হাঁসের ডিম বিক্রি করে ১৫০ টাকা দিয়েছেন সন্ধ্যা মাহাতো। পঞ্চমী আবার বাড়ির ছাগলটিকেই বিক্রি করে জোগাড় করেছেন ১৩০ টাকা। আর বাড়ি বাড়ি চিঁড়ে বিক্রি করে ৭০ টাকা দিতে পেরেছেন শকুন্তলা।
এ ভাবেই টাকা জমিয়ে তাঁরা একজোট হয়েছেন লক্ষ্মীর আরাধনায়। বায়না করে প্রতিমা নিয়ে আসা থেকে মণ্ডপসজ্জা, যাবতীয় কাজ তাঁরা নিজেরাই সামলেছেন।
এ বারই অবশ্য প্রথম নয়। গত বছর থেকেই ওই মহিলারা লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন শুরু করেছেন। কিন্তু পুরুলিয়া শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের এমন একটি গণ্ডগ্রামে পুরুষদের সাহায্য ছাড়া আস্ত একটা পুজো সামলানো তো চাট্টিখানি কথা নয়! ফলে জবলা গ্রামের মহিলা পরিচালিত এই লক্ষীপুজো এখন এলাকার মর্যাদার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। পুজো হয় গ্রামেরই একটি ক্লাবঘরে। অন্যতম উদ্যোক্তা বেহুলা মাহাতো বললেন, “আমাদের পুজো কমিটির সদস্যের অধিকাংশই বাড়ির বধূ। প্রায় সকলেই কায়িক পরিশ্রম করে সংসার চালান। আমরা কারও সাহায্য নিইনি। নিজেরাই চাঁদা দিয়ে পুজোর খরচ তুলেছি।” শুক্রবার সকাল থেকেই পুজোর ভোগ, নৈবেদ্য জোগাড় করেছেন। রঙিন কাগজ কেটে ভারি সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন নিজেদের ছোট্ট মণ্ডপ।
এই ভাবনা এলো কীভাবে? |
পুজোর আর এক উদ্যোক্তা, মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য গীতা মাহাতোর কথায়, “আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী স্বনির্ভরতার কথা বললেও ঘটনা হল, এখনও বহু গ্রামেই মেয়েরা বিভিন্ন কাজে পুরুষদের উপরেই নির্ভর করেন। সেই নির্ভরতা কাটাতেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।” এ বার ইচ্ছে থাকলেও ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় ওই মহিলারা দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে পারেননি। তাই স্বল্প পরিসরে লক্ষ্মীপুজোতেই নেমেছেন। গীতাদেবী জানালেন, বাজার করা, হিসেব রাখতে শেখা, নেমন্তন্ন করা সবটাই করেছেন ওই মহিলারাই। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অর্জুন মাহাতো, দেবদাস মাহাতো বললেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম ওরা পারবে না। কোথাও একটা ঠেকে যাবে। শেষ অবধি আমাদেরও হাত লাগাতে হবে। কিন্তু ওরা আমাদের ভুল প্রমাণ করেছে।”
দিনমজুরি আর ঘরের হেঁশেল ঠেলে যাঁদের বেশির ভাগ সময়টাই চলে যায়, সেই মেয়েরা নিজেদের সামিল করতে চাইছেন জীবনের আরও একটু বিস্তৃত পরিসরে। লক্ষ্মীপুজোর সফল আয়োজনের পরে আগামী দিনে ওই ক্লাবঘরে তাঁরা একটি অবৈতনিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে চান। “গ্রামের যে-সব মেয়ে রাখালি করে, ঘুঁটে-গোবর কুড়িয়ে কিংবা পরিচারিকার কাজ করে বেঁচে থাকে তাঁদের জন্য ওই স্কুলে রোজ সন্ধ্যায় বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের বাড়ির হাইস্কুলে পড়া মেয়েরাই ওদের পড়াবে,” একরাশ স্বপ্ন চোখে বলছেন সন্ধ্যা, শকুন্তলা, বকুল মাহাতোরা। |