গ্রীষ্ম হোক বা শীত, এলাকায় পানীয় জলের অভাব থাকলেও দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর-২ নম্বর ব্লকের বেশ কিছু নার্সারিতে জলের অভাব হয় না। অভিযোগ উঠেছে, এলাকার আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল ‘চুরি’ করে অনেক নার্সারি চলে। ফলে জলের চাপ কমে যাচ্ছে। অনেক বাড়িতে ঠিকমতো জলই পৌঁছয় না।
২০০১-এ নোদাখালির ডোঙ্গারিয়া প্ল্যান্ট থেকে বজবজ, বিষ্ণুপুর, বারুইপুর, সোনারপুর, জয়নগর এলাকায় জল সরবরাহ শুরু করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে খবর, প্রতিটি বাড়িতে দিনে মাথাপিছু ৪০ লিটার জল বরাদ্দ করা হয়েছিল। সাধারণ বাড়িতে মাসিক ৩০ টাকা ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে জন্য মাসিক ৫০ টাকায় জল সরবরাহ করা হয়।
দক্ষিণ শহরতলির ওই সব এলাকায় সেচের অভাব রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “সেচের অভাব থাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের পাইপ থেকে জল চুরি শুরু হয়।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পাথরবেড়িয়া, রামকৃষ্ণপুর, পঞ্চানন, বাঁকড়াহাট, ন’হাজারি, কাঙ্গনবেড়িয়া, বরানপুর এলাকায় প্রায় ৩০০টি নার্সারি রয়েছে। কয়েকটি নার্সারি বাণিজ্যিক সংযোগ নিয়ে জল ব্যবহার করলেও অনেক নার্সারিই চুরি করা জল ব্যবহার করছে।
কী ভাবে জল চুরি হচ্ছে? |
নোদাখালির ডোঙ্গারিয়া থেকে বড় রাস্তা দিয়ে আট ইঞ্চির পাইপে জল সরবরাহ করা হয়। মূল রাস্তা থেকে বিভিন্ন পাড়ায় চার ইঞ্চির পাইপে জল যায়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “পাইপ কেটে সেখানে লোহার সকেট লাগিয়ে আরও একটি পাইপ জুড়ে দেওয়া হয়। সেই পাইপ দিয়ে নার্সারিতে জল যায়।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, নার্সারিতে দিনে প্রায় ৫০০-১০০০ লিটার জলের প্রয়োজন হয়। গভীর নলকূপ বা স্যালো মেশিন দিয়ে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। অভিযোগ উঠেছে, অনেক নার্সারিই আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল চুরি করে এই অভাব মেটায়। বিষ্ণুপুর-২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, এই এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বৈধ সংযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, প্রায় সাড়ে চার হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। নার্সারি ব্যবসায় বিপুল পরিমাণে জল চুরি যাওয়ায় জলের চাপ কম থাকে। ফলে মূল রাস্তা থেকে দূরের বাড়িতে জল পৌঁছয় না। জল চুরির জেরে নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু দাস বলেন, “পানীয় জল নার্সারিতে চলে যাচ্ছে। জলের চাপ খুবই কম। ভিতরের দিকের বাড়িতে জলই পৌঁছয় না। সারা বছর এই সমস্যা চলে।”
ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়: “বছর দুয়েক ধরে বিভিন্ন এলাকায় নার্সারি গজিয়ে উঠেছে। অবাধে চুরি হচ্ছে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল।” এলাকায় জল সরবরাহের বিষয়টি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রতিনিধি, স্থানীয় বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নিয়ে তৈরি কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির তত্ত্বাবধানেই ওই কমিটি কাজ করে। বিষ্ণপুর-২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোহন নস্কর জল চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা নানা ভাবে জল চুরি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে কিছুতেই তা বন্ধ করতে পারছি না।” এই বিষয়ে তিনি পঞ্চায়েত তথা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন বলে মনস্থির করেছেন।
ওই এলাকার একাধিক নার্সারি ব্যবসায়ীও জল চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, কয়েক জন ব্যবসায়ী মাসে ৫০ টাকা দিয়ে বাণিজ্যিক অনুমোদন নিয়ে জল ব্যবহার করলেও অনেক ব্যবসায়ী চেয়েও জলের সংযোগ পাচ্ছেন না। তাই তাঁরা এ ভাবে জল নিচ্ছেন। |