|
|
|
|
দাবি সঞ্চয়িতা-ওভারল্যান্ড কাণ্ডের গোয়েন্দাদের |
ফৌজদারি অস্ত্র ছিলই, নড়ে বসেনি রাজ্য |
অশোক সেনগুপ্ত ও সোমনাথ চক্রবর্তী• কলকাতা |
সারদা-কাণ্ডে দোষীদের কড়া সাজা দেওয়ার আইনি অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার যথাসময়ে তা প্রয়োগ করেনি বলে মনে করছেন সঞ্চয়িতা-কাণ্ড এবং ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ।
ওই অফিসারদের দাবি, ভারতীয় দণ্ডবিধির যে সমস্ত আইন রয়েছে, তাতেই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যায়, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যায়, বাজার থেকে তাদের টাকা উদ্ধারও করা যায়। এর জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন নেই। অফিসারেরা জানিয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করেই সঞ্চয়িতা কাণ্ডে বাজার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে ক্রোক করা হয়েছিল অভিযুক্তদের দেড় হাজার বিঘার বেশি জমি। সঞ্চয়িতার মামলা এখনও চলছে। দীর্ঘ আইনি জটিলতার জেরে ধৃত ১৩০ জনের মধ্যে কারও এখনও সাজা হয়নি। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে ধৃত পাঁচ জনের কাউকেই কড়া শাস্তি দেওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু সেটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে। অফিসাররা বলছেন, অভিযুক্তদের এখনও সাজা দেওয়া না গেলেও সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে থানায় এফআইআর করেছিল। তার সুফলও মিলেছে এবং সেটা হয়েছে বর্তমান ফৌজদারি আইনের জেরেই।
ওই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে এফআইআর করেছিল অর্থ দফতরের ‘ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’। ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা করেছিল রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। অথচ সেবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেও রাজ্য সরকারের কোনও সংস্থাই সারদা-র বিরুদ্ধে এফআইআর করেনি। তারা অপেক্ষা করেছে একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বেতন না পাওয়া কর্মীদের দায়ের করা প্রতারণার অভিযোগের জন্য। এ ক্ষেত্রে অন্যের দায়ের করা অভিযোগের উপরেই রাজ্য সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারীরা জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল সিআইডি। সেই ধারায় (নকল কাগজ বানিয়ে প্রতারণার অভিযোগ) দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অথচ রাজ্য সরকার সারদা-কাণ্ডে এই আইনি অস্ত্রটাই প্রয়োগ করেনি বলে তাঁদের মত। প্রসঙ্গত, ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারী দলের প্রধান তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এখন রাজ্যের মন্ত্রী।
ওই মামলায় উপেনবাবুর এক সহকারীর কথায়, “আমরা ওভারল্যান্ডের মালিক, তাঁর স্ত্রী-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিলাম। কত জনকে সাজা দিতে পেরেছিলাম সেটা বড় কথা নয়। আমরা আমাদের বাহিনীর সাহায্যে গোটা প্রতারণা চক্রটাকে প্রকাশ্যে এনেছিলাম। ১ হাজার ৫৪৬ বিঘে জমি ক্রোক করেছিলাম।”
ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এক বিধবার গচ্ছিত টাকা একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ফেরত দিচ্ছে না বলে ভবানী ভবনে অভিযোগ আসে। বেশ কিছু মানুষ সোনারপুরে ওই সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালায়। তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) দুই অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাঁরা ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। কাগজপত্র দেখে স্থানীয় থানায় ডায়েরি করে ঘটনার তদন্তভার নিজের হাতে নিয়ে নেয় সিআইডি। ওই অর্থলগ্নি সংস্থাটি যে প্রতারণা করছে, তদন্তে তা বুঝতে পারেন গোয়েন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার করা হয় ওভারল্যান্ড-সহ বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থার মালিককে। ওভারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে উদ্ধার হয় টাকা, সম্পত্তি। উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ এবং কত মানুষ টাকা ফেরত পেয়েছেন, সে বিষয়ে অবশ্য তদন্তকারীরা কিছু জানাতে পারেননি। এক অফিসার বলেন, “হাইকোর্ট রিসিভার বসিয়েছে। পুরো বিষয়টি রিসিভারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।”
সঞ্চয়িতার তদন্ত কী ভাবে শুরু হয়েছিল? তদন্তকারী অফিসার তুষার ভট্টাচার্য জানান, রাজ্য সরকারের কাছে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকায় ১৯৭৯-তে সঞ্চয়িতার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। তিনি তাঁর দফতরের অধীন ‘ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’-এর একটি দলকে তদন্তে নামান। গ্রেফতার করা হয় ১৩০ জনকে। তুষারবাবুর কথায়, “আমরা যেটুকু করেছিলাম, তা ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার সাহায্যেই। নতুন আইনের দরকার হয়নি।” তাঁর বক্তব্য, বাজার থেকে সঞ্চয়িতা যে পরিমাণ অর্থ তুলেছিল, তার প্রায় ৪০ শতাংশ উদ্ধার করা গিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত অর্থ বিলি করা যায়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে রিসিভার বসানো হয়েছিল। রিসিভারই যা বলার বলবেন।
সারদা-কাণ্ডে কেন নিজে থেকে অভিযোগ দায়ের করল না রাজ্য? স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আগের দু’টি ঘটনার সঙ্গে সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতটা আলাদা। সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের কাছে আগে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। যে মুহূর্তে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্য ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার সঠিক পথেই চলেছে।”
|
তিন কেলেঙ্কারি |
|
এফআইআর করেছে |
কোন ধারায় মামলা |
সঞ্চয়িতা-কাণ্ড |
অর্থ দফতরের ব্যুরো
অফ ইনভেস্টিগেশন |
১২০ (বি) (ষড়যন্ত্র),
৪০৬ (ষড়যন্ত্র করে প্রতারণা),
৪২০ (প্রতারণা) |
ওভারল্যান্ড-কাণ্ড |
সিআইডি |
১২০ (বি) (ষড়যন্ত্র),
৪০৬ (ষড়যন্ত্র করে প্রতারণা),
৪২০ (প্রতারণা),
৪৬৭ (নকল কাগজ বানিয়ে
প্রতারণা),
৪৬৮ (জালিয়াতি করে প্রতারণা) |
সারদা-কাণ্ড |
একটি চ্যানেলের
সাংবাদিকেরা |
৪০৬ (ষড়যন্ত্র করে প্রতারণা),
৪২০ (প্রতারণা)
৫০৬ (ভয় দেখানো) |
|
|
|
|
|
|