সঙ্গীত সমালোচনা ১...
যে সুর বদলে দেবে পৃথিবী
মরা চিন্তা নিয়ে জন্মাই না। চার পাশের সব কিছুকে নিয়ে বড় হই। যেমন এই মুহূর্তে ধর্ষণ, দুর্ভিক্ষ, হাহাকার, সিরিয়ার বিষবাষ্পে নিহত কত শিশু, মানুষ, রাজনৈতিক হানাহানি প্রভৃতি নানা অপরাধমূলক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দিন কাটাই। শঙ্কিত হই ভবিষ্যতের পানে চেয়ে। তাই তো সে দিন কারও কণ্ঠে বেজে ওঠে ‘পিতামহ আমি এক নিষ্ঠুর সময়ে বেঁচে আছি। দারুণ নিবিড় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ আমাদের সকলের প্রার্থনা অন্ধকার দূরীভূত হওয়ার’। সকলের এই প্রার্থনায় ভর করে তাই তিনি স্বপ্ন দেখেন সুর একদিন পৃথিবীর সমস্ত ক্রাইসিস-এর অবসান ঘটাবে। বদলে দেবে পৃথিবীর খোলনলচে। আর সেই বদল ঘটবে সঙ্গীতের মূছর্র্নায়। ভাষার সমস্ত রকম ব্যবধান ঘুচিয়ে কেবল সুরের উড়ানের মধ্যে দিয়েই আবদ্ধ হবে বিশ্বভ্রাতৃত্ব। সেই তিনি হলেন রাগ অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমির কর্ণধার ও পরিচালক স্মৃতি লালা। সম্প্রতি বিড়লা সভাঘরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের উপস্থিতিতে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ সাক্ষী থাকল তাঁর এই বিশ্বাসের পথ চলাতে।
অশুভের পাশাপাশি জীবনও বয়ে চলে বহতা নদীর মতো। আর সেই চলায় থাকে সুর, ছন্দ, তাল, গতি। সব মিলিয়ে এই গতিই হয়ে রইল সে দিনের ‘জার্নি’ প্রাণ। মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে এই ‘জার্নি’ পরিকল্পনা, পরিচালনা, সঙ্গীত পরিকল্পনা--সবই স্মৃতি লালার। প্রথমেই পিছনের সাদা পরদায় ফুটে উঠল প্রষ্ফুটিত ফুল। তার পরেই হাস্যময় শিশুমুখ। এই দুই চিত্রই বুঝিয়ে দেয় সকলেরই চলার পথে এদের দু’জনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ‘ক্রাইসিস’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ‘আলোর প্রাণে প্রাণের চলা’ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রায় টানা দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠানে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে তাই দেখলেন বৃন্দবাদন, কণ্ঠ, ভাষ্য, আলো সব মিলিয়ে, দলটির পেশাদারিত্ব চোখে পড়ার মতো। দুর্ভিক্ষপীড়িত, অনাহারে মৃত সমস্ত ছবি চোখের সামনে থেকে সরে গিয়ে ভেসে থাকল প্রকৃতির বিচিত্র রূপের খেলা। মরুভূমিতে সারিবদ্ধ ভাবে ‘উট চলেছে মুখটি তুলে’র ছবি বা গভীর অরণ্যে জিরাফের চমৎকার ছুটে চলার ছন্দ। প্রকৃতির সঙ্গে আমরা কী নিবিড় ভাবে জড়িত সেটাই বোধ হয় পরিচালিকা দেখাতে চেয়েছেন। ‘রাইজিং সান’ আর ‘সাইনিং মুন’ পৃথিবীর সব প্রান্তেই। সঙ্গীত শুধুমাত্র শব্দ নয়। সে যে সমষ্টিগত ভাবে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে তারই প্রতিধ্বনি মেলে সমগ্র বিশ্বসঙ্গীতে। স্মৃতি লালা তাঁর এই ‘জার্নি’তে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, লঘুসঙ্গীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন এবং বলতে দ্বিধা নেই সেখানে তিনি চূড়ান্ত সফল। সমবেত কণ্ঠে বিভিন্ন সরগমের সঙ্গে যন্ত্রগুলির অপূর্ব সংমিশ্রণ সপ্তসুরের সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে এক আনন্দদায়ক মাত্রা যোগ করেছে। এটাই ‘জার্নি’র বিশেষত্ব। দু’টি অংশের আলাদা উল্লেখ করতেই হয় যা গভীর ভাবে শ্রোতাদেরকে নাড়া দিয়েছে। প্রথমটি সরোদ (প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত), দোলন সেনগুপ্ত (সেতার), বাঁশি (অভিজিৎ মণ্ডল)-র একত্র বাদন ও দ্বিতীয়টি ‘সাউন্ড অব রিদম’ যেখানে পরিমল চক্রবর্তী (তবলা), প্রসেনজিৎ শীল (ঢোলক) ও থুম্বা (শঙ্খদীপ চট্টোপাধ্যায়), অঙ্কুর হালদার (অক্টোপ্যাড), সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় (ভায়োলিন), বজ্রমানিক দাস (কি-প্যাড) একেবারে মাতিয়ে দিয়েছেন। শুরুতে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করে স্মৃতি লালার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজকর্মের প্রতি আলোকপাত করেন ও আশা প্রকাশ করেন তাঁরই মতো আরও অনেকেই এই ধরনের কর্মযজ্ঞে সামিল হবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি অমিতাভ লালা ও কল্লোল দত্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.