|
|
|
|
মোদীর উন্নয়ন-ধর্মে আগে শৌচালয়, দেবালয় পরে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বিদেশ থেকে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কাল ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে। আজ দিল্লি এসে তার জবাব দিলেন মোদী। তুলে ধরার চেষ্টা করলেন নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ও উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তি। তাঁর কথায়, “লোকে আমাকে হিন্দুত্ববাদী বলে। কিন্তু আমি তো বলি আগে শৌচালয় (বানানো জরুরি), তার পরে দেবালয়।”
এ দিন দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে টানা আট ঘণ্টা সময় কাটান মোদী। সেই মঞ্চকেই মোদী কাজে লাগালেন মনমোহনকে এক হাত নেওয়ার কাজে। দিল্লি ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিশেষ বিমানে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, “আমি আন্তরিক ভাবে আশা করি, নরেন্দ্র মোদীর আগ্রাসন ঠেকাতে অল্প দিনের মধ্যেই দেশের সব ক’টি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একত্রিত হবে।” আর আজই মোদীর মঞ্চে এনডিএ-র সম্ভাব্য নতুন শরিক চন্দ্রবাবু নায়ডুকে হাজির করানোটা কার্যত মনমোহনের ওই মন্তব্যেরই পরোক্ষ জবাব। তবে এর সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে মনমোহনের সমালোচনার সরাসরি জবাবও দিয়েছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। বরাবরই কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতাকে ‘মেকি’ আখ্যা দিয়ে এসেছে বিজেপি। সেই ঘরানাতেই নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মোদী আজ বলেন, “আমার পরিচয় হিন্দুত্ববাদী নেতার। কিন্তু কিছু লোক ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে মানুষকে বোকা বানান। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা আশির দশকের হিন্দি ছবির ডায়লগ। এখন একুশ শতকে মানুষ উন্নয়ন চায়। প্রধানমন্ত্রী যা বলার বলে যান। কিন্তু দেশ এখন অনেক আগে এগিয়ে গিয়েছে। যাঁরা জনতাকে বোকা বানান, তাঁদের মানুষ চিনে নিয়েছেন।” এই সূত্রেই নিজের উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে আজ শৌচালয়-দেবালয়ের প্রসঙ্গ টানেন মোদী। এটা ঘটনা, গুজরাতে উন্নয়নের স্বার্থে মন্দির ভাঙার একাধিক দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে মোদীর জমানাতেই। |
মোদীর পাশে চন্দ্রবাবু। বার্তা এনডিএ প্রসারের। বুধবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই। |
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে নিজের ভাবনারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মোদী। তাঁর মতে, ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে তিনি বোঝেন, সবার আগে দেশ। সব ধর্মের জন্য ন্যায়বিচার। কারও তোষণ নয়। গরিব যে ধর্মেরই হোন, তিনি গরিব। তিনি মন্দির-মসজিদ না গির্জায় যান, সেটা প্রশ্ন নয়। মোদীর মতে, এটাই ধর্ম। সরকারের ধর্মগ্রন্থও একটাই, সংবিধান। একটাই শক্তি, ভারত শক্তি। সকলের উন্নয়ন, সকলের জন্য শিক্ষা আর সকলের পেটে খাবার, মোদীর মতে এটাই ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের মন্ত্র। এই মন্ত্র মেনেই চলেন তিনি।
মোদী এর আগেও দিল্লির শ্রীরাম কলেজে রাহুল গাঁধীর গড়, যুবক ভোটে থাবা বসাতে এসেছিলেন। তাঁর আজকের কর্মসূচি ছিল তারই দ্বিতীয় পর্ব। গোটা অনুষ্ঠানের নেপথ্যে মোদী থাকলেও এ দিনের এই মঞ্চটিকে অরাজনৈতিক বানানোরই চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিরোধী দলের নেতাদেরও। সে তালিকায় নাম ছিল সিপিএমের নীলোৎপল বসু থেকে তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী, কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিরও। এঁদের মধ্যে সিঙ্ঘভি মঞ্চে হাজির ছিলেন। দীনেশ সভাস্থলে এলেও কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরে যান। কিন্তু এনডিএ-র প্রসারের বার্তা দিয়ে চন্দ্রবাবু নায়ডু আজ সর্ব ক্ষণ পাশে ছিলেন মোদীর। একান্তে কথাও বলেন দু’জনে। মোদীর মতোই প্রধানমন্ত্রীকে এ দিন তুলোধোনা করেন চন্দ্রবাবু।
যে ভাবে রাহুল গাঁধীর প্রকাশ্য মন্তব্যের পর আজ মনমোহনের মন্ত্রিসভা অর্ডিন্যান্স ও বিল ফিরিয়ে নিল, সেই প্রসঙ্গ তুলেও প্রধানমন্ত্রীর অস্বস্তি বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেননি মোদী। তিনি বলেন, “দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বাঁচানোর জন্য যে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছিলেন, তিনি জনতার নাড়ীর স্পন্দনই জানেন না। যত ক্ষণ না কংগ্রেসের সহসভাপতি তাঁর পাগড়ি খুলে দিচ্ছেন, তত ক্ষণ তিনি সেটি টের পান না।” গত রবিবারই দিল্লিতে এক বিরাট জনসভা করেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী। সেখানেও তিনি মনমোহন-রাহুলকে আক্রমণ করে নিজেকে বিকল্প নেতা হিসেবে তুলে ধরেন। আজও করলেন সেটাই।
|
পুরনো খবর: ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকেই বার্তা মনমোহনের |
|
|
|
|
|