|
|
|
|
মোদীর শৌচালয়-মন্তব্যে বিব্রত বিজেপি
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এল শৌচালয়ও!
দল বা সঙ্ঘ পরিবার তো বটেই, নিজের ভাবমূর্তির সঙ্গেও খাপ খায় না এমন একটা মন্তব্য করে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেই মন্তব্যটা শৌচালয় নিয়ে! গত কাল দিল্লির এক সভায় মোদী উপস্থিত সবাইকে এক রকম অবাক করে দিয়ে বলেন, “আমার পরিচয় তো হিন্দুত্ববাদী নেতার। আমার ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ না খেলেও আমি বলার সাহস রাখি প্রথমে শৌচালয়, পরে দেবালয়।” একদা হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ থেকে তিনি যে এখন উন্নয়নের রথে সওয়ার হয়েছেন, সেটা এ ভাবেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।
আর তার ফলও মিলতে শুরু করেছে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। দিল্লির সভার বক্তব্য জানার পরেই আসরে নেমেছেন কংগ্রেস নেতারা। অন্য দিকে বেশ বিড়ম্বনায় গেরুয়া-শিবির। কারণ প্রায় বছরখানেক আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ঠিক একই ধরনের একটি মন্তব্য করে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের রোষের মুখে পড়েছিলেন। সে দিন জয়রামও মোদীর সুরেই বলেছিলেন, দেবালয়ের থেকে অনেক বেশি পবিত্র কাজ শৌচালয় নির্মাণ। গ্রামে-গঞ্জে মায় শহরেরও স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য এই মন্তব্য করেছিলেন জয়রাম। কিন্তু সে দিন রে-রে করে উঠেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল। তাদের বক্তব্য ছিল, মন্দিরের সঙ্গে শৌচালয়ের তুলনা হিন্দু আবেগকে আঘাত করা। জয়রামের বাড়ির সামনে প্রস্রাবের বোতল নিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। সঙ্ঘের রোষ দেখে ছেড়ে কথা বলেননি বিজেপি নেতারাও।
মোদীর গত কালের মন্তব্যের পর আজ সে সব কথা স্বাভাবিক ভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছে জয়রামের। তিনি বলেন, “তখন তো আমার বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে উঠেছিলেন বিজেপি নেতারা। আমি না কি হিন্দু আবেগকে আঘাত করেছি! এখন মোদীর বোধোদয়ের পর বিজেপি নেতারা কী বলবেন। মোদীর এই চেতনা দশ বছর আগে জাগল না কেন? আমি না হয় আমার বিশ্বাস থেকে ওই মন্তব্য করেছিলাম। আর মোদী তো করছেন বাধ্য হয়ে!”
কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য, তাঁর উপরে চেপে বসা ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা ঝেড়ে ফেলতেই মোদী এ ধরনের মন্তব্য করছেন। পাল্টা আক্রমণে গিয়ে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহের মন্তব্য, “মোদী বারবার নিজের অবস্থান বদলান। কত ভাবে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করবেন যে, তিনি বদলে গিয়েছেন?”
দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী যা মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না বিজেপি নেতারা। উল্টে চরম বিড়ম্বনার মধ্যেও ঐক্য রক্ষায় সঙ্ঘের দাওয়াইয়ের কথা মনে রাখতে হচ্ছে তাঁদের। এই অবস্থায় বছরখানেক আগে জয়রামের মন্তব্য নিয়ে কী হয়েছিল, তা ‘ভুলে’ই গিয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর! আজ দলের সদর দফতরে প্রশ্নের মুখে তিনি মনেই করতে পারলেন না জয়রাম রমেশ এ ধরনের কোনও মন্তব্য করেছিলেন কি না! আর তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের দলের তরফে সেই সময় জয়রামের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়েছিল কি না!
তবে এখন সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে নিয়ে নিয়ে। স্বভাবতই পরিষদের নেতাদের কাছে আজ ভিড় জমিয়েছে সংবাদমাধ্যম। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রকাশ শর্মার মন্তব্য, “দেখুন, আমার সামনে জয়রামের পুরনো মন্তব্য পড়ে রয়েছে। সেখানে স্পষ্ট, তিনি মন্দিরের পবিত্রতার সঙ্গে শৌচালয়ের তুলনা করেছিলেন। সেটি অপমান। কিন্তু মোদী তো তা বলেননি। তিনি বলেছেন, শৌচালয়ও তৈরি করা প্রয়োজন। আমরা যখন নব্বইয়ের দশকে অযোধ্যায় যেতাম, তখন কোনও আশ্রমে শৌচালয় ছিল না। এখন সর্বত্র তৈরি হয়েছে।”
সঙ্ঘও কি চুপ মোদীকে নিয়ে? সূত্রের খবর, একেবারেই নয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মোদী-বিরোধী নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া নেমে পড়েছেন আসরে। আগের মতো মোদীর বিরুদ্ধে সরব না হলেও যতটা সম্ভব ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর এই মন্তব্য অনুচিত, অনাবশ্যক। জয়রাম রমেশের মন্তব্যের সময় যদি বিজেপি প্রতিবাদ করে, তা হলে এখনও তাদের উচিত এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
|
পুরনো খবর : মোদীর উন্নয়ন -ধর্মে আগে শৌচালয়, দেবালয় পরে |
|
|
|
|
|