পুজোর মরসুমে পুরসভার ‘ঢিলেঢালা নজরদারি’র অভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঠান্ডা পানীয়ের দোকান ফের গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রের খবর, চার পাঁচ মাস আগে থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় চালু হয়েছিল ঠান্ডা পানীয়ের দোকানগুলি। বিভিন্ন রং, স্বাদ ও সুগন্ধী যুক্ত ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবসা শুরু হয়। কিন্তু পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ওই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন অভিযোগ ওঠে। সেই সময় কিছু দোকান বন্ধও করে দেওয়া হয়। তার পর পুজোর মরশুম শুরু হতেই ফের দোকানগুলি চালু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে এখনও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বাসিন্দাদের কথায়, “একদিকে লাইসেন্স ছাড়া ওই ব্যবসা চলছে। তার উপরে ভিন্ন স্বাদের ওই পানীয়তে কী ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোন সঠিক তথ্য নেই পুরসভার কাছে। এতে যে কোনও সময় মারাত্মক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” যদিও পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ওই ঠান্ডা পানীয়তে কী ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রিপোর্ট আসেনি। এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, শপিং মল এলাকায় গজিয়ে উঠেছে ওই দোকানগুলি। তাঁরা কী করে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে তা নিয়ে তৃণমূলের পাশাপাশি বামেরাও প্রশ্ন তুলেছেন বামেরাও। তাঁদের অভিযোগ, শহরে ব্যবসা করতে হলেই ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেখানে লাইসেন্স ছাড়া কর ফাঁকি দিয়ে কি করে ব্যবসা চলছে তা বোঝা যাচ্ছে না। পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “একদিকে দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা চলছে। আর কী রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার রিপোর্ট এখনও জানতে পারেনি পুরকর্তারা। কী হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না।”
পুরসভার কয়েকজন আধিকারিক জানিয়েছেন, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন সংস্থার ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবসার কাগজ দেখিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকঠাক কাগজপত্র না থাকায় ঠান্ডা পানীয় ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয় পুরসভা। অভিযোগ, পুজোর ছুটিতে নতুন করে কয়েকটি এলাকায় ফের দোকান খোলা হয়েছে। সেই দোকানগুলির বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি পুরসভা।
পুজোর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের তিন নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান নিখিল সাহানি নিজের এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দোকান বন্ধ করে ছিলেন। পানীয়তে ব্যবহার করা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানোর কথাও মেয়র ও পুর কমিশনারকে জানিয়ে ছিলেন। নিখিলবাবুর অভিযোগ, “ঠিকঠাক কাগজপত্র না থাকার কারণে বন্ধ করে দেওয়ার পরেও দোকানগুলি ফের ব্যবসা করছে। পুর কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কী কারণে গড়িমসি তা পরিস্কার নয়।”
অভিযোগ মানতে নারাজ পুরসভার কংগ্রেস মেয়র পারিষদ (ট্রেড লাইসেন্স) দেবশঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, “আমরা পরীক্ষাগারের রিপোর্ট আসার জন্য অপেক্ষা করছি। ওটা হাতে পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব। ঠান্ডা পানীয়ের দোকানগুলিকে কোন লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। কোনও বেআইনি ব্যবস্থা করতে দেওয়া হবে না।” যদিও ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁরা সঠিক কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা করছেন। পুরসভা চাইলে তাঁরা তা দেখাবেন। পুরসভা লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করায় তা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। |