বন্ধ টিকিট কাউন্টার |
যাত্রী সচেতনতা শিকেয়, চলছে ঝুঁকির পারাপার |
সুপ্রিয় তরফদার |
বছর বত্রিশের এক মহিলা। কাঁধে দুটো ব্যাগ। দু’হাতে ধরা দুই শিশুর হাত। গন্তব্য হাওড়া ফেরিঘাট থেকে বেড়িয়ে রেল স্টেশন। কিন্তু সাবওয়ে ব্যবহার না করে তিনি এগোলেন ব্যস্ত রাস্তার দিকে। সামনের লেন দিয়ে চলে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি। নেই সিগন্যালও। তবুও ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের হাত ধরে কোনও মতে দৌড়ে রাস্তা পেরলেন বাগনানের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দাস। তবে ফেরিঘাট থেকে স্টেশনে যাওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পেরনোর এই চিত্র অবশ্য নতুন নয়। অভিযোগ, সাবওয়ে থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এমন অসচেতন ভাবে পারাপার করেন।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? |
এ ভাবেই চলছে রাস্তা পারাপার। |
ফেরিঘাটের ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে হাওড়ার পুরনো কমপ্লেক্সের টার্মিনাল-১। সেখান থেকেই এখন যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। ফেরিঘাট থেকে স্টেশনে যাওয়া যায় দু’ভাবে। সাবওয়ে ব্যবহার করে অথবা ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে। সাবওয়ের টিকিট কাউন্টার চালু থাকলে ফেরিঘাট থেকে আসা যাত্রীরা টিকিট নিয়ে সহজেই স্টেশনে পৌঁছতে পারেন।
কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, সাবওয়ের টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকায় টিকিট নিতে হয় টার্মিনাল-১ থেকে। সে ক্ষেত্রে সাবওয়ে দিয়ে গেলে অনেক বেশি ঘুরতে হয়। তাই অধিকাংশ যাত্রী সাবওয়ে এড়িয়ে ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে যাতায়াত করেন।
রেল সূত্রে খবর, ফেরিঘাট থেকে হাওড়া স্টেশনে যাওয়ার জন্য ১৯৯০ সালে সাবওয়েটি তৈরি হয়। তখনই রেলের উদ্যোগে এর মধ্যে তৈরি হয় পাঁচটি টিকিট কাউন্টার। এই কাউন্টারগুলি থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিট দেওয়া হত। এখন কাউন্টারগুলি বন্ধ।
স্টেশনে ঢোকার দ্বিতীয় উপায় হল রাস্তা পেরনো। কিন্তু এতে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, রাস্তার এই অংশে কোনও সিগন্যাল নেই। এবং দু’টি লেন দিয়েই ক্রমাগত যান চলাচল করে। এর পরেই রয়েছে প্রিপেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। বিশেষত সন্ধ্যার দিকে রাস্তা পেরনো বিপজ্জনক। তবুও নিরাপত্তার কথা না ভেবে অধিকাংশ যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা পারাপার করেন। নিত্যযাত্রী দেবকুমার দেবনাথ বলেন, “সাবওয়ের কাউন্টার বন্ধ। তাই সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পেরিয়ে যাতায়াত করি।”
পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, “সাবওয়ে চালু রয়েছে। বন্ধ কেবল টিকিট কাউন্টারগুলি। তা সত্ত্বেও যাত্রীরা কেবল মাত্র খানিকটা সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করেন। যাত্রীরা সচেতন না হলে এই সমস্যার সমাধান হওয়া মুশকিল।” হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “পুর-নির্বাচনের পরে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব।” |
বন্ধ সাবওয়ের টিকিট কাউন্টার। |
‘হাওড়া স্টেশন পরামর্শদাতা কমিটি’র সদস্য অরবিন্দ রায় বলেন, “কমিটির পরের বৈঠকে এ নিয়ে কথা হবে। রেল কর্তৃপক্ষকেও অনুরোধ করা হবে যদি সাবওয়ের টিকিট কাউন্টার ফের চালু করা যায়।”
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “হাওড়া স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সেখানে বেশি লোক নিয়োগ করতে হয়েছে। কর্মী-সমস্যার কারণেই সাবওয়ের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। এখনই ওই কাউন্টার খোলার বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
|
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
|