|
|
|
|
ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকেই বার্তা মনমোহনের
জয়ন্ত ঘোষাল
(প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান থেকে)
|
রাজনীতি নিয়ে সাধারণত বেশি কথা বলেন না মনমোহন সিংহ। এমনকী ভোটের প্রচারে নেমেও তাঁর মুখে রাজনীতির থেকে বেশি উঠে আসে উন্নয়ন আর অর্থনীতির কথা। কিন্তু সেই তিনিই, কিছুটা ব্যতিক্রমী হয়ে গেলেন এ দিন। আমেরিকা সফর সেরে দিল্লি ফেরার পথে বিশেষ বিমানে নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করলেন মনমোহন। একই সঙ্গে মোদীর বিরুদ্ধে দেশের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হওয়ার ডাকও দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমি আন্তরিক ভাবে আশা করি, নরেন্দ্র মোদীর আগ্রাসন ঠেকাতে অল্প দিনের মধ্যেই দেশের সব ক’টি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একত্রিত হবে। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এটা হবেই। আপনারা কিছু দিন অপেক্ষা করুন। মানুষ বুঝতে পারবেন যে, কোন শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি।”
কোন অঙ্কে হঠাৎ এতটা আগ্রাসী হয়ে উঠলেন মনমোহন?
আসলে গত কয়েক দিনে জাতীয় রাজনীতিতে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তার মধ্যে একটা বড় কারণ হল, পাকিস্তান প্রশ্নে তীব্র আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদী। কাশ্মীর-সহ সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় না বসার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিল বিজেপি। কিন্তু তার পরেও নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মনমোহন-নওয়াজ শীর্ষ বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যেতেই সুর চড়িয়েছে বিজেপি। এবং এই প্রশ্নে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে কংগ্রেসকে চাপে ফেলতে মরিয়া তারা। মোদী তথা বিজেপির এই অবস্থানের মোকাবিলা করতেই পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়েছেন মনমোহন।
দ্বিতীয় আর একটি কারণ হল, মার্কিন মুলুকে এসে মনমোহন টের পেয়েছেন মোদীকে ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কতটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে। লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইম্স কাগজের আজকের সম্পাদকীয়তে মূল আলোচ্যই হলেন নরেন্দ্র মোদী। যার মূল বক্তব্য হল, ভারতের রাজনীতি একটা অচলাবস্থার শিকার। এই অবস্থায় দাঙ্গা সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ থাকলেও স্থায়ী এবং শক্তিশালী সরকার গড়ার প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীর সম্ভাবনাই বেশি। আরও একাধিক কাগজে গত কয়েক দিন ধরে মোদীকে নিয়ে আলোচনা চলছে। চার দিকে এই মোদী-মোদী ধ্বনির মোকাবিলা করতে আক্রমণকেই সেরা অস্ত্র করে তুলেছেন মনমোহন।
এ সবের পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একজোট করার উপরেও জোর দিতে চেয়েছেন তিনি। গত মাসেই রাশিয়া সফর সেরে দেশে ফেরার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফের জোট গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে কোনও স্থায়ী শত্রু হয় না’। তার পরে আজ সবক’টি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার কথা বলে মমতার পাশাপাশি নবীন পট্টনায়ক, নীতীশ কুমারের মতো নেতাদের উদ্দেশেও বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রসঙ্গেই মনমোহনকে এ দিন প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর যা ভূমিকা, তাতে কি তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠন সম্ভব? প্রধানমন্ত্রীর জবাব, সেই মূল্যায়নের সময় এখনও আসেনি। তিনি বলেন, “কাদের সরকার হবে, তা মানুষই ঠিক করবেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই সরকার কিছু ভুল করছে ঠিকই, কিন্তু অনেক ভাল কাজও করেছে। এবং ভোট দিতে যাওয়ার সময় মানুষ ভাল কাজের সঠিক মূল্যায়ন করবেন বলে আশা করব। আর সেই হিসেবে মানুষের ভোট পাব বলেও আমি আশাবাদী।” |
|
|
|
|
|