বিনোদন চিতাভস্মও পাঠাতে চায়
না মান্নার ক্ষুব্ধ পরিবার

মান্না দে-র মরদেহ কলকাতায় আনতে দিতে সম্মত হয়নি তাঁর পরিবার। কিন্তু চিতাভস্ম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভবশত সেই প্রস্তাবও নাকচ করে দিলেন শিল্পী-কন্যা সুমিতা ও জামাই জ্ঞানরঞ্জন দেব।
মান্নার চিতাভস্ম কলকাতায় নিয়ে এসে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন সুমিতারা। এ দিন মত পাল্টালেন কেন? জ্ঞানরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, “মান্নার অনুরাগীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চিতাভস্ম কোথাও রাখা হলে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীই ফোনে বলেছিলেন, ছাই-টাই উনি চান না। এটা শুনতে ভাল লাগেনি। তাই আমরাও কলকাতায় চিতাভস্ম নিয়ে যাওয়ার কথা আর ভাবছি না।”
এ ব্যাপারে সরকারের কী বক্তব্য? প্রশাসন সূত্রের খবর, মান্নাবাবুর দেহ আনতে না পেরে ওঁরা এমনিতেই হতাশ। পাছে ফের প্রত্যাখ্যাত হতে হয়, এই আশঙ্কায় চিতাভস্ম আনার জন্য মান্নার পরিবারের কাছে তাঁরা আর অনুরোধ জানাতে চান না। তবে শিল্পী-কন্যা নিজে চিতাভস্ম নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলে রাজ্য সরকার যথোচিত মর্যাদা দিতে প্রস্তুত।
সব মিলিয়ে মান্না দে-র পরিবার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে মনোমালিন্যের মেঘ এ দিনও কাটল না।
পাঁচ মাস ধরে রোগভোগের পর বৃহস্পতিবার ভোররাতে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে প্রয়াত হন মান্না। সরকারি সূত্রের দাবি, ভোরবেলা খবর পাওয়ামাত্র মুখ্যমন্ত্রী নিজে শিল্পীর মরদেহ আনতে চেয়ে বেঙ্গালুরুতে যোগাযোগ করেছিলেন। শিল্পীর পরিবারের বক্তব্য, রাজ্য সরকার যত ক্ষণে যোগাযোগ করেছে, তার আগেই তাঁরা অন্ত্যেষ্টির ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন। তা ছাড়া শিল্পী-কন্যা সুমিতা অভিযোগ করেন, শিল্পী অসুস্থ থাকাকালীন তাঁরা বারবার রাজ্য সরকারকে আবেদন করেছিলেন, যাতে শিল্পীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি বলে সুমিতার দাবি।
সুমিতা বৃহস্পতিবারই বলেছিলেন, “আমরা শুধু চেয়েছিলাম, আমার বাবার নিজের টাকা যাঁকে বিশ্বাস করে রাখতে দিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হোক। আমরা কারও কাছে চাঁদা চাইনি।” শুক্রবারও এই নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি তিনি।
সরকারি তরফে আগের দিন বলা হয়েছিল, আইন মোতাবেক যা করণীয়, তা-ই করা হচ্ছে। এ দিন প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তারা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, আইন মেনে এই অভিযোগ প্রমাণ করা কার্যত অসম্ভব। পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “যদি কেউ বিশ্বাসভঙ্গ করেও থাকেন, আইন মেনে তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।” ঘটনাটা কী?
২০০৮ সালে কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভাইপো তড়িৎ দে-র সঙ্গে একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন মান্না। ২০১০ সালে শেষ বার কলকাতায় আসা পর্যন্ত মান্না নিজে নিয়মিত ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন। এ বছরে মান্না অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে মান্নার মেয়ে সুমিতা অভিযোগ করেন, মান্নার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও লকার থেকে মোট ৩০ লক্ষ টাকার নগদ ও গয়না সরানো হয়েছে। অভিযোগের আঙুল তড়িৎবাবুর দিকে। মান্না দে-র টিপসই সম্বলিত একটি অভিযোগপত্রও পুলিশের কাছে জমা পড়ে। কিন্তু তদন্ত চালিয়ে পুলিশের দাবি, মান্না নিজেই ২০১১ সালে ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানান, তড়িৎ ওই জয়েন্ট অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করবেন। তার পর থেকেই তড়িৎবাবু ওই অ্যাকাউন্টের লেনদেন করতেন বলে জানতে পারে পুলিশ। তড়িৎবাবুর পক্ষ থেকেও টাকা লোপাটের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
পুলিশি তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে এর পর মান্নার মেয়ে-জামাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট পুলিশকে নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশের জন্য ১০ সপ্তাহ সময় দিয়েছে এবং ১৪ সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে সব কিছু জানাতে বলেছে। এখন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্যে নারাজ পুলিশ কর্তারা। তবে পুলিশের শীর্ষ স্তরের একটি সূত্র বলছে, আইন মেনে যা যা করা সম্ভব, মান্নাবাবুর মেয়ে-জামাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তা-ই করা হয়েছে। কিন্তু সুমিতার অভিযোগ, এসএমএস মারফত তড়িৎবাবু টাকা সরানোর অভিযোগ মেনে নেন। আদালতে সেই তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়েছে। পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ কিছু করছে না।
আবার পুলিশ জানিয়েছে, তড়িৎবাবু একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থায় কাজ করেন। সেই সুবাদে তিনি কিছুটা সস্তায় ওষুধ কিনতে পারতেন। পুলিশকে তড়িৎ জানিয়েছেন, মান্নার চিকিৎসার জন্য যে ওষুধের দরকার পড়ত, তা জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের টাকায় কিনে বেঙ্গালুরুতে পাঠাতেন তিনি। এ দিন সিমলেপাড়ায় মান্না দে-র পৈতৃক বাড়ি থেকে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাওয়া হয়নি। তড়িৎবাবুর তরফে আগের মতোই সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
মান্নার মেয়ে-জামাই এ দিন বলেন, বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে পাঁচ মাসে ৪১ লক্ষ ৬০০ টাকার বিল হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ টাকা তাঁরা মিটিয়ে দিয়েছেন। সুমিতা বলেন, “হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ বাকি টাকাটা সুবিধা মতো আমাদের মেটাতে বলেছেন।” তাঁর দাবি, “আমার বাবার প্রখর আত্মমর্যাদা ছিল। উনি চেয়েছিলেন, ওঁর নিজের টাকাতেই চিকিৎসা হবে। সেই জায়গা থেকেই আমরা বাবার টাকার জন্য লড়াই করছি।” রাজ্য সরকার সেই লড়াইয়ে সাহায্য না করে শুধু মরদেহ আনার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল বলেই তাঁদের মনে হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকেই তাঁরা মরদেহ পাঠাননি।
কলকাতায় মান্নার আর এক ভাইপো সুদেব দে অবশ্য বলছেন, “মান্নাকে বাংলার মানুষ শেষ দেখা দেখতে পেলেন না এটা দুর্ভাগ্যের। কিছু ক্ষণের জন্য মৃতদেহ কলকাতায় নিয়ে এসে ফের বেঙ্গালুরুতে আমার কাকার (মান্না) ইচ্ছা অনুযায়ী হেব্বাল মহাশ্মশানে শেষকৃত্য করা যেতেই পারত। ওঁর মেয়ের হঠকারিতার জন্যই এমনটা ঘটল।”

পুরনো খবর:

স্মরণ খড়্গপুরে
প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে-র স্মরণসভার আয়োজন করল খড়্গপুর বিবেকানন্দপল্লি দুর্গাপুজো কমিটি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের উদ্যোগে মোমবাতি জ্বালিয়ে সঙ্গীতশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে এক মিনিটের নীরবতা পালন করে গানের মধ্যে দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.