বাগানকে জয়ে ফেরালেন রাম
মোহনবাগান- ৩ (রাম, মুরান্ডা, সাবিথ)
আর্মি একাদশ- ০
ক্তিগড়ের ল্যাংচা। নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে! তবে ‘রসের রানি’র আঁতুড়ঘর থেকে পনেরো কিলোমিটার ভিতরে জৌগ্রামে ল্যাংচা-ট্যাংচার কোনও চল নেই। ধান আর আলু চাষিদের ঠাসা ভিড়। সেই চাষিদের ঘরেরই ছেলে রাম মালিকের দাপটে বৃহস্পতিবার টানা চার ম্যাচ পরে আলোর মুখ দেখল করিমচাচার বাগান।
তিন বছর আগে মোহনবাগান অ্যাকাডেমি থেকে ইউনাইটেড স্পোর্টসে আত্মপ্রকাশ। জাতীয় দলের গোলকিপার সন্দীপ নন্দীর খোঁজ। পরে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ, এরিয়ান হয়ে মোহনবাগানে। রামের প্রাক্তন কোচ রঘু নন্দী বলছিলেন, “গত বছর যুবভারতীতে মোহনবাগান-এরিয়ান ম্যাচের সময়ই করিমের ওকে খুব পছন্দ হয়ে যায়। রামের সবচেয়ে বড় গুণ ওর গতি। করিম ওকে ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে, মোহনবাগান আরও সাফল্য পাবে।”
বারাসতে বাগান-পতাকা নিয়ে খুদে সমর্থক। ছবি: উত্‌পল সরকার।
বৃহস্পতিবার বারাসত স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর তরুণ-ব্রিগেডকে কার্যত নাকানিচোবানি খাইয়ে দিলেন রাম। ‘ডাউন দ্য মিডল’ দৌড় এবং নিখুঁত পাসের জোরে। স্বয়ং বাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফাও ম্যাচ-শেষে বলে গেলেন, “আমার মিনি কাতসুমি। এত ভাল বল কন্ট্রোল খুব কম দেখেছি।” ম্যাচ শুরুর মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যেই এরিক মুরান্ডার পাস থেকে সূক্ষ্ম টোকায় প্রথম গোলের মুখ খুললেন রাম। বর্ধমানের বাসিন্দা বলছিলেন, “গোলটা আমার জৌগ্রাম কোচিং ক্যাম্পের গুরু রতন দাসকে উত্‌সগর্র্ করতে চাই। রতনদা না থাকলে আমি কোনও দিন ফুটবলার হতে পারতাম না। আমি রহিম নবির মতো হতে চাই।”
তবে শুধু রাম মালিকই নন। মোহনবাগানকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন এরিক মুরান্ডা এবং সাবিথও। ওডাফা ওকোলির শূন্যস্থান পূর্ণ করা অসম্ভব। তবে সময়ের সঙ্গে মুরান্ডার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস এবং গোল করার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন সবুজ-মেরুন জনতা। হোসে ব্যারেটোর মতোই মাথা ঠান্ডা ফুটবলার। গতি এবং বল কন্ট্রোলও দারুণ। এ দিন ম্যাচের সেরাও তিনিই। শুধু অতিরিক্ত সময় বল ধরে রাখার মোহ থেকে এক বার বেরিয়ে আসতে পারলে, ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার দক্ষতা আছে। দ্বিতীয়ার্ধে দু’টো সহজ সুযোগ নষ্ট করলেও, ম্যাচের শুরুতে ফ্রি কিক থেকে করা মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোলটা মুরান্ডা অনায়াসে সাজিয়ে রাখতে পারেন নিজের ড্রইং রুমে। ম্যাচের পরে বাগানের কেনিয়ান স্ট্রাইকার বলছিলেন, “এ রকম গোল করলে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। তবে আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।”
ম্যাচের সেরা মুরান্ডা।
নতুন বছরে মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বোধহয় সাবিথ! মরসুম শুরুর আগে বাবাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন— গোল করব, সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। বাগানের খেলা ছ’টি ম্যাচের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটা ম্যাচেই গোল আছে তাঁর। আই লিগ হোক কিংবা কলকাতা লিগ, সাবিথের নাম স্কোরলাইনে লিখতে হবেই। এ দিনের বারাসত স্টেডিয়ামও বাদ গেল না। সাঁইত্রিশ মিনিটে মুরান্ডার পাস থেকে লব করে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে সুন্দর ফটোফিনিশ সাবিথের। করিম বলছিলেন, “সাবিথ, রাম মালিকদের নিয়ে একটা ২০ জনের দল তৈরি করতে চাই। এই দলটাই সারা বছর খেলবে।”
করিমের ‘মিনি কাতসুমি’।
রাম মালিকদের আবির্ভাবে বাগানে স্বস্তির আবহাওয়া তৈরি হলেও, চিন্তার কালো মেঘ পুরোপুরি কাটছে না। রক্ষণের সংগঠন নিয়ে কাঁটা থেকেই যাচ্ছে। করিমের সৌভাগ্য, আর্মি একাদশ দলে গোল করার কোনও লোক নেই। না হলে দু’একটা গোল তাঁকেও হজম করতে হত। দ্বিতীয়ার্ধে একটা পেনাল্টি মিস করেন আর্মির দিলীপ এম। করিম নিজেও স্বীকার করলেন, “সব ফুটবলারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিলাম। কেউ ফ্লপ করল, কেউ পাস।”
মরোক্কান কোচের নোটবুকে ফ্লপের তালিকায় কোন কোন ফুটবলার আছেন, সেটা ফাঁস হয়নি। তবে জৌগ্রামের রাম মালিক করিমের ‘গুডবুকে’ ইতিমধ্যেই জায়গা পাকা করে নিলেন!

মোহনবাগান: শিল্টন, আইবর, ইচে, কিংশুক, ওয়াহিদ, জাকির, ডেনসন, রাম, লামা (অর্ঘ্য), সাবিথ (শঙ্কর), মুরান্ডা (কাতসুমি)।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.