উত্তরাখণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে গঙ্গা। কিন্তু তাতে বিসর্জনের বিধি নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট নীতি নেই। ফলে কোনও একটি রাজ্য বিসর্জন নিয়ে কড়াকড়ি করলেও গঙ্গায় দূষণ কমছে না কিছুতেই। পরিবেশবিদেরা বলছেন, গঙ্গা কিংবা যমুনার সঙ্গে অন্যান্য ছোট নদীও যুক্ত। ফলে সারা দেশে অভিন্ন বিসর্জনবিধি লাগু না করলে এই দূষণ ঠেকানো যাবে না।
বিশেষজ্ঞদের এই অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতেই গত সোমবার জাতীয় সবুজ আদালতে একটি আর্জি দাখিল করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি জানিয়েছেন, ইলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে গঙ্গা-যমুনায় বিসর্জন নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্ত দেশের অন্য জায়গায় এমন বিধি না থাকায় দূষণ ছড়াচ্ছেই। শুধু গঙ্গা বা যমুনা নয়, সমুদ্র-সহ দেশের অন্যান্য নদী বা জলাশয়েও বিসর্জন বিধি চালু করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনাচক্রে, দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতায় দুর্গাপুজোর সময় গঙ্গায় বিসর্জন নিয়ে পরিবেশবিদেরা সরব ছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে সুভাষবাবুই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আদালত নির্দেশ দেয়, বিসর্জনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গঙ্গা থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলে ফেলতে হবে।
নদীর জলে ফেলা যাবে না ফুল বা প্রতিমার সাজ-সরঞ্জামও। ২০১১ সাল থেকে সেই নির্দেশ মেনেই বিসর্জন হচ্ছে মহানগরে। কিন্তু তাতেও ছবিটা বদলায়নি। তথ্য বলছে, এ সব সত্ত্বেও দূষণ পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। যার ব্যাখ্যা হিসেবে এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, “গ্রাম বা মফস্সলে পরিবেশ-বিধি মেনে বিসর্জন না হওয়ায় গঙ্গা দূষিত হচ্ছে। সেই স্রোতই বয়ে আসছে মহানগরে।”
এই ধরনের দূষণের প্রেক্ষিতেই সুভাষবাবু আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী, আইনবিদ এবং ধর্মগুরুদের পরামর্শ নিয়ে অভিন্ন বিসর্জন বিধি তৈরি করা হোক। বিধি মেনে বিসর্জন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালত একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি তৈরি করুক। পরিবেশ আদালত সুভাষবাবুর আর্জি গ্রহণ করেছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর মামলাটির ফের শুনানি হবে। |