|
|
|
|
অর্থ লগ্নির প্রতারণা রুখতে পুরনো
দুই অস্ত্রেই এ বার শান দিচ্ছে রাজ্য সুপ্রকাশ চক্রবর্তী • কলকাতা |
অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন যত দ্রুত সম্ভব কঠোর আইন প্রণয়ন করতে। কিন্তু কিছু প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকার বিলটি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার থেকে টাকা তোলার কারবারে লাগাম পরাতে রাজ্য প্রশাসন আপাতত নির্ভর করছে পুরনো দু’টি আইনের উপরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন, আর ১৯৭৮-এর ‘প্রাইজ চিট অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন’ আইন। অবৈধ অর্থ লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম প্রতিরোধে তাতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং থানার ওসি-দের যে সব ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেগুলি এ বার যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করতে নির্দেশ জারি করেছে সরকার।
মহাকরণ-সূত্রের খবর: আইন দু’টি পুরনো হলেও এত দিন তা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করার কথা রাজ্য সে ভাবে ভাবেনি। “অথচ ওই আইনে বলীয়ান হয়ে ডিএম-এসপি-ওসিরা কার্যকর ভূমিকা নিলে বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার অবৈধ কার্যকলাপ ঠেকাতে আগেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।” আক্ষেপ করছেন অর্থ দফতরের এক কর্তা। তিনি জানাচ্ছেন, নিজস্ব আইন তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত পুরনো দুই পুরনো আইনের সাহায্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পথে হাঁটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। |
প্রতিকার পঞ্জি |
• ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ৩,৪৬৬ জন আমানতকারীর প্রায়
৭ কোটি টাকা ফেরতের বন্দেবস্ত
• ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার নামে ৩৬৬টি অভিযোগ
• (২৫৮টি আসে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও অর্থমন্ত্রীর
কাছে। বাকি সব আর্থিক অপরাধদমন শাখায়)
• এর মধ্যে ১২৯টি নালিশের তদন্ত। ৬৩ জনের ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা ফেরত। বাকিগুলি তদন্তাধীন |
|
আইন দু’টি প্রশাসনকে কী ক্ষমতা দিচ্ছে?
অর্থ-সূত্রের খবর: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ৪৫ ও ৫২(ই) ধারায় জেলা প্রশাসনকে সন্দেহভাজন লগ্নি সংস্থার অফিসে তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত ও গ্রেফতারির (সার্চ, সিজার অ্যান্ড অ্যারেস্ট) ক্ষমতা দেওয়া আছে, যা প্রয়োগ করতে জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের অর্থ-সচিব। অন্য দিকে বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তোলার কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঢালাও ক্ষমতা সমস্ত থানার ওসি-দের দিয়েছে ‘প্রাইজ চিট অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন’ আইন।
মহাকরণ-সূত্রের দাবি: সেটি ঠিকঠাক প্রয়োগের ক্ষেত্রেও এত দিন পুলিশ ততটা সক্রিয় ছিল না। এ বার ওসি’রা যাতে যথাস্থানে সেই ক্ষমতা প্রয়োগে দ্বিধা না-করেন, সে ব্যাপারে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের কর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত অবৈধ অর্থ লগ্নি-ব্যবসা প্রতিরোধে ’৭৮-এর আইনটি পুলিশের হাতে যে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, উপযুক্ত ব্যবহার হলে তা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ। কী রকম?
এক সরকারি মুখপাত্রের ব্যাখ্যা, ‘প্রাইজ চিট অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন’ আইনবলে থানার ওসিস্তরের অফিসারেরা দিনে-রাতে যে কোনও সময়ে প্রয়োজনে বলপূর্বক সন্দেহভাজন সংস্থার চত্বরে ঢুকে তল্লাশি চালাতে পারবেন। নথিপত্র, গাড়ি ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করতে পারবেন। এমনকী, বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতারও করা যাবে। শর্ত, ধৃতদের ন্যূনতম চিফ জুডিশিয়াল বা চিফ মেট্রোপলিট্যান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করতে হবে।
এ দিকে সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্প্রতি আমজনতার স্বর্থে ‘সরকারি’ সঞ্চয় প্রকল্প চালু করার কথা ঘোষণা করেছে। মহাকরণের দাবি, ওই ‘সেফ সেভিংস স্কিম’ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত, সেখানে গচ্ছিত অর্থ মার যাওয়ার ভয় নেই। প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। পাশাপাশি সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রতারণার শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের টাকা ফেরানোরও ব্যবস্থা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার নিশ্চিত করতে চাইছে, বেশি সুদের লোভে পড়ে অবৈধ ‘পঞ্জি’ স্কিমে মানুষ যাতে আর বিনিয়োগ না-করেন।
এবং এই কারণেই পুরনো আইনকে হাতিয়ার করে অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালানোর সবুজ সঙ্কেত পুলিশ-প্রশাসনকে দেওয়া হল বলে মনে করছে সরকারি মহল। এক অর্থ-কর্তার কথায়, “এখনও রোজ গড়ে চার-পাঁচটা অভিযোগ আসছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, প্রতারণার কারবার অব্যাহত।”
এ হেন পরিস্থিতিতে সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে অবৈধ কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। “রাজ্যের নিজস্ব আইন যখন হল না, তখন পুরনো আইন দিয়েই আপাতত কাজ চালাতে হবে।” বলেন কর্তাটি।
|
পুরনো খবর: ফৌজদারি অস্ত্র ছিলই, নড়ে বসেনি রাজ্য |
|
|
|
|
|