্যবহারে তাঁর ছবির সিংহভাগ জুড়ে থাকে ব্যক্তির অভিব্যক্তিময় মুখ; সঙ্গে নারীশরীর, নিসর্গ, অজানা জন্তুও। এ-সমস্ত নির্মাণে সৌমিত্রর অদ্ভুত অন্ধকার গভীর রেখার কাটাকুটিতে মেতে-ওঠা মিশ্রণের কথা খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন যোগেন। জলরং, প্যাস্টেল, রঙিন কালি দিয়ে এমন এক নিখুঁত ঐকতানে ইমেজগুলো তৈরি করেন সৌমিত্র, নারী-পুরুষ যাই আঁকুন-না, আধুনিকতার স্পর্শ থাকে তাতে— লিখেছেন রবীন মণ্ডল। আর শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ছবিতে লক্ষ করেছেন ‘দমবন্ধ-করা সম্পর্ক’— নারী-পুরুষের মধ্যে। রচনাদির সঙ্গে প্রচুর ছবি। সৌমিত্রর আঁকা ছবি তো বটেই, তাঁর বিভিন্ন বয়সের স্থিরচিত্রও। কোথাও ছবি আঁকছেন, কোথাও কবিতা লিখছেন, কোথাও ‘এক্ষণ’ সম্পাদনায় ব্যস্ত, কোথাও আবার হাসিমুখে সপরিবারে, বা সত্যজিতের সঙ্গে। আর্ট পেপারে ছাপা বর্ণবহুল এ-বইয়ের কিছু ছবি যেমন সৌমিত্রর স্বতন্ত্র চিত্রকলা, তেমনই কিছু আবার তাঁর খেরোর খাতা থেকে পাওয়া— অভিনয়ের, বা নাটক রচনা-নির্দেশনার সৃষ্টিমুহূর্তে আঁকা। ফাঁক পেলেই হরদম এই ছবি আঁকার অভ্যেসের কথা বলতে গিয়ে স্পষ্টই জানিয়েছেন সৌমিত্র, কোনও লুকনো ‘অ্যামবিশন’ নেই এর পিছনে, যেটা আছে তা হল চারপাশে যে সব মানুষ— তাদের ভিতরে লুকনো মানুষটাকে টেনে বের করে আনা। মানুষের মুখ খুঁজে বেড়ানোটা তাঁর ছবি আঁকার একটা ‘অবসেশন’। |
|
|
|
|
|