‘শ্রাবণে প্রয়াণ’ আয়োজন করেছিলেন বেহাগ। সন্ধ্যার সুর চমৎকার বেঁধে দিলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ওই দিনটি উপলক্ষে লেখা তাঁর ছোট্ট রচনা পাঠে। এই সন্ধ্যায় ছিলেন তিন শিল্পী। প্রথম রেখা চক্রবর্তী। গলায় সুর আছে। কিন্তু গায়নে প্রাণের অভাব। যেন নিখুঁত স্বরলিপি পড়া। তবু শেষের দিকে ইষৎ অনুভবী হয়ে ওঠেন। ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্যকে মঞ্চে সে ভাবে কেন পাওয়া যায় না, জানি না। সুরে দখল, নিখুঁত অলঙ্করণ, টপ্পার দানার নিপুণতা, উচ্চারণ, স্বর নিয়ন্ত্রণ সব মিলিয়ে ইন্দ্রাণীর গাওয়া সব গানই যেন শরীরী হয়ে ওঠে। গানের আত্মা প্রাণ পায়। শ্রোতাকে ক্ষণেক মন সরাতে দেয় না। ‘বুঝি ওই সুদূরে’ ঠুমরি অঙ্গের গানটি দিয়ে শুরু করেন ইন্দ্রানী, গানটি আগে কখনও শোনার সৌভাগ্য হয়নি, এতই বিরল। আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে এক নাটকীয়তার প্রকাশ। গাইলেন ‘শাওন গগনে’। ভরা বর্ষায় বিরহিনী শ্রীরাধিকার ছবি। বিরহ, আর্তি, অনুনয়-সব মিলিয়ে যে নাটকীয়তা, তার পূর্ণ প্রকাশ শেষ গানে ‘বন্ধু রহো’। ভাষ্যপাঠে সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় ঈষৎ উচ্চকিত। ভাল পার্থ দেববর্মার আবৃত্তি।
অবাক করলেন শৌনক চট্টোপাধ্যায়। কী দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী গায়ন। খোলামেলা গানের মেজাজ। বার বার মনে পড়ছিল শান্তিদেব ঘোষের কথা। ‘সঘন গহন’ নিবিড়তা পার হয়ে অনায়াসে চলে যান ‘কোন পুরাতন মাটির টানে’। ‘চিরসখা ছেড়ো না’ দক্ষতায় গেয়ে যান শৌনক।
|
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে আধুনিক গান শোনালেন শান্তিপ্রিয় সেনগুপ্ত। পর পর অনেকগুলি গান শোনালেন। তার মধ্যে ‘বসে আছি পথ চেয়ে’, ‘ওগো কাজল নয়না হরিণী’, ‘হয়তো তোমার জন্য’ গানগুলি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নেন শিল্পী। তবে এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন বলা যায় ‘কাহারবা নয়, দাদরা বাজাও’। পরিণত গলা ও নিয়মিত রেওয়াজে এখনও শিল্পীর কণ্ঠে বিভিন্ন রাগের গানগুলি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। বহু দিন আগে শিল্পীর গাওয়া রেকর্ডের একটি গান ‘নগর জীবন ছাড়িয়ে’ শুনতে মন্দ লাগল না। |