আগের পুরবোর্ডের ফেলে রাখা শ্মশান সংস্কারের পরিকল্পনা হিমঘর থেকে তুলে আনল নতুন পুরবোর্ড। শুরু হয়েছে খড়দহের নাথুপাল শ্মশানের সংস্কারের কাজ।
খড়দহ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই নাথুপাল শ্মশানটি দীর্ঘ দিন ধরেই কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। অর্থ আর জায়গার অভাবে আটকে ছিল সংস্কারের কাজ। আগের পুরবোর্ডের দাবি ছিল, স্বল্প পরিসর এই শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো যাবে না। তা ছাড়া লোকসানে চলা পুরসভার পক্ষে এর জন্য অর্থের ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন বোর্ড এই দুই সমস্যারই সমাধান করে ফেলেছে।
নাথুপাল শ্মশানে দু’টি কাঠের চুল্লি আছে। শ্মশানের ডোম রাজু গঙ্গাপুত্রের কথায়: “দু’টি চুল্লি এক সঙ্গে কবে জ্বলেছে মনে পড়ে না। অনেকেই এখন বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দাহ করতে চান। বিশ-বাইশ বছর আগেও দৈনিক গড়ে পাঁচ-ছ’টি দেহ আসত। তাই শবের সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে।” সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দা সৌমেন করের অভিযোগ, “কাঠে দাহের সময়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দরজা-জানালা বন্ধ করেও আটকানো যায় না।” |
নাথুপালের কাছেই রয়েছে ব্যারাকপুরের রানি রাসমণি শ্মশান ও পানিহাটি শ্মশান। দু’টি শ্মশানেই বৈদ্যুতিক চুল্লি আছে। ফলে সেখানে ভিড় লেগে থাকে। প্রায় তিন বছর ক্ষমতায় আছে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। খড়দহ পুরসভার উপপ্রধান শ্যামলকুমার দেব বলেন, “আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেই ছিল নাথুপাল শ্মশানের উন্নয়নের কথা। কাজ করতে গিয়ে জায়গার সমস্যা হয়। কেএমডিএ জানিয়েছিল, ন্যূনতম পাঁচ কাঠা না হলে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো যাবে না। এর পরে আমরা শ্মশান লাগোয়া দু’কাঠা জমি কিনে নিই। ঢেলে সাজাতে খরচ হচ্ছে প্রায় দু’কোটি চল্লিশ
লক্ষ টাকা। ৮০ শতাংশ টাকা দিচ্ছে রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতর। বাকিটা পুরসভা দেবে। পুরো টাকা আসবে ধাপে ধাপে। সম্প্রতি কাজও শুরু হয়েছে।”
পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমান শ্মশানটি ভেঙে ফেলা হবে। তৈরি হবে ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ি।
এর মধ্যে দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশাপাশি থাকবে একটি কাঠের চুল্লিও। এ ছাড়া প্রতীক্ষালয়, বিশ্রামাগার, স্নানঘরও থাকবে। উপরে থাকবে স্টাফ কোয়ার্টার্স। |
সংলগ্ন আরও খানিকটা জমি কিনে বাগান তৈরি করার কথাও ভাবছে পুরসভা। দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও থাকছে। আলোয় সাজানো হবে শ্মশান ও সংলগ্ন ঘাটটিকে। পুরসভা সূত্রের খবর, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের শর্তই হল গঙ্গার ধারের প্রতিটি শ্মশানে বৈদুতিক চুল্লি বসাতে হবে। অনেক দিন আগেই এখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কথা। বিষয়টি মানছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান এবং এখন বিরোধী দলনেতা সিপিএমের ব্রজগোপাল সাহা। তাঁর কথায়: “আমরা চেষ্টা করেছিলাম। খড়দহে তখন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছিল। পাশের জমি আমরাও কিনতে চেয়েছিলাম। পারিনি। ওরা করছে যখন ভাল কথা।” নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়: “উপযুক্ত মূল্য দিলে জায়গা পাওয়া যাবেই। দাম দিয়েছি, তাই পেয়েছি। আমার দফতরের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, উন্নয়নের জন্য টাকা কখনও বাধা হবে না।” |